রহমত ডেস্ক 09 June, 2022 02:24 PM
কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির নেতাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- ১. ভারত সরকারকে অবশ্যই কটূক্তিকারী দুই বিজেপি নেতাকে অবিম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ২. বিশ্ব মুসলমানদের কাছে ভারতকে ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. অন্যথায় সারা বিশ্বের মুসলমানরা ভারতীয় পণ্য বয়কট করবে। ৪. মুসলমানদের বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর আহ্বান জানায় হেফাজত। ৫. কারাগারে আটক আলেম-উলামাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানায় হেফাজত।
আজ (৯ জুন) বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে এ মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জহুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস নদভী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন রাব্বানী, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ প্রমুখ।
হেফাজত মহাসচিব মাওলানা শায়খ সাজিদুর রহমান বলেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের একেরপর এক ইসলাম ও মানবতার মুক্তির দূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবার নিয়ে কটূক্তি সারা বিশ্বের মুসলমানদের চরমভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। বিজেপি নেতারা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের অন্তরে আঘাত করেছে। বিজেপি নেতারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। যেহেতু ভারতের সরকারি দলের জাতীয় মুখপাত্র এ হীন বক্তব্য দিয়েছে তাই এটা ইসলাম ধর্মের উপর রাষ্ট্রীয় আঘাত। তাই সারা বিশ্বের মুসলমানদের নিকট তাদের প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এবং দোষীদের গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, এবারই প্রথম নয়, ক্ষমতায় আসার পর থেকে লাগাতার ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দেশটিতে মুসলমানদের ওপর চলছে নানারকম নির্যাতন। দিন দিন তাদের এই প্রবণতা আরো বেড়ে চলছে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব চুপ থাকার কারণে। দলের মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার মিডিয়া সেল প্রধান নবীন জিন্দালকে বহিষ্কার করা হয়েছে আরব মুসলিম দেশগুলোর চাপে পড়ে। এর মানে স্পষ্ট যে, মুসলিম বিশ্ব যদি সরব হয়, ভারতের ইসলাম বিদ্বেষ অনেকটাই কমে আসতে বাধ্য। আমরা ওআইসি সহ মুসলিম বিশ্বকে আহবান জানাবো, ভারতসহ বিশ্বের যেখানেই ইসলাম বিদ্বেষ ও মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো হয়, সেখানেই সম্মেলিত প্রতিবাদ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাবো, আপনারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করুন। ভারত উপমহাদেশ মুসলমানরা শতশত বছর শাসন করেছে, কিন্তু তারা অন্য কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়নি। বরং তারা ভারতকে গড়ে তুলেছে। ভারতের আজাদী আন্দোলনে মুসলমানদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। আপনাদের উচিৎ ইতিহাস অদ্ধায়ন করা। ভারতের উচিৎ বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা গ্রহণ করা। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বরাবরের মতো নিরাপদ ও সম্প্রিতির মধ্যে বসবাস করে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন তো দূরের কথা বাংলাদেশে কোনও রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও কোনও সংখ্যালঘু ধর্মকে কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখার সাহস করে না। ভারতের উচিৎ এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমীরে হেফাজত আল্লামা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরীর নির্দেশে আমরা আজ এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছি। তিনি অসুস্থ থাকায় এখানে উপস্থিত হতে পারেননি। মুসলিম উম্মাহকে মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে অবমাননাকারীদের সোচ্চার থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।