পরমুখাপেক্ষিতাই আমাদের মাঝে ছিল : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। আমাদের দেশের মানুষের একটা ধারণা বা মানসিকতা আছে যে আমরা অন্যের টাকা ছাড়া কিছু করতে পারি না। আমাদের মানসিকতার এই দৈনতাটা ছিল। যারা পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনামূলক নানা কথা বলেছেন, তাদের সেই সব বক্তব্যে জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনার দায়ভার তাদের কাঁধেই অর্পণ করেন। এখানে তাঁর কারো বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ নেই, বরং তাদের ধন্যবাদ জানাই এই কারণে-কেননা এই ঘটনা ঘটেছিল বলেই আজকে সাহস নিয়ে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে আজকে বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। নইলে আমাদের দেশের অনেকেরই একটা মানসিকতা ছিল যে আমরা অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারবো না। এই পরনির্ভরশীলতা এবং পরমুখাপেক্ষিতাই আমাদের মাঝে ছিল, একটা দীনতা ছিল। আজ (২২ জুন) বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে দেশের প্রচলিত প্রবাদের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের ভার ভাল না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কি? বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন যে বন্ধ করেছিল সেটাতো আমাদের দেশেরই কিছু মানুষের প্ররোচনায়। বিশ্ব ব্যাংক তহবিল প্রত্যাহার করে নেয়ার পরে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই অচলায়তন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, বাংলাদেশ যে পারে সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি, এতেই আমি খুশী। পদ্মা সেতু নির্মাণ বা এর কাজের গুণগত মান নিয়ে কোন আপোষ করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। আগামী ২৫ তারিখে আমরা পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবো, আমি দেশবাসী সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। কেননা, তাদের সাহসে সাহসী হয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। উৎসব সবাই করবেন কিন্তু প্রত্যেকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করবেন এবং নিয়ম মানবেন এবং কোথাও কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন। যার যার জায়গা থেকে যেমন ভাবে হোক এই উৎসবে সবাই সামিল হবেন-এটা আমাদের মর্যাদার বিষয় যে আমরাও পারি। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি কাজেই সেভাবেই সবাই উৎসবে সামিল হবেন। সকলের মঙ্গল কামনা করে সকলের দোয়া চান বাংলাদেশ যাতে বিশ্বে এভাবেই মাথা উঁচু করে চলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা কিন্তু কোন অনুদান দেয়না। প্রকল্পের জন্য তাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়। কাজেই যে টাকাটা বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ হবে সেটা নষ্ট করার কোন অধিকার তাদের নাই। হয়তো পদ্মা সেতুর টাকা তারা বন্ধ করেছে কিন্তু সেই টাকা কিন্তু আমরা উদ্ধার করে অন্যান্য প্রকল্পে ব্যবহার করতে পেরেছি। এটা কিন্তু করানো যায়। যেটা আমাদের অনেকেই জানে না কিন্তু আমি জানি না কেন জানে না। আমরা বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ভিক্ষা নেই না। তারা কোন দাতা নয় এবং আমি ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর এই ‘দাতা’ শব্দটি বন্ধ করে দেই। কারণ এরা দাতা নয়, উন্নয়ন সহযোগী। ব্যাংকের একটি অংশীদার হিসেবে ঋণ নেই এবং সুদ সহ সেই ঋণ আমি পরিশোধ করি। এটা ঠিক ঋণটা স্বল্প সুদে পাই কিন্তু কেউ আমাদের করুণা করেনা। কাজেই আমার নামে বা বাংলাদেশের নামে যে টাকা সে টাকা তাকে দিতে হবে এবং দিতে সে বাধ্য। যে কারণে তাদের কোন আজ্ঞাবহ হয়ে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন না এবং অতীতে ঢাকায় এসে সভা করে যেন তারা অর্থ দিয়ে যায় সে পদক্ষেপও নিয়েছিলেন বলে জানান। এই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ‘জুজুর ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই।’

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ক এক প্রশ্লের উত্তরে এর উপযোগিতা বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এতবড় সেতু করে (পদ্মা সেতু) টাকা খরচ করেছি, আগে টাকা উঠুক তারপর ওটা করব। আমি আগেই বলেছি কোনো প্রকল্প নেওয়ার আগে সেখান থেকে রিটার্ন কি আসবে সেটা দেখতে হবে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু আমার মাথায় আছে, যেটা হয়ত করা হতে পারে। আমরা সারাদেশে সেতু নির্মাণ করেছি। যে পদ্মা সেতু আমরা তৈরি করলাম এটা যখন চালু হবে, এরপর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। এটার জন্য আমাদের মোটামুটি আয়োজন আছে। আর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া সেতুটা বড় সেতু না। এটা ভবিষ্যতে যখন প্রয়োজন মনে করব তখন করা হবে। তবে, আগে দেখতে হবে এটার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। সেই বিবেচনা করেই এটা করা হবে। এখন এতো বড় একটা কাজ শেষ (পদ্মা সেতু) করলাম, আরেকটা এখনই শুরু করতে পারব না।