মুফতি এনায়েতুল্লাহ 19 August, 2022 12:17 PM
প্রটোকল বলে একটা শব্দ আছে। প্রটোকলের নির্ধারিত কোনো সংজ্ঞা নেই। দাপ্তরিক রীতিনীতি, আদব-কায়দা, আচরণবিধি, সৌজন্যতা ও শিষ্টাচারের মতো বিষয়কে প্রটোকল বলা হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির পদমানক্রম অনুসরণ করত সম্মান ও মর্যাদা দেওয়াকে প্রটোকল বলে।
প্রটোকলের আওতায় এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করে। তদ্রুপ রাষ্ট্রীয় পদে সমাসীনরা পদমর্যাদা অনুযায়ী মূল্যায়িত হন।
রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে শুরু করে মসজিদ-মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় নিজ নিজ প্রটোকল কঠোরভাবে মানা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম প্রটোকল মেনে পালন করা হয়।
যেমন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত, এটা মেনেই আপনাকে এ জাতীয় অনুষ্ঠানে যেতে হবে। এখানে এটাই প্রটোকল। আবার কোনো অতিথিকে স্বাগত জানাতে সমমর্যাদার কাউকে পাঠানো কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি। এর ভিন্নতা কূটনৈতিক অশিষ্টাচার।
প্রটোকল নিয়ে এমন 'ত্যানা প্যাচানোর' কারণ অবশ্য ভিন্ন। এর আগে বলে রাখি, প্রকাশযোগ্য এবং অফিসিয়াল, প্রকাশযোগ্য নয় কিন্তু অফিসিয়াল, অপ্রকাশযোগ্য আন অফিসিয়াল, সৌজন্য সাক্ষাত এবং ফটোসেশনের জন্য সাক্ষাতের আলাদা আলাদা মূল্য রয়েছে।
সাক্ষাতপ্রার্থী ও সাক্ষাতদাতা উভয়কেই সমান পদমর্যাদার হতে হবে, এমন নয়। এটা হয়ও না। কিন্তু সাক্ষাতটি কোনো পর্যায়ের সেটা নির্ণয় করা জরুরি। এক্ষেত্রে আগত ব্যক্তির আসন নির্ধারণ ও সম্বোধনসহ নানা কিছু জড়িত।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।
সম্প্রতি ড. সাইয়্যেদ আলী রেযা মাহদি মুসাভী (পরিচয় স্পষ্ট নয়) নামের এক ইরানি নাগরিক চট্টগ্রামের জিরি, হাটহাজারী, মেখল, বাবুনগর ও পটিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন। তন্মধ্যে জিরি মাদরাসার মুহতামিমের সঙ্গে তার সাক্ষাতপর্বের গ্রুপ ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে ড. মুসাভীর পরিচয়ে বলা হয়েছে- ইরানের ধর্মতত্ত্ববিদ, ড. সাইয়েদ আলী রেযা মাহদী মুসাভী তেহরানের বাসিন্দা। তিনি রাজনীতি বিজ্ঞানে ডক্টরেট করেছেন এবং ৩০টি গ্রন্থের প্রণেতা। মাতৃভাষা ফার্সি ছাড়াও আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় তার দক্ষতা রয়েছে।
তার সফরসঙ্গী ছিলেন ইরান দূতাবাসের পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক মাওলানা শায়খ ওসমান গণি ও আমজাদ হোসেন।
ইরানি নাগরিকের বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আমার মতে সাক্ষাতটি বিশেষ করে জিরি মাদরাসার মুহতামিমের সঙ্গে পাশাপাশি বসার ছবিটা প্রটোকল মেনে হয়নি। সাক্ষাতটি যদি শুধু সৌজন্যমূলক হতো, তাহলে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা, গুলিস্তার শের শোনানোর পর্যায়ে যেত না। সৌজন্য সাক্ষাতের সঙ্গে ছাত্রদের সংশ্লিষ্টতার অর্থ ভিন্ন। সেটা নিয়ে আরও বিস্তর আলাপ হতে পারে।
তবে আগমনের কারণ স্পষ্ট করে, পরিচয় প্রকাশ করে শুধু শিয়া নয়, যেকোনো ধর্মের লোক যেকোনো মাদরাসা পরিদর্শন, মুহতামিমের সঙ্গে সাক্ষাত ও মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম দেখার অধিকার রাখেন। এ বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু সেটা হতে হবে প্রকাশ্যে, আগমনের কারণ উল্লেখ করে প্রটোকল মেনে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক