মাওলানা রাদ তানবীর 20 September, 2022 08:08 PM
প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় প্রতিটি পুরুষ-নারীর মধ্যেই আছে যৌনবাসনা৷ আছে মানবিক চাহিদার আবদার ও যৌনসুখ প্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা৷ কখনও কখনও তা পৌঁছে যায় ভয়ঙ্কর ও জঘন্য পর্যায়ে৷ তখন সে হয়ে যায় উন্মাদ৷ হারিয়ে ফেলে হিতাহিতের জ্ঞান৷ এরপরও ধৈর্য ধরে৷ কিন্তু ধৈর্যও একপর্যায়ে উপনীত হয় সর্বশেষ সীমাতে৷ পথের বাঁকে বাকেঁ ওঁৎ পেতে থাকা শয়তান লুফে নেয় সেই সুবর্ণ সুযোগ৷ মানুষের মনে, মগজে সে নিখুঁতভাবে গেঁথে দেয় সৃষ্ট উন্মাদনা দূর করার বিভিন্ন অনৈতিক পথ৷ ফলে মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজে সেই পথ লাভের সু়যোগ৷ খুঁজতে থাকে জেগে উঠা যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রশমিত করার কোনো পাত্র বা উপায়৷ আর এই যৌনাকাঙ্ক্ষা ও যৌন চাহিদা পূরণের বৈধ ও নৈতিক কোনো পাত্র না পেয়ে সে লিপ্ত হয় যায় নানান অনৈতিকতায়৷ গ্রহণ করে ফেলে বিভিন্ন অশ্লীল পথ ও উপায়৷ সাময়িক তৃপ্তির জন্য ডুবে যায় অবৈধ পাত্রে৷ সে ভুলে যায় রবকে, ভুলে যায় রবের নির্দেশ-নিষেধকে৷
এ গুরুতর সমস্যার জন্য ইসলামী শরীয়ত দিয়েছে সুন্দর সমাধান৷ নর-নারীর মানবিক চাহিদা ও যৌনবাসনা পূরণের জন্য ইসলাম দিয়েছে বৈধ পথ ও পদ্ধতি৷ নারী-পুরুষের সহাবস্থানের জন্য ইসলামী শরীয়ত করেছে নিকাহ ও বিয়ের ব্যবস্থা৷ নারী ও পুরুষ পরস্পর বৈধ আলিঙ্গনের এই পদ্ধতি গ্রহণ করার দ্বারাই সম্ভব অসংখ্য অন্যায় ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা৷ এর দ্বারাই সহজ হবে দ্বীন ও শরীয়তের অসংখ্য বিধি-নীতি যথাযথ পালন করে রবকে সন্তুষ্ট করা৷ এ জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﺸﺒﺎﺏ! ﻣﻦ ﺍﺳﺘﻄﺎﻉ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺒﺎﺀﺓ ﻓﻠﻴﺘﺰﻭﺝ ﻓﺈﻧﻪ ﺃﻏﺾ ﻟﻠﺒﺼﺮ ﻭﺃﺣﺼﻦ ﻟﻠﻔﺮﺝ ... " ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ.
অনুবাদ : হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চক্ষু এবং লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত রাখে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
তিনি আরও বলেন,
من تزوج فقد أتم نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي.
অর্থ: যে ব্যাক্তি বিবাহ করে ফেললো সে অর্ধদ্বীন পূরণ করে নিল৷ সুতরাং অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে যেন সে আল্লাহকে ভয় করে৷ (মেশকাত শরীফ)
এছাড়া লজ্জাস্থানের হেফাজত করা ও লজ্জাস্থানকে অবৈধ কর্মকাণ্ডে নির্লিপ্ত রাখা মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্টও বটে৷ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা মুমিনুনে মুমিন বান্দাদের বেশকিছু বৈশিষ্ট বর্ণনা করেন৷ চতুর্থ নম্বরেই তিনি বলেন,
والذين هم لفروجهم حفظون.
অর্থঃ "(মুমিন তারা) যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে (অবৈধ কাজ থেকে) রাখে হেফাজত৷"
সুতরাং লজ্জাস্থানকে অবৈধ পাত্র থেকে হেফাজত করা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচিয়ে রাখা প্রতিটি মুসলিম নারী-পুরুষের উপর কর্তব্য৷ এই মহান গুণ লাভের জন্য অবলম্বন করা উচিৎ পরিপূর্ণ সতর্কতা৷ অভিভাবকদের উচিৎ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলা৷ এছাড়া প্রত্যেকের উচিত অশ্লীল বিনোদন ও পত্র-পত্রিকা, দুষ্ট লেখকদের উপন্যাস সহ সর্বপ্রকার নাটক-সিনেমা থেকে দূরে থাকা৷ উচিত অবৈধ ও অশ্লীল পাত্র থেকে দৃষ্টিকে হেফাজত রাখা৷ কারণ এগুলোই মস্তিষ্কের স্বচ্ছতাকে নিশ্চিহ্ন করে তাতে ছড়িয়ে দেয় জীবাণু৷ এর কারণেই আগ্রহ জন্মে অনৈতিকতায় লিপ্ত হওয়ার৷ আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তাওফীক দিন। আমীন।