| |
               

মূল পাতা জাতীয় রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকা ঠিক হবে না : প্রধানমন্ত্রী


রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকা ঠিক হবে না : প্রধানমন্ত্রী


রহমত নিউজ ডেস্ক     14 November, 2022     04:20 PM    


রিজার্ভ নিয়ে সমালোচকদের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভের টাকা দিয়ে অলস বসে থাকবেন না বরং তা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করবেন। রিজার্ভের টাকা নিয়ে অলস বসে থাকা ঠিক হবে না। আমাদের জনগণের ভোগান্তি কমাতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের তাদের এলাকাকে খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন, যাতে প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যায়। সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নবনির্বাচিত জন প্রতিনিধিদেরকে তাদের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেন তিনি। বিএনপির অনেক নেতা মানিলন্ডারিংয়ের কথা বলেন, তারেক জিয়ার শাস্তি হয়েছে মানিলন্ডারিং কেসে। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা থেকে এফবিআই এর লোক এসে বাংলাদেশের সাক্ষী দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছর সাজা, বিশ কোটি টাকা জরিমানা আর গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি তার জন্যও সে সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতাই হচ্ছে খুন, মানিলন্ডারিং ও অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারি মামলার আসামি। আর খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজা প্রাপ্ত। বিএনপির গঠনতন্ত্রে সাজাপ্রাপ্তদের নেতা হওয়ার বিধান না থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলটির মূল পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে। অপপ্রচার চালানোই বিএনপির চরিত্র।

আজ (১৪ নভেম্বর) সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র-বিআইসিসিতে নবনির্বাচিত ৫৯ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের শপথবাক্য পাঠ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অথিথির ভাষণে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের মোট ৬২৩ জন সদস্যও শপথ নেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জেলা পরিষদের নির্বাচিত এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিক মুহাম্মদ ইবরাহিম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনকল্যাণমূলক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং তার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যেন নিশ্চিত হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এখানে আপনাদের একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। এলাকায় কিধরনের অসুবিধা আছে,মানুষের জন্য কি কল্যাণকর কাজ করা যেতে পারে, উন্নয়নের জন্য কি কাজ করতে পারেন-সেটা আপনাদের ভাবতে হবে। আমাদের এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র রয়েছে, অনেক দল রয়েছে। কেউ দল থেকে বা কেউ আলাদা ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে যখন আপনি ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তখন আপনার দায়িত্ব সকলের জন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কে তাকে ভোট দিল আর কোন এলাকার ভোটার সেটা দেখেননি।আমি সার্বিকভাবে উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রতিটি মানুষ যাতে উন্নয়নের ছোঁয়া পায় সেই ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি। আমরা ৬১টি জেলা পরিষদে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের আওতায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা এবং এডিপি’র আওতায় ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিচার প্রাপ্তি সহজ করতে ২৭টি জেলার ১৩৫টি উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) বাস্তবায়ন করেছে। মানুষ যাতে ন্যয় বিচার পায় সেজন্য আলাদা ফান্ড দিয়ে লিগ্যাল এইড কমিটি করে দিয়েছি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন যতভাবে করা যায় তা করেছি।হঠাৎ একটা কথা এসেছে রিজার্ভের টাকা নাকি নাই, চুরি হয়ে গেছে। এই চুরি কিভাবে সম্ভব উল্লেখ করে বিএনপি আমল এবং বর্তমানের রিজার্ভের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা খরচ হয়েছে মানুষের কল্যাণে, তাদের প্রয়োজন মেটাতে। একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার রিজার্ভ পেয়েছিল প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের মত, যেটাকে বাড়িয়ে তার সরকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে। আর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ যেটা ৫ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল সেটাকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে।

তিনি বলেন, রিজার্ভের টাকা সবসময় খরচ হতে থাকে, এটা রোলিং করে। কিন্তু করোনার সময় আমদানী, রপ্তানী, যোগাযোগ, যাতায়াত সবকিছু একরকম বন্ধ ছিল বলেই রিজার্ভ এতটা জমা পড়েছিল। কিন্তু করোনা শেষ হয়ে গেলে আমদানী-রপ্তানী এমনকি চাষবাষের জন্য মেশিনারিজ ক্রয়ে টাকা ব্যয় করতে হয়। করোনার ভ্যাকসিন ক্রয় এবং বিনামূল্যে টেস্ট করাসহ আনুসাঙ্গিক খাতেও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এভাবেই এ টাকা ব্যবহার হয়েছে মানুষের কল্যাণে। করোনা যেতে পারেনি, শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। প্রতিটি পণ্যের দাম সারাবিশ্বে বেড়ে গেছে। চাল, গম, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এর পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত দামে ক্রয় করতে হলেও আমরাতো দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে পারিনা, যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে নিয়ে আসছি। মানুষকে দিচ্ছি।  টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করছি। ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করছি। যারা একেবারে অপারগ তাদেরকে বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। বিনামূল্যে ঘর তৈরী করে দিচ্ছি। সাথে সাথে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করছি। সেই সাথে ৮ বিলিয়ন ডলার আমরা আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছি। আধুনিক বিমান ক্রয় করেছি। এটা আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়েই করেছি, অন্যের কাছ থেকে টাকা ধার নেইনি। কারণ সেখানে ধার নিলেও সেটাকা সুদসহ শোধ দিতে হত। সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিমান নিয়েছে এবং ২ শতাংশ সুদে সেই টাকা আবার ফেরত দিচ্ছে। ফলে দেশের ঠাকা দেশের থাকছে। রপ্তানী ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়ায় টাকা খরচ হচ্ছে যাতে আমাদের লোকই লাভবান হচ্ছে। কাজেই টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবেনা। আমার দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন তাঁর কিছু না থাকলেও যে ‘মাটি ও মানুষ’ রয়েছে তা দিয়েই তিনি দেশ গড়বেন। এই বিষয়টিও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাথায় থাকতে হবে।আমি আশা করি আমাদের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভেতরে ওটাই থাকতে হবে যে মাটি মানুষ দিয়েই আমরা উন্নতি করতে পারি। কাজেই সেই আদর্শ নিয়েই আপনারা চলবেন। সরকারের সকল পদক্ষেপ মানুষের কল্যাণে বলেই আজ এত উন্নয়ন করতে পেরেছে, আপনারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছেন ভোগ দখলের জন্য নয়, জনগণের সেবা দেয়ার জন্য। আপনারা জনগণকে সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করতে পারেন অথবা জনগণের অর্থ-সম্পদ লুট করে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে পারেন, এটা হলো বাস্তবতা। আমি চাই যেহেতু জনগণ আপনাদের ভোট দিয়েছে তাই জনগণকে সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করে দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করুন। সরকার এই নিয়ে ৪র্থ বার ক্ষমতায়। আমরা মানুষের কল্যাণেই কাজ করে কাজ করে যাচ্ছি। আর এদেশের মানুষকে আমি চাই একটা উন্নত জীবন দিতে। একটি লোকও দরিদ্র, গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবেনা, কেউ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবেনা, প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিকেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।