| |
               

মূল পাতা জাতীয় খালি ব্যবসা করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটা তো হয় না : প্রধানমন্ত্রী


খালি ব্যবসা করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটা তো হয় না : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     19 June, 2022     08:44 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালি ব্যবসা করবেন আর ইন্ডাষ্ট্রি করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটা তো হয় না। দেশের জন্য তো কিছু করতে হবে। এটাই আমি চাই। এই ম্যাসেজটা আমাদের ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়া উচিত। খেলোয়াড়দের যদি ব্যবসায়িরা নিয়োগ দিয়ে রাখে, তাহলে তারা খেলাধুলার দিকে সম্পূর্নভাবে মনোযোগ দিতে পারে। জীবন জীবিকার কথা চিন্তা করার প্রয়োজন হয় না।

আজ (১৯) রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা ক্রীড়াবিদদের মাঝে সম্মাননার চেক বিতরণ কালে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ৩৩ জন সদস্যসহ মোট ৮৮ জন ক্রীড়াবিদকে আর্থিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। অপর ৫৫ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ ২০২০-এর ৩৩ জন এবং বঙ্গবন্ধু ৪-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২২-এর বিজয়ী ২২ জন খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন মারিয়া মান্দা, খেলোয়াড় মনিকা চাকমা এবং প্রধান প্রশিক্ষক গোলাম রব্বানী ছোটন, বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ফয়সাল খান এবং বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাপ্টেন জামাল ভূঁইয়ার হাতে আর্থিক সম্মানীর চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিন শ্রেণীর ক্রীড়া দলের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাহউদ্দিন, মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা এবং বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ফয়সাল খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুটি বন্যার এই প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগে জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে, কারণ সরকার এটি ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু আমরা উদ্বোধন করবো ইনশাআল্লাহ এবং এই উদ্বোধনের পরে এটাও আল্লাহর একটা আশির্বাদ হবে। কেননা, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারবো। আমি মনে করি, পদ্মাসেতু এমন একটা সময় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সে সময় বন্যা শুরু হয়ে গেছে এবং এই বন্যা কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। সে সময় পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁদেরকে সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে। বন্যার্তদের রিলিফ দেওয়া থেকে ওষুধ সরবরাহ এবং খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি আরো সহজতর হবে। ’৮৮ সালের বন্যায় ন এরকম পদ্মা সেতু থাকলে সহজেই চলে আসা সম্ভব হতো। ঠিক সেই বন্যার আগেই আমরা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। আর সেটা করেছিলাম বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনসহ সকল কাজের সুবিধা হয়। বন্যায় নদীগুলো আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলে প্লাবিত দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর সরকার উত্তরাঞ্চল থেকে সুবিধাটা পায়। যার ফলে বন্যা সফল ভাবে মোকাবিলা সম্ভব হয়। সেই সময় বিবিসি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রচার ছিল- সে বন্যায় প্রায় দু’কোটি লোক না খেতে পেয়ে মারা যাবে। কিন্তু, তাঁর সরকার বলেছিল, ‘একজন মানুষকেও তাঁর সরকার না খেয়ে মরতে দেবে না’ এবং সেটা সম্ভব হয়েছিল। আর এই কাজে সেই সেতুটা তখন বিরাট কাজে এসেছিল। খেলাধূলাকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে দেশে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরীতে তাঁর সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত, বন্যাও আমরা মোকাবিলা করবো এবং খেলাধূলাও আমাদের চলবে, সবই আমাদের চলবে। এটাই আমাদের জীবন এটাকেই মেনে নিতে হবে । এটাই বাস্তব এবং বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে এবং বিশ্ব সভায় আমরা মাথা উঁচু করেই চলবো।

শেখ হাসিনা বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁর সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। একদিকে যেমন করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। এবারের বন্যাটা একটু বেশিই ব্যাপক হারে এসেছে। ন্যায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে, প্রশাসন সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে সব সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেইসাথে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতা করছেন। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি স্যালাইনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যা যা দরকার হতে পারে তার জন্য প্রস্তুতিও সরকার নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি নামার সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায় দেশের বন্যার এই চিত্র ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন। সুনামগঞ্জ থেকে এই পানি আজ একটু নামতে শুরু করেছে । কিন্তু পানি যখন নামবে, তখন অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করবে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগ, রংপুর বিভাগেও বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা আগে থেকেই সতর্কতা আমরা নিচ্ছি এবং সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করনীয় আমরা সেটাও করে যাচ্ছি। সিলেট সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারাদেশের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

১০/১২ বছর পরপর দেশে বড় আকারের একটা বন্যা দেখা দেয় বলে তাঁর অতীত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সবাইকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম, আমাদের সরকারের যারা তাদের সবাইকে বলেছিলাম, এবারে বন্যাটা একটু বৃহৎ আকারে আসবে। কাজেই সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কাজেই আমাদের প্রস্তুতিও আছে। এই পানি যখন নামবে কোন না কোন অঞ্চল যখন প্লাবিত হবে। ঠিক শ্রাবণ মাস পর্যন্ত থাকবে আবার শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। বাংলাদেশের যদি আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশটা দীর্ঘদিন থেকে দেখি এটাই হচ্ছে নিয়ম, এটা হবে। যখন এ রকম বন্যা আসে পানি এভাবে প্লাবিত করে। তাই মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা তাঁর সরকার নিচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা নানা বাঁধা সফলভাবে মোকাবিলা করার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলেছি, আমরা নিজেদের টাকায় এই সেতু করব। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে পারে, কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা চেয়ে নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। কাজেই আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবো। কারণ, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। করোনা এবং দেশের বন্যা পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সময়কে একটু অস্বাভাবিক উল্লেখ করে কৃতি খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দিতে পারার বিষয়টা সব সময়ই আনন্দের, খেলার মাঠে সব সময় চিন্তায় রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি আমরা বিজয়ী জাতি। হারজিত খেলায় আছে এটা ঠিক কিন্তু মাথায় এটা রাখতে হবে যে আমাকে জিততে হবে। প্রধানমন্ত্রী খেলাধূলায় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহবান জানান।

বেসরকারি খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত আমরা সহযোগিতা করবো ততো উৎকর্ষতা বাড়বে। যারা খেলবে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে, তাদের জীবন জীবিকার সুযোগটাও আমাদের করে দিতে হবে।  খেলোয়াড়রা কেবল খেলাধুলাই করবে এবং দেশে যত বেশি ক্লাব হবে, যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে খেলাধুলায় ততো বেশি উৎকর্ষতা বাড়বে। সেই ধরনের পরিবেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। গ্রামীণ খেলাধূলার প্রচার এবং প্রসারে আরো জোর দেয়ার জন্য তাঁর সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস এসেসিয়েশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ সময় সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণাধীন মিনি স্টেডিয়ামের কাজ আরো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। যে সব জায়গায় স্টেডিয়াম নির্মাণে জমি পাওয়া যাবেনা সেখানে প্রয়োজনে জমি কিনে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে বলেন তিনি।

শারিরীক প্রতিবন্ধিদের ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের জন্য বয়ে আনা বিভিন্ন সাফল্যের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধীদের এক সময় বোঝা মনে করা হলে সুযোগ পেলে তারাও যে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে, তারা আজকে তা প্রমাণ করেছেন। তারা প্রমান করেছে যে, তারা দেশের সম্পদ। দেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে এবং তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে তাঁর সরকার দেশকে এদিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের একজন মানুষও যেন আর গৃহহীণ না থাকে সেজন্য সকল গৃহহীণ-ভূমিহীণকে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। উন্নয়নের এই গতি করোনাভাইরাসকালিন কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয়, কেননা সমগ্র বিশে^ই এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশ থেমে থাকেনি, এগিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ মন্ত্র ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবানা’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি এবং পারবেও না।