| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন শিক্ষিকার উপর্যুপরি থাপ্পড়ে কান ফাটলো পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর


শিক্ষিকার উপর্যুপরি থাপ্পড়ে কান ফাটলো পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর


রহমত নিউজ     08 November, 2022     11:07 PM    


যশোরের চৌগাছার বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নারগিস পারভীনের উপর্যুপরি থাপ্পড়ে কানের পর্দা ফেটে গেছে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির শিক্ষার্থী পান্না খাতুনের। সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হায়দার আলী বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। রবিবার (৬ নভেম্বর) বিদ্যালয় চলাকালীন এই ঘটনা ঘটলেও আজ ওই শিক্ষার্থীকে তার মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করতে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে গেলে বিষয়টি সামনে আসে। এর আগে অবশ্য সোমবার রাতে ওই ছাত্রীর মা মোবাইল ফোনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে এই বিষয়ে বিচার চেয়ে অভিযোগ করেন।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ওই শিক্ষার্থীর মা যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হন। এসময় পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক আসলাম হোসেন ও নারগিস পারভীন প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীদের কারণে-অকারণে মারপিট করেন এবং প্রধান শিক্ষকসহ ওই দুই সহকারী শিক্ষক অশ্লীল ভাষায় শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সহকারী শিক্ষক আসলাম হোসেন প্রতিনিয়তই তাদের মারপিট করেন এবং পানি মুখে নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে কুলি করেন। এসব বিষয়ে তারা প্রধান শিক্ষককে বলেও প্রতিকার পায়নি। উল্টো তিনিও তাদের অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করেন। শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদন্তকালে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক নারগিস পারভীন একটি থাপ্পড় মেরেছেন বলে লিখিতভাবে দাবি করেছেন বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অভিভাবকদের প্রশ্ন মাত্র একটি থাপ্পড়ে ছাত্রীর কান ফাটলো কিভাবে?

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীর মা এবং লিখিত স্বাক্ষ্যে শিক্ষার্থী পান্না খাতুন বলে, রবিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তিনি যখন অফিসে বসে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলছিলেন তখন সহকারী শিক্ষক নারগিস পারভীন ওই শিক্ষার্থীকে একটি ঝাটা এনে দিতে এবং আরেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের সিড়ি ঘর ঝাড়ু দিতে বলেন। তবে পান্না ঝাড়ু নিয়ে এসে সেখানে রাখলেও অন্য শিক্ষার্থী ঝাড়ু দেয়নি। ঝাড়ু না দেয়ায় পান্নাকে ডেকে শিক্ষক নার্গিস বলেন, ঝাড়ু– দিসনি ঝাড়ু দিয়ে তোর মুখ ভেঙে দেব। তখন পান্না বলে, আপনি কি আমার মুখ বানিয়ে দিয়েছেন? ঝাড়ু দিয়ে ভেঙে দেবেন? তখন শিক্ষক নার্গিস মেয়েটি বাম কানে তিনটি থাপ্পড় মারে। এসময় মেয়েটি কান্নাকাটি করলে নার্গিস পারভীন তাকে আরও কয়েকটি থাপ্পড় মেরে বলেন, লাগেনি। অভিনয় করছে। পরে মেয়েটি বাড়ি যেয়ে না বললেও সোমবার সন্ধার দিকে মেয়ের গায়ে জ্বর এবং কানে জ্বালার কথা শুনে তার মা বিষয়টি জানতে চাইলে মেয়েটি সব খুলে বলে।

অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সেখানকার ডাক্তার আকিব হোসেন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এবং বলেন কানের পাতলা পর্দ ফেটে যেতে পারে। সেখানে পানি জমে রয়েছে। এরপর মেয়েটি ও তার মা এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

ডাক্তার আকিব বলেন, মেয়েটি কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কানের মধ্যে পানি জমে রয়েছে। শুকালে ভালভাবে বোঝা যাবে। তিনি আরও বলেন, পর্দা ফেটে গেলে অপারেশন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

চৌগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট কমপ্লিট করছি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। তিনি নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরকে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। -সূত্র : বাংলানিউজ