| |
               

মূল পাতা জাতীয় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে সব বাহিনী সতর্ক থাকুন : প্রধানমন্ত্রী


পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে সব বাহিনী সতর্ক থাকুন : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     15 June, 2022     05:55 PM    


আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীরা যাতে কোন রকম ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য সশস্র বাহিনীসহ সকল বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মত এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। কিন্তুু, যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। যার কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে তা কিন্তু আমরা জানি না।

আজ (১৫ জুন) বুধবার সকালে তাঁর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. মজিবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপি’র প্রধানদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। সমস্ত বিষয়টাই একটু রহস্যজনক। এ জন্য সবাইকে বলবো একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সে গুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে। ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দেশের ব্যক্তি বিশেষের প্ররোচনায় বিশ^ ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে তাঁর সরকার ঘোষণা দিয়েছিল নিজেদের অর্থায়নে করবে, না হলে করবে না। তাঁর সরকার সেই পদ্¥া সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন. ফেরীতে আগুন এমনকি সীতাকুন্ডে যে আগুনটা সেটা একটা জায়গা থেকে লাগতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে। আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে যেখানে দেখা গেছে রেলের চাকার নিকটে আগুন জ¦লছে, সেটা কী করে সম্ভব সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে এনে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এসবের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির অপপ্রয়াস সম্পর্কেও সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেমন একদিকে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তাদের তাদের নানা কর্মকান্ড পরিচালিত করে থাকে। সেজন্য তাঁর সরকার আধুনিক বিশ্ব এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসএফসহ অন্যান্য বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে, কারণ, আমাদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকেও দমন করতে হবে। অতীতে বিভিন্ন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই তাঁর সরকার জোট সরকারের আমলে সৃষ্ট সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এ ব্যাপারে আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে এবং মনে রাখতে হবে আমরা যখন এগিয়ে যাই তখনই এ ধরনের ঘটনা কোন কোন মহল ঘটনানোর চেষ্টা করে থাকে। এটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। সে জন্য সবাইকে আমি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

সরকার প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, হাইটেক পার্ক ও কম্পিউটার ল্যাব করে প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছে। পাশাপাশি, স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, রাজধানী বাসীর চলাচল সুবিধার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পও আজকে দৃশ্যমান। এছাড়া, এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম, সেই ড. ইউনূস ব্ঈেমানি করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি তার বন্ধু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামীর ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে’ তিন লাখ ডলার ডোনেশনও দিয়েছিলেন। হিলারি ক্লিনটন তাঁকে ফোনও করেছেন। তাঁর কাছে ধর্ণাও দেন এবং যাকে তিনি আইনের কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা বিশ্ব ব্যাংকের কাছে বার বার মেইল পাঠিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম যে, দুর্নীতির প্রমাণ করতে হবে। পরে কানাডার আদালতে এটা ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনুসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবো। কাজেই, খুব স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ভেবেছিল এটা বোধহয় আমরা কোনদিন করতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি। একজন রাজনীতিকের কাছে জনগণই তাঁর ‘প্রাণ শক্তি’ এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কখনো যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন, সেই বিষয়টি যারা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে জোর করে দেশে ফিরে আসার পর থেকে বারংবার হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হয়ে আল্লাহর রহমতে এবং দলের নেতা-কর্মী সৃষ্ট মানবঢালে প্রাণে রক্ষা পাবার কথা স্মরণ করে তাঁকে নিরাপত্তা প্রদানকারীদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি নিজে সব সময় শঙ্কায় থাকেন।

তিনি বলেন, গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এ জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন।বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছিলেন বলেই দেশ আজ অভিশাপ মুক্ত হয়েছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে যে সব বিদেশী অতিথিরা আসেন তারা এসএসএফ-এর ভূয়ষী প্রশংসা করেন এবং তিনি নিজেও তাদের পারদর্শিতায় গর্ববোধ করেন। এটাই সব সময় মাথায় রাখতে হবে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা শৃঙ্খলা সবকিছু মেনেই চলতে হবে এবং আমাদের এসএসএফ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। জনগণের সাথে একটু কথা বলা, জনগণের সঙ্গে একটু মেশা এটাই একমাত্র কাজ। এটাই আমাদের শক্তি। আর কোন শক্তি কিন্তু নেই। বিরোধী দলে যখন ছিলাম মানুষকে কি দিতে পেরেছি, একটু কথা, একটা আস্থা বা মানুষের বিশ্বাস অর্জন। সেজন্য জনবিচ্ছিন্ন যেন না হয়ে পড়ি সেটা একটু দেখতে হবে। কারণ, পানি থেকে মাছ তুলে ডাঙায় রাখলে যে রকম আমরা যদি জনগণের সঙ্গে মিশতে না পারি তাহলে আমাদের অবস্থাও কিন্তু সে রকমই হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, জনগণই আমাদের প্রাণশক্তি। তাদের জন্যই আমার এ রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীত্ব নিজের কাছে ভোগের কোন বস্তু নয়, তাঁর বাবা অতীতে মন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ও হয়েছেন কিন্তু তাঁরা ৫টা ভাই বোন কখনোই ক্ষমতা ভোগ করার কথা চিন্তা করেননি। যা তাদের বাবা-মায়ের নির্দেশ ছিল। দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজেদের জীবন যাপনের ধরনের কোন পরিবর্তন আনেন নি। আমি সব সময় যখন দোয়া করি আমি আমার ছেলে মেয়ের জন্য যেমন দোয়া করি, নাতি পুতির জন্য যেমন দোয়া করি, তেমনি ঠিক সেই রকমভাবে আমার সাথে যারা কাজ করেন প্রত্যেকের জন্য আমি দোয়া করি। এসএসএফের জন্য বিশেষ করে দোয়া করি। আমার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সব সময় আমি চিন্তায় রাখি।সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগ আমরা শুরু করি। পুলিশে নারী সদস্য নিয়োগ জাতির পিতাই শুরু করেছেন।ভৌগলিক সীমারেখায় আমরা হয়তো ছোট, কিন্তু জনসংখ্যায় বড়। আমরা বড় হয়ে চলবো, বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবো। আমরা দেশটাকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাই। স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি সেই মর্যাদা নিয়ে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছি তা নিয়েই যেন সামনে এগিয়ে যেতে পারি এবং দেশি-বিদেশি কোন শক্তিই যেন এই অগ্রযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করতে না পারে। বঙ্গবন্ধুর করে দেয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এই নীতি নিয়েই বাংলাদেশ আগামীতেও সামনে এগিয়ে যাবে।