রহমত ডেস্ক 30 August, 2022 02:59 PM
বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান ম. শাহা আলম বলেছেন, দেশের জিডিপির ১ শতাংশ চা শিল্পের অবদান। অর্ধেকের বেশি নারী শ্রমিক চা শিল্পে কাজ করেন। এই শিল্পে গত ১০ বছরে দফায় দফায় শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু চায়ের নিলাম মূল্য বাড়েনি। আবারও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলো। শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ চা শিল্পের ওপর চাপ বাড়াবে। আর এই চাপ চলতি বছরে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। চাপ সামাল দিতে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চা শ্রমিকদের নগদ মজুরি ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত মজুরি মেনে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে নগদ ও অনগদ দৈনিক পারিশ্রমিকসহ মোট মজুরি ৫০০ টাকার ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ (৩০ আগস্ট) মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানের পুলিশ প্লাজা কনকর্ড টাওয়ার-২ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। কেদারপুর চা কোম্পানির লিমিটেডের পরিচালক ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চা সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহ আলম বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিবিএর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ১৯৪৮ সাল থেকে চা শিল্পের উদ্যোক্তারা বাগানের সব শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য রেশনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছেন। প্রতি সপ্তাহে একজন শ্রমিককে ন্যূনতম ৮ কেজি করে রেশন (চাল বা আটা) দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় সেটা সপ্তাহে ১৩ কেজি পর্যন্ত হয়। একজন শ্রমিক নামমাত্র মূল্যে প্রতি কেজি ২ টাকা হিসেবে চাল বা আটা ক্রয় করেন। সে হিসেবে প্রতি মাসে একজন শ্রমিকের পরিবার গড়ে ৪২ কেজি পর্যন্ত রেশন পেয়ে থাকেন। বাগানের ৯৪ হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের জন্য চা শ্রমিকরা ব্যবহার করছে, একটি বাগানের প্রায় ৬০ শতাংশ শ্রমিকই এই সুবিধা ভোগ করছেন।
বাসস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চা শিল্পে আনুমানিক ৭০ হাজার পাকা ও সেমিপাকা কোম্পানি প্রদত্ত ঘরে প্রায় ১ লাখের ওপরে শ্রমিক পরিবারসহ বসবাস করেন। এছাড়াও চা বাগানের জমিতে শ্রমিক পরিবারের বর্ধিত সদস্যরা নিজস্ব ব্যয়ে নির্মিত ঘর বাড়িতে বসবাস করে থাকেন। চা শ্রমিক ও তার পুরো পরিবারের সকলেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন। অথচ অন্যান্য শিল্পে শুধুমাত্র শ্রমিক নিজেই এই সুবিধা পান। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, শ্রমিকদের মৃত্যুর পরেও তার পরিবারের জন্য এই সুবিধা বহাল থাকে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চা শিল্পে দুটি বড় আকার আধুনিক গ্রুপ হাসপাতাল এবং ৮৪টি গার্ডেন হাসপাতালে ৭২১ শয্যার ব্যবস্থা, ১৫৫টি ডিসপেনসারিসহ সর্বমোট ৮৯০ জনের অধিক মেডিকেল স্টাফ নিয়োজিত আছেন।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে উৎপাদিত চায়ের বার্ষিক মূল্য প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রতি কেজি চা উৎপাদনে খরচ যেখানে ২০০ টাকার মতো। সেখানে প্রতি কেজি চায়ের নিলাম মূল্য ২০২ টাকা মাত্র। বিগত দশ বছরে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে সর্বাধিক ৭৩.৯১ শতাংশ এবং গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত চা শিল্পের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে পড়েছে।