রহমত ডেস্ক 31 May, 2022 06:45 PM
খুলনা পিবিআই পরিদর্শক মাসুদ সংবাদ সম্মেলন করে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রী। তিনি দাবি করেন, মাসুদ তাকে ধর্ষণ করেছেন। এ ছাড়া মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মাসুদ এএসআই মিরানসহ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করছেন। পিবিআই পরিদর্শক মাসুদ ইউটিউব চ্যানেলে গান-বাজনা করেন। সেখান থেকে মাসুদের নম্বর সংগ্রহ করি। ১০ মে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফোনে সমস্যার কথা বললে মাসুদ আমাকে পিবিআই অফিসে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে মাসুদ আমার ফোনের সবকিছু দেখে ব্যস্ত আছেন বলে আমাকে পরে দেখা করতে বলেন। এরপর মাসুদ আমাকে ফোন করে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার কথা বলেন। আজ (৩১ মে) মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইমো খোলার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ হতো নিয়মিত। প্রতিদিন তার সাথে ৫ বার করে কথা বলতো মাসুদ। ১৩ মে ফোন দিয়ে তাকে জানানো হয় ঢাকা যাচ্ছেন তিনি। ১৪ মে ফোন দিয়ে মাসুদ তাকে পরেরদিন দেখা করার কথা বলেন। তখন ওপাশ থেকে জানানো হয় পিবিআই অফিসে, মাসুদ প্রতিউত্তরে বলেন, না। ১৫ মে দুুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইমোতে ফোন দিয়ে মাসুদ তাকে ধর্মসভা মন্দিরের সামনে আসতে বলেন। ওই নারী ধর্মসভা মন্দির কোথায় তা জানেন না। উত্তরে মাসুদ রিক্সায় করে সেখানে আসতে বলেন। সেখানে তাকে বলা হয় সাইবার ক্রাইম অফিসে যেতে হবে। পরে ধর্মসভা মন্দির থেকে মোটরসাইকেলযোগে তাকে ছোট মির্জাপুরের একটি অফিসে নিয়ে যায়। রুমের ভেতর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরিচিত এক ব্যক্তি অফিসের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন। এরপর মাসুদ তাকে ধর্ষণ করেন। নিজেকে রক্ষার শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ধর্ষণের ঘটনা কাউকে কিছু জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেন মাসুদ। এর আগে তাকে মারধর করাও হয়। ওই অফিস থেকে বের হওয়ার পর তিনি রিক্সায় উঠে সরাসরি থানায় চলে আসেন। মাসুদও মোটরসাইকেল নিয়ে তার রিক্সার পিছু নিয়ে থানার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। ওখানে মাসুদের অবস্থান দেখে ভয় পান ওই নারী। এরপর খুলনা থানার একজন পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুনের নম্বর সংগ্রহ করে বিষয়টি তাকে জানান ওই নারী। খুলনা থানার পুলিশ তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। সেখানে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। খুলনা থানার এএসআই মো. মিরান শেখ ও আমাকে নিয়ে মাসুদ বিভ্রান্তিমূলক কথা ছাড়াচ্ছে। যা আজকের বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন তিনি। তিনি মিরান শেখ নামে কাউকে চেনেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে জোর দাবি করেছেন। সোমবার (৩০ মে) মামলাটি আপোষ করার জন্য পিবিআই পরিদর্শক মাসুদ তার কাছে সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছেন। সোমবার মাসুদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু তার নামে এরকম অসংখ্য নারী কেলেঙ্কারি রয়েছে, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এর আগে সোমবার (৩০ মে) খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মঞ্জুরুল হাসান মাসুদ বলেন, খুলনা থানা পুলিশের সাবেক এএসআই মিরান শেখ এ মামলায় পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মাসুদ। মামলা দায়েরের পর জানতে পারলাম এই মেয়েটি খুলনা থানার সাবেক এএসআই মো. মিরান শেখের পূর্ব পরিচিত। কখনো তাকে স্ত্রী আবার কখনো বোনের পরিচয় দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এএসআই মিরান শেখ তার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন। একাধিকবার ওয়াদাবদ্ধ হয়ে টাকা দিতে ব্যর্থ হন তিনি। সর্বশেষ ১০ মে টাকা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। সেদিন ব্যর্থ হওয়ার পর আইনি আশ্রয় নেওয়ার কথা বললে ২৩ মে টাকা পরিশোধ করবে বলে তাকে জানান। কিন্তু টাকা না দেওয়ার উপায় হিসেবে মিরান ওই নারীকে দিয়ে তাকে ধর্ষণের মিথ্যা কাহিনী সাজিয়েছেন। আমি গত ২৬ মে দুই সপ্তাহের জামিন পেয়েছি। বর্তমানে আমি জামিনে রয়েছি।
এদিকে খুলনা থানার সাবেক এএসআই মিরান শেখ বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে মাসুদ স্যারের কাছ থেকে সুদের ওপর ৫ লাখ টাকা ধার করি। এ বাবদ তাকে খুলনা পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংক শিববাড়ি মোড় শাখার একটি খালি চেক প্রদান করি। তিনি সেখানে ১৬ লাখ টাকা লিখেছেন। ইতোপূর্বে তাকে কয়েক লাখ টাকা সুদও দিয়েছি। যা খুলনা থানার কয়েকজন অফিসারও অবগত আছেন। আমাকে সদর থানা থেকে খালিশপুর থানায় বদলি করা হয়েছে। আমি এখন খালিশপুর থানায় কর্মরত আছি। ওই মেয়ে কে তা আমি জানি না। এমনকি চিনিও না। মাসুদ স্যার আমার নামে এটি রটিয়েছেন। তিনি টাকা পাবেন ৫ লাখ, আমি অবশ্যই দিব। টাকা দিলেই তো ঝামেলা মিটে যাবে। কিন্তু এ ধরনের কাজ কেন আমি করব? এমন কিছু করলে তো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে বরখাস্ত করতেন।