রহমত ডেস্ক 18 June, 2022 10:50 PM
টানা বৃষ্টি আর ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষ। সর্বত্রই পানি আর পানি। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এরই মধ্যে সিলেটের প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গা পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে পানিবন্দি প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী জেলা সুনামগঞ্জেও। বিদ্যুৎ স্বল্পতা, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট ছাড়াও সবমিলিয়ে এখন সহায়তা পেতে মরিয়া বানভাসিরা। সংকটপূর্ণ এই পরিস্থিতির মাঝেই দুঃসংবাদ দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সংস্থাটির মতে, আগামী সোমবারের আগে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো আশা নেই। সেই সঙ্গে আগামী দুই দিনের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের আরো ১৭টি জেলা প্লাবিত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এরই মধ্যে দেশের ১০টি জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এসব এলাকার মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে ওই দুই জেলায় এমন বন্যা হয়নি। সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী দুই দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে আগামী মঙ্গল বা বুধবার থেকে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড যৌথভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে, উদ্ধার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কার্যক্রম চালাবে। সেই সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণসহ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সিলেটের উজান ঘেঁষা মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও আসামে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিনিয়তই ঢল নামছে। সেই সঙ্গে সিলেটের প্রধান নদীগুলো বিশেষত- সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও গোয়াইনসহ বেশিরভাগ নদীর তলদেশই ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও নগর ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট-দখল হওয়াসহ সবমিলিয়ে বৃষ্টির পানির ঢল ধরে রাখতে পারছে না প্রাকৃতিক এই উৎসগুলো। ফলে পানি উপচে দ্রুত বসতি ছাড়াও শহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে, অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ২২ জুন মধ্যে পানি বিপদসীমার আড়াই মিটারেরও বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঁচ দিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে আগামী ২২ জুন ২৬৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে ১৩ দশমিক ৪৫ মিটারে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে এই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। এছাড়া ২২ জুন সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২৬৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে ১০ দশমিক ৪৩ মিটারে দাঁড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমান এই পয়েন্টের বিপদসীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার।