| |
               

মূল পাতা সারাদেশ মহানগর রসিক নির্বাচন : ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা জাতীয় পার্টি মোস্তফার


রসিক নির্বাচন : ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা জাতীয় পার্টি মোস্তফার


রহমত নিউজ ডেস্ক     09 December, 2022     06:39 PM    


রংপুর সিটি করপোরেশন-রসিককে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত গ্রিন সিটি হিসেবে গড়তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। প্রস্তাবিত ৩১ দফার ইশতেহারে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করা, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসনসহ ২৫০ বছরের পুরাতন এই শহরকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

আজ (৯ ডিসেম্বর) শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রংপুর মহানগরীর কলেজ রোডে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এসএম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মহানগরের সহসভাপতি লোকমান হোসেন, জাহেদুল ইসলাম ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান আনিছ প্রমুখ। ইশতেহার ঘোষণার পূর্বে সকালে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে দলের লাঙ্গল প্রতীক গ্রহণ করেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে সেখান থেকে তিনি রংপুর কেরামতিয়া জামে মসজিদে গিয়ে শুকরানা নামাজ আদায় করেন। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পল্লীনিবাসে শায়িত জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের করব জিয়ারত করেন।

মোস্তফা বলেন, যুগে যুগে নগর মহানগরকে সভ্যতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আর এই নগর মহানগর প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ামক শক্তির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তন হয়ে আসছে। পরিবর্তিত এই রংপুর সিটিতে আপনাদের ভোটে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হলে আমি সিটিকে একটি আধুনিক, পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, নিরাপদ ও পরিকল্পিত মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ইতোমধ্যে ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছি। ২২০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি প্রস্তুত করার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসলে যথাযথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ। এর মাধ্যমে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর হবে। যার সুফল ভোগ করবেন নগরবাসী। নাগরিক সেবা প্রদান সহজীকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে আধুনিক নগর ভবন তৈরি করা হবে। স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কোরিয়ান অ্যান্ড প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মূল্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা পর্যায়ক্রমে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, রংপুর সিটি চিকলী পার্ককে একটি অত্যাধুনিক মানের পার্ক নির্মাণ কল্পে বিগত পাঁচ বছরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, তিনটি পুকুর ভরাট, প্রবেশ ফটক নির্মাণসহ চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। অত্যাধুনিক বিনোদন পার্ক নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিকমানের রাইড স্থাপনের জন্য প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে অর্থছাড় সাপেক্ষে চিকলী পার্ক প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। আধুনিক সিটি করপোরেশন বিনির্মাণে প্রস্তুতকৃত মাস্টার প্ল্যান বর্তমানে গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। পুনরায় মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করব। আমি বিগত মেয়াদে নগরীর বর্জ্য অপসারণ এবং বর্জ্য রাখার জন্য মাহিগঞ্জ (কলাবাড়ী) মৌজায় দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখলকৃত মোট ১১ দশমিক ৭১ একর জায়গা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ করেছি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগে অনুমোদন হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগে সেটি অনুমোদন হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। যানজট নিরসনে পথচারী এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে নগরীর প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ব্যস্ত রাস্তায় জেব্রা ক্রসিংসহ ডিজিটাল পুশ সিগন্যাল স্থাপন করা হবে। নগরীর ব্যস্ততম দুটি পয়েন্টে বর্তমানে দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছি। পর্যায়ক্রমে যানজট নিরসনে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আরও ফ্লাইওভার/ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, নাগরিক সেবা সহজীকরণ এবং নাগরিকদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ৩৩টি ওয়ার্ডে নিজস্ব ওয়ার্ড কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এতে নাগরিকরা খুব সহজেই এসব আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বর্তমানে চারটি মাতৃসদন কেন্দ্র চালু রয়েছে। বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রজেক্ট (ইউপিএইচসিএসডিপি) এর মাধ্যমে নগর স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স এবং অঞ্চলভিত্তিক নগর মাতৃসদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কোভিড-১৯ টিকা ও নগরীর প্রতিটি শিশুর (ইপিআই) টিকা প্রদান নিশ্চিত করা হবে। পরিছন্নতা কর্মীদের (সুইপার) আবাসন সমস্যা নিরসনে আধুনিক সুইপার কলোনি নির্মাণ করা হবে। আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ২টি জবাইখানা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ করা হবে। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে ১০০টিরও অধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আগামীতে ৩৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান/মোড়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। নগরবাসীর সেবা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নগরবাসীর জন্য ‌‘রংপুর অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করা হবে। এর সুফল নগরবাসী পাবেন। নগরের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, হকারদের জন্য হকার পুনবার্সন এবং কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরশাদ হকার্স মার্কেটকে আধুনিকায়ন করা হবে। বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নবাবগঞ্জ মার্কেট আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিটি করপোরেশন পরিচালিত সকল বাজার আধুনিকায়নসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ‌‌‘জনতার মুখোমুখি মেয়র, শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান করা হবে। মশক নিধন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আলোকিত রংপুর গড়ার লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে সড়কবাতি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। সিটিকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য প্রশস্ত মোড়ে ভাস্কর্য/পানির ফোয়ারা নির্মাণ করা হবে। সিটির হাইওয়ের প্রবেশ মুখগুলোতে দৃষ্টিনন্দন অভ্যর্থনা গেট নির্মাণ করা হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সিটি করপোরেশন থেকে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ সম্মানি ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে।

প্রসঙ্গত, এবার তৃতীয়বারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৭ ডিসেম্বর ২২৯টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: রংপুর