রহমত নিউজ ডেস্ক 14 October, 2022 02:52 PM
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্য অভিযুক্তদের দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার প্রমাণ না পাওয়ার দাবি করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এই প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আসামিদের অবস্থান অপরাধমূলক নয়। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের সংবিধান কিংবা রাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেনি।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআই ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) পরিদর্শক মো. তৈয়বুর রহমান চূড়ান্ত প্রতিবেদনে লিখেছেন, ভাস্কর্য স্থাপন প্রসঙ্গে বিবাদীদের দেয়া বক্তব্য বিবৃতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা প্রত্যেকেই কোনো একটা ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। ধর্মপ্রাণ এই মুসলিমপ্রধান দেশে তাদের রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের সংবিধান কিংবা রাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষী ভাব প্রকাশ ঘটেনি। তাদের বক্তব্যে সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসমর্থনমূলক অভিমত প্রকাশ পেয়েছে।
‘আর এই অভিমতের বিষয়টি ধর্মপ্রাণ মুসলিম প্রধান দেশের জনগণের সামনে কোরআন হাদিসের আলোকে বিবাদীরা উপস্থাপন করেছে। একটি স্বাধীন দেশে সরকারি কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন: তা যদি হয় জনবিরোধী ও ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক, জাতি ধর্মবিরোধী তবে সেসব কাজের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে সাংবিধানিক অধিকারঠা ‘কাজেই ৯০% মুসলমানের এই দেশে ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়ে বিবাদীদের এহেন কাজ রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের আওতাধীন নয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সারা মুসলিম বিশ্বে মসজিদের শহর হিসেবে পরিচিত, মুসলমানদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বিবাদীরাসহ দেশের বিশিষ্ট আলেম দেশের বিশিষ্ট ইসলামিক জ্ঞান সম্পন্ন আলেমগণ ধর্মের প্রশ্নে বজ্র কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কাজেই তাদের এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে বিবেচ্য নয়।’
তবে এ প্রতিবেদনে আদালতে আপত্তি দিয়েছে বাদীপক্ষ। পরে আদালত মামলা পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দায়িত্ব দিয়েছে। মামলাটি এখন তদন্ত করছে সিআইডির ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) বিভাগ।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৩ ও ২৭ নভেম্বর তিনটি সমাবেশে ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মাওলানা মামুনুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এরপর আদালত তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআইকে।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জমা দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পিবিআই বলেছে, বিবাদি আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা মামুনুল হক এবং মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ প্রমাণে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। এদের মধ্যে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী গত বছরের আগস্টে ইন্তিকাল করেছেন।