| |
               

মূল পাতা ইসলাম তাড়াহুড়ো করা শয়তানের কাজ


তাড়াহুড়ো করা শয়তানের কাজ


মাওলানা রাদ তানবীর     27 May, 2022     12:32 PM    


তাড়াহুড়ো করা আমাদের অভ্যাস। আমরা তাড়াহুড়ো করি সবকাজে সবখানে। তাড়াহুড়ো করার কারণে ভুল করি চিন্তায়, চেতনায়। ভুল করি কাজে, কলমে। ভুল করি লিখায়, বলায়। এই তাড়াহুড়োর কারণে অপূর্ণ ও অশুদ্ধ থেকে যায় আমাদের অনেক প্ল্যান, অনেক ইচ্ছা। লেনদেন, ব্যবসা, ইত্যাদিতে এদিক সেদিক হয়ে যায় হিসেবের পাতা তড়াহুড়ার জন্য। সবকাজে যারা বেশি তাড়াহুড়ো করে তাদের ভুলের পরিমাণটা থাকে বেশি। তারা বেশি হোঁচট খায়, ব্যর্থ হয়। আফসোস আর হায়হুতাশ থাকে তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে। তাদের দুশ্চিন্তাও থাকে অতিমাত্রায়। যারা বেশি তাড়াহুড়ো করে তাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু হাতছাড়াও হয় অধিক। তাড়াহুড়ো করা বিপদও ডেকে আনে জীবনে। ভয়ঙ্কর বিপদও নেমে আসে এই তাড়াহুড়োর কারণে। ঘটে এক্সিডেন্টের মাধ্যমে প্রাণবিয়োগও। ঘটে মৃত্যু। আমরা ভুলে যাই সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি হওয়ার বিষয়টা। তাড়াহুড়ো করে কাজ করার কারণে লজ্জিতও হতে হয় অনেক সময়। হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, 
 لا يزال المرأ يجتني من ثمرة العجلة الندامة 
অনুবাদ: মানুষ তাড়াহুড়োর ফল কেবল লজ্জাই লাভ করে।

আমাদের সৃষ্টির উপকরণেই মিশে আছে তাড়াহুড়োর বৈশিষ্ট্য। সবকিছু তাড়াতাড়ি পেতে চাই আমরা। লক্ষ্যগুলো ছুঁতে চাই খুব দ্রুত। গন্তব্যে পৌঁছতে চাই অল্প সময়ে। রোড পার হতে চাই বড় সুযোগের অপেক্ষা না করে রিস্ক নিয়ে, ফলে এক্সিডেন্টে মারা যাই। গাড়ী ড্রাইভ করি তাড়াহুড়োর সাথে, ফলে দুর্ঘটনার শিকার হই। ধোঁকাবাজদের মিথ্যা প্রলোভনে কালক্ষেপণ না করে না বুঝে পা দেই, ফলে সব হারাই। কিছু তাড়াতাড়ি পেতে ভিড়ে ঢুকি, ফলে পকেটমারের কবলে পড়ি, দুঃখ হয়। কোনো প্রয়োজনে অনেক সময় তাড়াতাড়ি খেতে চাই। গলায় আটকে যায় খাবার। কষ্ট হয়। এতে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটে। নামাজেও তাড়াহুড়ো করি, ফলে নেকি হারাই। ছোট্ট ছোট্ট দোষে কালক্ষেপণ না করে অনেকে স্ত্রীকে দিয়ে দেয় তালাক, ফলে সংসার ভেঙ্গে যায়। পরে অনুশোচনা জাগে আর তালাক কার্যকর না হওয়ার পথ পেতে শত চেষ্টা চালায় দুঃখে। কর্মস্থলে কাজ করতে গিয়ে এটাওটা নষ্ট করে ফেলি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে, ফলে মালিকের গালি শুনতে হয়। মার খেতে হয়। ইত্যাদি। ইত্যাদি।

সবক্ষেত্রে এই অতিমাত্রায় তাড়াহুড়ো করা কিছুতেই কাম্য নয়। এটা কল্যাণকরও নয়। এই অভ্যাস যাদের আছে তাদের উচিত তা পরিত্যাগ করা। ধীরস্থিরতা আল্লাহ তায়ালার বড় দান। ধীরেসুস্থে কাজ করা ছওয়াব লাভের অন্যতম উপায়ও। ধীরস্থিরতার সাথে কাজ করলে তা পূর্ণতাও লাভ করে সহজে, ফলে ব্যর্থতায় লজ্জার মুখোমুখিও হতে হয় না। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা ধীরস্থিরতাকে ভালোও বাসেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশাজ্জ আব্দুল কায়স (মুনযির ইবনে আয়েজ) (রা.) কে  বলেন, 
 يا أشج! إن فيك خصلتين يحبهما الله، الحلم و الأناة (رواه الإمام البخاري و الإمام مسلم)
অনুবাদ: হে আশাজ্জ! নিঃসন্দেহে তোমার মধ্যে এমন দু'টি বৈশিষ্ট্য আছে যা আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন, (তা হলো) সহনশীলতা ও ধীরস্থিরতা। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে, 
 عن سهل بن سعد رضي الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه و سلم قال: الأناة من الله و العجلة من الشيطان (رواه الإمام الترمذي)  
অনুবাদ: হযরত সাহাল ইবনে সা'দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ধীরস্থিরতা আল্লাহর পক্ষ হতে আর তাড়াহুড়ো শয়তানের পক্ষ হতে। (তিরমিজি শরীফ)
عن سعد بن أبي وقاص رضي الله تعالى عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: التؤدة في كل شيء خير إلا في عمل الآخرة (رواه الإمام أبو داود و البيهقي)
অনুবাদ: সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পরকালীন আমল ব্যতীত সব বিষয়ে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা উত্তম। (সুনানে আবু দাউদ ও বায়হাকী শরীফ)

তো বন্ধুরা, আমরা আমাদের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি আমলে ধীরতা অবলম্বন করবো। তবে হ্যা, নেক আমলের ক্ষেত্রে, পরকালীন কাজকর্মে অবশ্যই আমরা এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবো। প্রতিযোগিতা করবো পরস্পরে। তাহলে আমরা লাভ করতে পারবো সফলতা, পুণ্যতা। আমরা তখন বাঁচতে পারবো অনাকাঙ্ক্ষিত সব ফল থেকে, প্রভাব থেকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।