| |
               

মূল পাতা জাতীয় পুলিশকে আরো জনবান্ধব হওয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর


পুলিশকে আরো জনবান্ধব হওয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর


রহমত ডেস্ক     21 June, 2022     08:34 PM    


দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় অবদান রাখতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ভুমিকা রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানে সফলতা অর্জন করেছে, অব্যাহতভাবে মাদক নির্মূল, সাইবার ক্রাইম/গুজব, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবার, মানব পাচার রোধসহ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে। এগুলো যেন আর না ঘটে সেজন্য বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকলেই আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারবো। আমি মনে করি, সব সময় সতর্ক থাকা দরকার। আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকের অপব্যবহার, সন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটতে পারে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পুলিশ সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকের অপব্যবহার রোধ, সন্ত্রাসবাদের ওপর বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। পাশাপাশি জনগণকে এমনভাবে সেবা দিতে বলেছেন যাতে তারা পুলিশকে তাদের জীবন রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

আজ (২১ জুন) মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচটি বিশেষ কার্যক্রম উদ্বোধন সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে গণভবনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পদ্মা সেতু উত্তর থানা, মুন্সীগঞ্জ, মহিলা পুলিশ বরাক প্রান্ত খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপি, খুলনা, ময়মনসিংহ পুলিশ হাসপাতাল এবং পিরোজপুর জেলার পুলিশ লাইন প্রান্ত যুক্ত ছিল। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর আজকের পাঁচটি বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- নবস্থাপিত ‘পদ্মা সেতু (উত্তর) থানা ও পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানা উদ্বোধন। বাংলাদেশ পুলিশ কতৃর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি গৃহ হস্তান্তর। নবনির্মিত ১২টি পুলিশ হাসপাতাল উদ্বোধন। বাংলাদেশ পৃলিশের ৬টি নারী ব্যারাক উদ্বোধন এবং অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন। প্রকল্পগুলোর ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। পরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় উপকারভোগী এবং কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশকে আরো জনবান্ধব হওয়ার আহবান জানিয়ে ১৯৭২ সালের ৮ মে সারদা পুলিশ একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আপনারা জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতায় এদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। আমি দুনিয়ার অনেক জায়গায় ঘুরেছি। গ্রেট ব্রিটেনে দেখেছি একজন সিপাহীকেও জনসাধারণ শ্রদ্ধা করে। কোন পুলিশ কর্মচারীকে দেখলে তারা আশ্রয় নেয়ার জন্য তাঁর কাছে দৌড়ে যায়। তারা মনে করে পুলিশ তাদের সহায়। আমাদের দেশেও পুলিশ বাহিনকেও সেভাবেই জনগনের আস্থা অর্জন করতে হবে যেন জনগন মনে করে যে, তাদের জীবন রক্ষায়,মান রক্ষায় পুলিশই হচ্ছে শেষ ভরসা। কাজেই পুলিশের কাছেই তারা সেই আশ্রয়টা পাবে, সেই ভরসার স্থান হিসেবে পুলিশকে জনগনের সামনে নিজেকে সেভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ আপনারা মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে, কেননা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সহায়তার নিয়েও এখন সন্ত্রাসি ও জঙ্গিবাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কাজেই এর সাথে মোকাবিলা করে আমাদের পুলিশ বাহিনীও যেন চলতে পারে এবং তদন্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, তাঁর সরকার সে ব্যবস্থা নিয়েছে। আর সরকার এখন অনলাইনে জিডি’র ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্যে অনলাইনে পুলিশ সেবার বন্দোবস্তোও করেছে। কাজেই ঘরে বসেই জনগণ এই সেবা পাবেন এবং তাদের অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পুলিশ তাহলে আরো জনবান্ধব হবে এবং পুলিশের সেবাটা আরো বেশি করে জনগণ পাবে। এ সময় করোনা মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করে এ কাজে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সমানতালে এগিয়ে এসেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পুলিশে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক চালু করেছে এবং বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে জনগনের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারীতে সন্ত্রাসি হামলার কথা স্মরণ করে সেখানে আত্মাহুতি দানকারি দুই পুলিশ সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং পুলিশ বাহিনীর সহযোগিতায় সশস্র বাহিনী, বিজিবি এবং র‌্যাবের কম্বাইন্ড অপারেশনের মাধ্যমে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সে সমস্যার সমাধানে সরকারের সাফল্যের পুনরোল্লেখ করেন। এরপর দেশে সে ধরনের আর কোন কোন বড় ঘটনা ঘটতে পারেনি এবং যেখানেই যে ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ সদস্যরা জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করেছে, সন্ত্রাসবাদকে মোকাবিলা করেছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের গণ মানুষের সমর্থনবিহীন আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পুলিশ সদস্যদের হত্যা, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রসংগ টেনে পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের সাহসি ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।

‘মানুষের নিরাপত্তা দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী দেশে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর সাফল্য এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারি প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধানেও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশ বাহিনীর সাফল্যজনক সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রসংগ উল্লেখ করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে ‘পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা’ এবং পুলিশ সদস্যদের জন্য ‘কমিউনিটি ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠাসহ তাঁর সরকারের সময়ে পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে এবং কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, গত সাড়ে ১৩ বছর পুলিশের উন্নয়নে নিরলস কাজ করছি। পুলিশে মোট ৮২ হাজার ৫৮৩টি নতুন পদ সৃজন করেছি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল-ট্যুরিস্ট-নৌ ইউনিট, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, এন্টি-টেররিজম ও কাউন্টার-টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, রংপুর ও ময়মনসিংহে রেঞ্জ, রংপুর এবং গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ, রংপুরে আরআরএফ এবং সিআইডি’তে সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করেছি। তিনি বলেন, তাঁর সরকার নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ ২টি সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এয়ারপোর্টে একটি ও কক্সবাজারে ২টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং র‌্যাবের জন্য ৩টি ব্যাটালিয়ন, ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, ৬২টি থানা, ৯৫টি তদন্ত কেন্দ্র এবং ১টি ফাঁড়ি এবং জাতীয় জরুরি সেবায় ‘৯৯৯’ ইউনিট গঠন করেছে। পাশাপাশি, আকাশ পথে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে পুলিশের জন্য হেলিকপ্টার ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরী এবং এই সেতু তৈরীতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকে সফলভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমে তাঁর সরকার দেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।