মূল পাতা আরো সোশ্যাল মিডিয়া নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় দশ মুখ নিয়ে কিছু কথা
সৈয়দ শামছুল হুদা 19 August, 2022 12:56 PM
১। মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ
নামে ও কামে যিনি সত্যিকার অর্থেই যিনি একজন অতুলনীয় শরীফ মানুষ তিনিই শরীফ মুহাম্মদ। নতুন প্রজন্মের কাছে যাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তারপরও কিছু বলা। লিখনীর চেয়ে কথায় যিনি মুক্তু ঝরান তিনিই শরীফ মুহাম্মদ। গল্প বলায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ায়, বন্ধুত্বের সম্পর্ক সুরক্ষায় অতুলনীয় একজন প্রিয় মানুষ শরীফ মুহাম্মদ। সাংবাদিকতা, সম্পাদনায় রাখেন মুনশিয়ানার ছাপ। হাসেন প্রাণখোলা। উনাকে সামনে পেলে শত্রুও তার শত্রুতা ভুলে যাবে। এমন মানুষের সান্নিধ্য সত্যিই গৌরবের।
২। মাওলানা যাইনুল আবেদীন
আলেম লেখকদের কথা সামনে আসলে বর্তমানে শীর্ষে যার নাম থাকবে তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের পরম গৌরবের জায়গা, মাওলানা যাইনুল আবেদীন। একদিকে তিনি ভালো মানের উস্তাদ, অপরদিকে তিনি একজন শক্তিমান কলম সৈনিক। আলোচনায় তাঁর দৃঢ়তা, সত্যিই অনুসরণ করার মতো। তিনি একজন হাদীস বিশারদ, উম্মাহর দরদী রাহবার। অসংখ্য বই তিনি লিখেছেন।
৩। মুসা আল হাফিজ
আমাদেরও আছে একজন দার্শনিক, আছেন শক্তিশালী গবেষক, তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের প্রিয় ভাই মুসা আল হাফিজ। চিন্তা-গবেষণায় তিনি ইতিমধ্যেই অনন্য আসন দখল করে নিয়েছেন। আলেমদের মধ্যে তার মতো শক্তিমান গবেষক আর কাউকে দেখি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপকগণ যাকে নিয়ে বর্তমানে নিয়মিত গবেষণা করেন তিনি আমাদের মুসা আল হাফিজ। তরুণ আলেমদের মাঝে তার তুমুল জনপ্রিয়তা। আলোচনাও করেন খুব সুন্দর করে। অনেক গুলো গবেষণামূলক বই তার বাজারে রয়েছে। তিনি একজন কবিও। দেখতে শীর্ণকায় হলেও, চিন্তায় তিনি পাহাড়সম। যুক্তি, তথ্য দিয়ে আলোচনায় তিনি বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছেন।
৪। মাওলানা মামুনুল হক
নতুন প্রজন্মের আলেমদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। যে কারণে ভালো লাগে। তিনি একাধারে একজন হাক্কানি আলেম, অভিজাত আলেম পরিবারের সন্তান, পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার ময়দানে রয়েছে তার পদচারণা। তিনি অনেক ভাষায় মোটামুটি জ্ঞান রাখেন। আরবি, ইংরেজি, বাংলা, উর্দু যথেষ্ট পরিমাণে বলতে পারেন। এছাড়া তিনি একজন ভালো মানের সংগঠক, প্রশিক্ষক, সম্পাদক এবং লেখক। সংগঠন এবং দ্বীনি বিষয়ে বেশ কিছু বই ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। একজন সাহসী মানুষ, বলিষ্ঠ কন্ঠের অধিকারী, নেতৃত্বের অনেক গুণ তার মধ্যে রয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে কিছু ভুল হয়তো তার আছে, কিন্তু ভুলের তুলনায় গুণ এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। মাঝে মাঝেই তিনি জাতীয় সংকট নিয়ে কথা বলেন। বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। সামাজিক ও দ্বীনি বিষয়ে সোচ্চার থেকে কথা বলেন। দায়িত্ব পালন করেন। সময়, সুযোগ, বাস্তবতা, তাকে আরো অনেক উপরে নিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।
৫। শাইখ আহমাদুল্লাহ
তরুণ প্রজন্মের আলেমদের মধ্যে ইতিমধ্যেই যিনি দেশের সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি হলেন শাইখ আহমাদুল্লাহ। অনেক বড় প্রতিভাবান মানুষ তিনি। তার অসাধারণ উপস্থাপনা সকলের মুগ্ধতা বাড়িয়েছে। তাঁর বলার বাচনভঙ্গি খুবই সুন্দর। তিনি সবসময় ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেন, দ্বীনি মাসআলা আলোচনার ক্ষেত্রে বহু দিক বিবেচনা করে কথা বলেন, তার সবচেয়ে বড় পরিচয়- তিনি দীনের একজন বড় দাঈ, ইসলামিক স্কলার এবং উঁচু মাপের সমাজ সেবক। তিনি সব ময়দানে বিচরণ করেন না। তার বিচরণের জায়গা বিশেষভাবে দুটি। একটি হল দ্বীনের দাওয়াত। উন্নত ভাষায়, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে, বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে দীনের বার্তা পৌঁছে দিতে তার চেষ্টার কোন অন্ত নেই। পাশাপাশি তিনি একজন উঁচু মাপের সমাজ সেবক । ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের বড় বড় জাতীয় দুর্ভোগে তিনি অসহায় মানুষের পাশে সামর্থের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। মানুষকে স্বাবলম্বীকরণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, গৃহায়ন ইত্যাদি কাজে যথেষ্ট দক্ষতা, স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল তিনি তার শ্রদ্ধেয় বাবাকে হারিয়েছেন। আমরা তার শ্রদ্ধেয় বাবার রুহের মাগফেরাত কামনা করি এবং শাইখ আহমদ উল্লাহ ভাই এর জন্য দোয়া করি, তিনি যেন আরো বড় পরিসরে কাজ করতে পারেন।
৬। মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী
একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ইতিমধ্যেই তিনি আলেম সমাজে স্থান করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে আরবি ভাষা শিক্ষার জাগরণ তৈরিতে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। "আরবি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র " প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের আলেমদের মধ্যে আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে এক প্রকার আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর ইখলাস, কাজের প্রতি আন্তরিকতা, বুঝের পরিপক্ষতা,চিন্তার গভীরতায় তিনি অনন্য এক মানুষ। আল্লাহর জন্যই ভালোবাসি তাকে।
৭। মাওলানা সানাউল্লাহ আজহারী
উত্তরার ১২নাম্বার সেক্টরে দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। আর সেটা হল বাংলাদেশ বর্তমানে তার মাদ্রাসাটি এমন একটি মাদ্রাসা, যেখানে লেখাপড়া করে ছাত্ররা সরাসরি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স কোর্স এ ভর্তি হতে পারবে। তিনি নিজে আল আজহারে দীর্ঘ দিন লেখাপড়া করেছেন। ভালো মানের আরবি জানেন। উঁচু মাপের তিনি একজন বড় আলেম। হাদীস চর্চায় তার ভালো পড়াশোনা আছে। বাংলাদেশে একটি বড় পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বস্ত মানুষ। চিন্তা -চেতনায় উদার, মিশুক এবং উদ্যমী মানুষ।
৮। মাওলানা আরিফ বিন হাবিব
সম্প্রতি স্যোসাল মিডিয়ায় তিনি আলোচনায় ঝড় তুলেছেন। তার আলোচনা শুনে ভালো লাগে নাই এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অসাধারণ আলোচনার স্টাইল, প্রখর স্মরণ শক্তি, ভাষার মাধুর্য সব মিলিয়ে একজন খুবই প্রিয় মানুষ। যদিও তার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ খুব একটা নেই, তথাপি তার মতো আলেমের জন্য অন্তর থেকে দুআ করি। কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স সহ তার প্রতিটি আলোচনা বারবার শোনর মতো।
৯। জাগ্রত কবি মাওলানা মুহিব খান
আমাদের কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের এক কৃতি সন্তান। একাধারে আলেম, লেখক, গবেষক, সুচিন্তক, গীতিকার, সুরকার, রাষ্ট্র চিন্তক। তার প্রতিটি গান-কবিতায় উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনায় থাকে এক ধরনের ভিন্ন আবেদন। তার উঁচু মাপের উচ্চারণ শক্তি সবাইকে মুগ্ধ করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরো ভালো কিছু জাতিকে উপহার দিতে পারতেন।
১০। শিল্পী শেখ এনাম
সিলেটের এই তরুণ শিল্পী অসাধারণ গায়। তার গলায় যাদু ও মায়া আছে। চর্চা অব্যাহত রাখতে পারলে অনেক দূর যেতে পারবেন। উর্দু সংগীতে তিনি ভারত পাকিস্তানের শিল্পীদের চেয়েও এগিয়ে। চোখে -মুখে আছে দরদ। সাংস্কৃতিক ময়দানে এমন শিল্পীদের খুব প্রয়োজন।
এখানে কয়েকজনের নাম লিখলাম। তার মানে এই নয় যে, এদের চেয়ে বড় আর কেউ নেই। আরো অনেক জ্ঞানী -গুণী মানুষ আছে। যোগ্য - মেধাবী মানুষ আছে। আজ এই ক'জনের কথা বললাম। এমনিতেই বললাম। অন্য কোনো দিন অন্য কারো হয়তো আলোচনা করবো। এদের অনেককেই হয়তো আপনার পছন্দ না। আপনি আপনার পছন্দের ভাইদের নিয়ে লিখেন। আমার ওয়ালে আপনার একশটা দোষ ধরার দরকার নেই।