রহমত নিউজ 15 October, 2022 09:48 PM
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, যারা সরকারী দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেশতে আছেন। দেশের মানুষ যেনো দোযখের আগুনে জ্বলছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ টাকার অভাবে বাজার করতে পারছে না, আর একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, মৌলিক অধিকার নেই মানুষের। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণ হচ্ছে। একটি প্রকল্পও সময় মত শেষ হচ্ছে না। এতে প্রমাণ হয়, প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাই সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে, ব্যায়ের পরিমাণ। এতে প্রকল্পগুলো কখনোই লাভজনক প্রকল্প হতে পারবে না। একই সময়ে এক বছরেই শুধু সুইস ব্যাংকে চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নেই, সেখানে শুধু লুটপাটের জন্যই মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা লুটপাট।
আজ (১৫ অক্টোবর) শনিবার বিকালে উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। উত্তরখান থানার আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলালের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহবায়ক শেরিফা কাদের এমপি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপটন, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিন্টু, হাজী নাসির উদ্দিন সরকার, মোঃ হেলাল উদ্দিন, কাজী আবুল খায়ের, এনাম জয়নাল আবেদিন, সদস্য এসএম হাসেম, এমএ সাত্তার,শরীফুল ইসলাম, শাহীন মাহমুদ, আলাল উদ্দিন আলাল, শরিফুল আলম সোহেল, মো আশিকুল আমিন, মোহাম্মদ আলী, আবুল হোসেন, মোঃ শিশির প্রমুখ। সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
জিএম কাদের বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনই প্রমাই করে, কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকার ও সরকারী দলকে খুশী করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে। গেলো ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা নির্বাচন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। নির্বার্চন কমিশন নির্বাচনটি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারো দাবি করছি, নতুন তফসিল ঘোঘণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোন জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেবো না। আমরা মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। শুরু থেকেই আমরা ইভিএম-এ নির্বাচনের বিরোধীতা করছি। কারন, ইভিএম-এ ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কোন প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে, কোন প্রমাণ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আবার, যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, সেই মাঠ প্রশাসন সরকারের অনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের দোষ না থাকলেও, যারা যারা ইভিএম পরিচালনা করেন তারা তো নিরপেক্ষ নয়। তাই কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারে অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দি সহ্য করতে পারে না, প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দিতায় জিততে চায় সরকার। নির্বাচনে প্রতিদন্দিতা করলে হামলা ও হয়রানীমূলক মামলার শিকার হতে হয়।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফ। তার মনোনয়ন পত্র দাখিলে বারবার বাঁধা দেয়া হয়েছে। পরে, তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসী বাহিনী। আসমা আশরাফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। আবার, পিরোজপুরের তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে সহায়তা দিয়েছেন সফিকুল ইসলাম। সরকার সমর্থকরা বিনা প্রতিদন্দিতায় জয়ী হতে চেয়েছিলো। কিন্তু নির্বাচনে জিতে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। এমন একটি মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথিমধ্যে সরকার সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেঁচে থাকলেও আজীবনের জন্য তাকে পঙ্গত্ব বরণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে নাকাল দেশ। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারে না দেশ। তাই চাহিদা মত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছে না সরকার। কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকীর মুখে হচ্ছে রফতানী শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা আয় হুমকীর মুখে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে, সরকার ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না অভিভাবকরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না, বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা করতে পারছে না, অসুধ কিনতে পারছে না। গেলো সেপ্টেম্বরে এফএও একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। এরমধ্যে এশিয়ার ৯টি ও দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ রয়েছে। দুঃখজনকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাথে এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। রিজার্ভ সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের সেচ ব্যবস্থাপনা। আবার সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য শস্য উৎপাদন। একই সাথে বহুগুণ ব্যয় বেড়েছে খাদ্য শস্য আমাদানিতেও। ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশ। এ নিয়ে সরকারের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই।