মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন বারিধারা জামিয়ার ফিকরি মুখপত্র ‘আল কাসিম’ উদ্ভোধনী সংখ্যা প্রকাশ
রহমত নিউজ 24 October, 2022 03:07 PM
জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ‘আল কাসিম ছাত্র সংসদ’-এর উদ্যোগে ফিকরি মুখপাত্র ত্রি মাসিক ‘আল কাসিম’ পত্রিকার উদ্ভোধনী সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) বাদ এশা জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার আল কাসিম মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামিয়ার প্রধান শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
জামিয়ার মুহাদ্দিস ও আল কাসিম সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের শায়খুল হাদীস মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শায়খুল হাদীস মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী, সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ, মুহাদ্দিস ও দারুল একামা মুফতি ইকবাল হোসাইন কাসেমী, ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা মাসউদ আহমদ, মুহাদ্দিস মুফতি জাবের কাসেমী, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হাফেজ আবু সালেহ, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা মাহমুদ হাসান মাসরুর প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতির অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা পরিবর্তন আনেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেই নিজের হালতে পরিবর্তন না আনে। যার কারণে আজকে পুরো বিশ্বে মুসলমানেরা দ্বীন থেকে মুতানাফফির। পৃথিবীর মেজরিটি মানুষ নামায পড়ে না, রোযা রাখে না, মুসলমান না অমুসলমান দেখলে চেনা যায় না। কাফেরদের কৃষ্টি কালচার আর অনুসরণে নিজে আনন্দিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর সাহাবায়ে কেরামের কৃষ্টি কালচার আর ইত্তেবায়ে সুন্নতের ব্যাপারে অনীহা। আমি আপনাদের কাছে ইস্তেফতা চাই, যারা কাফেরদের অনুসারী, ইসলামি কৃষ্টি কালচারে চলাকে সমালোচনা করে, এইসব মানুষের ইজ্জতের জিন্দেগি কিভাবে হয়? আমার মধ্যে যদি ঈমান-আমলে সালেহা না থাকে তাহলে আল্লাহর নেয়ামত আমি কীভাবে পাবো?
তিনি আরো বলেন, মাদরাসার পরিক্ষার নাম্বার পেয়ে সিরিয়ালে আসলে সম্মানিত হয়। এখন কেউ নাম্বার না পেয়ে, সিরিয়ালে না এসে সম্মান পেতে চাওয়া যেমন অযৌক্তিক, তেমনিভাবে ইসলামি কৃষ্টি কালচার অনুসরণ না করে ইহুদী-খ্রীষ্টান আর কাফেরদের অনুসরণ করে সম্মানের জিন্দেগী পাওয়াও অযৌক্তিক। ইসলাম সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা। যুগে যুগে পবিত্র এ ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু এইসব দ্বীনি মাদরাসাসমূহের মাধ্যমে ইসলাম জিন্দা রয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে। ইসলামের ক্ষতি সাধনকারিরা দুনিয়ায় টিকে থাকতে পারেনি। দ্বীনের মেহনতের জন্য সবসময় আল্লাহর সাহায্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমলী জিন্দেগীর মাধ্যমে উস্তাদ-ছাত্র সবাইকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি স্মৃতিচারণ করে মাওলানা আবু সাবের আব্দুল্লাহ বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অসুস্থতাজনিত কারণে শারীরিকভাবে অনেক দূর্বল ছিলেন। কিন্তু আল্লাহর সাথে মজবুত সম্পর্কের কারণেই ঈমানী শক্তি তাঁকে জাতীয় নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়েছে। এজন্য হযরতের জিন্দেগী থেকে আমাদের আলো গ্রহণ করতে হবে এবং আল-কাসিম পত্রিকায় নিয়মিত হযরতের জীবনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে। যখন লেখা তৈরি করবেন, তখন হুংকার কিংবা মনগড়া কোন লেখা লেখবেন না৷ কোরআন-হাদীসের আলোকে শিক্ষনীয় লেখা তৈরি করবেন। যার দ্বারা উস্তাদ-ছাত্র এবং সাধারণ পাবলিক সবার পাথেয় হবে। এখনতো আমরা শুধু হুংকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছি। হুংকার দেয়ার আগে নিজের যোগ্যতা অর্জন করে নিতে হবে। যোগ্যতা কি জিনিস? বিল্ডিং নাই, ঘর নাই, থাকা-খাওয়ার যায়গা নাই। যখন মাদরাসা ছেড়ে দিতে হলো তখন গাছতলায় উস্তাদ-ছাত্র মাদরাসা শুরু করেছেন। তখনো ছাত্রসংখ্যা ছিলো ৩০০ জন। এটার নাম যোগ্যতা। যে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। আমরা যখন মালিবাগ মাদ্রাসায় পড়ি তখন হুজুর আমাদেরকে নিজে হাতে ধরে এগিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। কীভাবে মোতায়ালা করতে হবে, দরস-তাদরিস কীভাবে করাতে হবে সেগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। হুজুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন উস্তাদদের তাকরীরের উপর ভরসা করে থাকা যাবে না। উস্তাদের তাকরীরের আলোকে নিজে মা’খাজ তৈরি করে মোতায়ালা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পত্রিকার সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির স্বপ্ন ছিল, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত একটি ধর্মীয় পত্রিকা চালু করা। যাতে উলামায়ে কেরাম ও তরুণ মাদরাসা ছাত্ররা যেমন লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্য ও সাংবাদিকতা চর্চার ব্যাপক সুযোগ পাবেন, তেমনি এতে সাধারণ শিক্ষিত জনতার মাঝে ইসলামের সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, কুরআন-হাদীস, দ্বীনি শিক্ষা, উলামায়ে কেরামের মতামত এবং মুসলিম সংস্কৃতির উপস্থাপন আরো বিস্তৃত হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বাতিল মতবাদের যথোপযুক্ত জবাব ও মুখোশ উন্মোচনের মাধ্যমে ইসলামনির্মূলবাদী চক্রের ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচনের কাজ জারি রাখাও সহজ হতো।
তিনি আরোবলেন, আল্লামা কাসেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবন ও অবদানকে স্মৃতিময় করে রাখতে এই সাময়িকীকে হযরত রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নামের সাথে মিল রেখে ‘আল কাসিম’ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা জোর আশাবাদি, এতে হযরতের লাখ লাখ শাগরিদ, অনুসারী, মুতাআল্লিকীন ও ভক্তগণ যেমন প্রশান্তিবোধ করবেন, তেমনি ‘আল কাসিম’ সাময়িকীর মাধ্যমে কাসেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির আমৃত্যু লালিত আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা, কল্যাণমুখী নীতি-দর্শন এবং মিশন-ভিশনকে জাতির সামনে তুলে ধরার কাজ জারি রাখা সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ। পথচলার সূচনায় নানা ভুল-ভ্রান্তি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা স্বাভাবিক। আমরা সম্মানিত লেখক, পাঠক এবং শুভানুধ্যায়িদের কাছ থেকে নিয়মিত মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশি। পর্যায়ক্রমে এই পত্রিকায় প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশ ও সুবিন্যস্ত করতে আমরা সচেষ্ট থাকবো, ইনশাআল্লাহ। যাতে ক্রমান্বয়ে এই অঙ্গনে ‘আল কাসিম’ সামায়িকীকে অল্প সময়ে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়। ‘আল-কাসিম’-এর পথ চলায় সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও দোয়া প্রত্যাশা করেন মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী।