মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ায় দৃষ্টান্ত হতে পারে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 12 September, 2022 07:16 PM
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে অর্থনৈতিক উদারিকরণ বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়েছে এক মজবুত ভিত্তির ওপর। এক সময় যে দেশকে বলা হতো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, সেই বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অন্যদের জন্য উদাহরণ। শুধু তাই নয়, স্থিতিশীল অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন আকর্ষণ করছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও। এমনকি যেসব দেশ বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা দিয়েছিল, তারাও এখন ঢাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। চলতি বছরের বসন্তকালীন সভায় করোনা মহামারি মোকাবিলা এবং এর প্রভাব থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে সব নীতি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পরিপক্ক। দেশটির উৎপাদন খাতের বিস্তৃত ভিত্তি এবং অবকাঠামো প্রকল্পে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি এশিয়ায় ‘লক্ষ রাখার’ মতো একটি অর্থনীতি হতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি এশিয়ায় দৃষ্টান্ত হতে পারে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহনীর ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করার পর অতিবাহিত হয়েছে অনেক সময়। আর এ সময়ের মধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ, সব কটাক্ষের জবাব দিয়েছে একের পর এক সাফল্যে। গেল ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম উদাহরণ সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতু। যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, এটি চালু হওয়ায় তারাই এখন বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। গত ২৫ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করে ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই সড়ক-রেল সেতুর (পদ্মা সেতু) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও মেট্রোরেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ এবং স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে সংকুচিত হওয়া জরাজীর্ণ রেল সেক্টরের আমূল সংস্কার, রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ঢাকা ও কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের মতো উদ্যোগে প্রশংসা কুড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
এএনআই বলছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সংস্কার বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। যা বাংলাদেশ সরকারের একটি সাফল্য। আগের সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সংশোধন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড উন্নতি করেছে বর্তমান সরকার। ২০০৬ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩ হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট এবং একদিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এছাড়া বাংলাদেশে এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। চীনের পর তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। তাছাড়া বর্তমান সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সহজ ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা তৈরি করেছে।
আমদানি ব্যয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। করোনা মহামারির আগেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ওপরে ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। যখন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃষি থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং জাহাজ নির্মাণ থেকে গার্মেন্টস শিল্প, প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্যময় হচ্ছে বাংলাদেশের শিল্পভিত্তি। পাশাপাশি বাড়ছে রফতানিও। বাংলাদেশের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থনীতিকে সমানভাবে চাঙা রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করা, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ অর্থ প্রণোদনা এবং বিলাসবহুল পণ্যের ওপর কর আরোপের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ দেশের রিজার্ভ গড়ে তুলতে সাহায্য করছে, যাতে সহজেই আমদানি চাহিদা মেটানো যায়। এরইমধ্যে সরকারের রফতানি বাড়ানো এবং আমদানি কমানোর নীতি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। করোনা মহামারির শুরুর দিকে অনেক প্রবাসী তাদের চাকরি হারানোয় অনেকে ধরে নিয়েছিল যে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমবে। তবে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাফল্যের কারণে অনেক বাংলাদেশি বিদেশে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে পেরেছেন এবং আগের মতোই অর্থ পাঠাচ্ছেন দেশে।
১৯৭৩ সালে অবজ্ঞার সুরে মার্কিন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক হলিস বি. শেনারি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৯০০ ডলারে পৌঁছাতেও সময় লাগবে অন্তত ১২৫ বছর। এছাড়াও নরওয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফালান্ড এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন রিচার্ড পারকিনসন তাদের ‘বাংলাদেশ: দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, ‘উন্নয়ন প্রত্যয়টি যদি বাংলাদেশে সফল হয়, তাহলে পৃথিবীর সব জায়গায় তা সফল হবে।’ তবে এসব মন্তব্য-সমালোচনা উপেক্ষা করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আর উন্নয়নের সূচকে আজ বাংলাদেশের যে অগ্রগতি, তার ভিত্তি রচনা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।