রহমত নিউজ ডেস্ক 12 December, 2022 03:49 PM
ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুগপৎ আন্দোলন, সরকার ও শাসন ব্যবস্থার বদলে ১৪ দফা ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। ১৪ দফা ঘোষণার মধ্যে রয়েছে- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, সংবিধানের ৭০তম অনুচ্ছেদের সংশোধন করে সরকার গঠনে আস্থা-ভোট ও বাজেট পাস ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখাসহ বেশকিছু দাবি। জোটটির ১৪ দফার সঙ্গে বিএনপির ঘোষিত ১০ দফার অনেক মিল দেখা গেছে।
আজ (১২ ডিসেম্বর) সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচার একটি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফার ঘোষণা দেন মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর প্রমুখ।
গণতন্ত্র মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুগপৎ আন্দোলন, সরকার ও শাসন ব্যবস্থা বদলের ১৪ দফা’ শিরোনামে তাদের দাবি পেশ করে। দাবিগুলো হলো- বর্তমান ‘অনির্বাচিত ও অবৈধ’ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র হরণকারী লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ। অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমান অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন, দক্ষ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে নির্বাচনে টাকার খেলা ও মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ, অগণতান্ত্রিক আরপিও সংশোধন, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পরিবর্তন সাধন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বাতিল করা।
ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন করা হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাস ব্যতীত সব বিলে স্বাধীন মতামত প্রদান ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ও দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নিপীড়নের অংশ হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাজা বাতিল, সব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সব রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিংয়ে কোনো বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। বিরোধী দলসমূহের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা বেআইনি হিসেবে গণ্য করা। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীসমূহকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানির উদ্দেশে ব্যবহার করা যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব নিবর্তনমূলক কালাকানুন বাতিল করতে হবে। গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুনের যথাযথ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশি ব্যবস্থার নামে শ্রমিক আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বিদ্যমান অভাবের পরিস্থিতিতে গ্রাম শহরের গরিব এবং স্বল্প আয়ের পরিবারসমূহের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা ও নগদ অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানিসহ সেবামূলক খাত সমূহে স্বেচ্ছাচারী পন্থায় মূল্যবৃদ্ধি গণ-বিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবে থাকা রেন্টাল–কুইক রেন্টাল প্রকল্প ও এই খাতে দেওয়া দায়মুক্তি আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত, সুলভে গণ-পরিবহনের ব্যবস্থা ও বাসা ভাড়ার যৌক্তিক সীমা নির্ধারণ করা হবে।
গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, শেয়ার মার্কেট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত রোমহর্ষক নজিরবিহীন দুর্নীতি ও এর দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করতে শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও পাচারকরা অর্থ ফেরত আনতে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিকদের উদ্ধার করতে হবে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা ও ‘বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়’ এই নীতির ভিত্তিতে সমগ্র স্বাস্থ্যখাত ঢেলে সাজাতে হবে। ‘শিক্ষা অধিকার, বাণিজ্যিক পণ্য নয়’ এই নীতিতে সবার জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধি বিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।