মূল পাতা আরো সোশ্যাল মিডিয়া মক্কা ও মদীনা; আমার ভালোবাসা, আমার চেতনা
ইবনে সিরাজ 22 May, 2022 12:31 PM
মক্কার পবিত্র ভূমিতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হয়েছে, মদীনার পবিত্র ভূমিতে নবীজী চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। দু'দিক থেকেই দু'টি স্থান নবীজীর কাছে প্রিয়। উভয় ভূমিতেই নবীজীর কতোশত স্মৃতি বিস্তৃত রয়েছে। কুরআন হাদীসেও বিবৃত রয়েছে মক্কা মদীনাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক অনেক কাহিনী। এসব কারণে পবিত্র মক্কা মদীনার তাৎপর্য মুসলমানদের কাছে অপরিসীম ও গুরুত্বপূর্ণ।
গত এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ সকাল ৯ টায় ঢাকা থেকে রওয়ানা করে ঐদিনই স্থানীয় সময় বিকাল ৫ টায় জিদ্দায় অবতরণ করলাম। মাত্র ১৪ দিনের সফর শেষে ২৬ এপ্রিল স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় মদীনা এয়ারপোর্ট থেকে রওয়ানা করে রাত ৯ টায় এসে পৌছলাম মাতৃভূমিতে। সাথে সঙ্গী হলো মক্কা মদীনার অনেকগুলো স্মৃতি। অসাধারণ ভালোলাগা আর ভালোবাসা পুঁজি করে বিদায় নিলাম মদীনা থেকে। সীমান্তের বেড়াজালে আটকা না থাকলে হয়তো হরহামেশাই থাকা হতো, যাওয়া হতো সোনার মক্কা মদীনায়। কিন্তু কী আর করা! নির্ধারিত সময়ের ভিতরেই সৌদীআরব ত্যাগ করতে হয়েছে। ফিরে আসতে হয়েছে মাতৃভূমিতে।
মন মানছিলোনা মক্কা ছেড়ে চলে আসতে। স্মৃতিতে ভাসছিলো ইতিহাসের সেই দিনকালের কথা, যখন মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছিলেন দ্বীনের নবী। কতোটুকু মনোকষ্ট হয়েছিলো দয়াল নবীর,ভাবতে যেয়ে খারাপ লাগছিলো। প্রাণের মক্কা থেকে বিদায় নিয়েও আবার কা'বাকে দেখতে ফিরে গিয়েছি বারবার। বরকতের সেই জমজম কূপের জান্নাতি পানি পান করতে থাকলাম পেটভরে। খুব কষ্ট লাগছিলো এই কথা ভেবে যে, আর তো এই হৃদয় প্রশান্তিকারী, তৃষ্ণা নিবারনকারী স্বচ্ছ পানীয় পাবোনা পান করার জন্য। লক্ষ রাকাআত সওয়াব লাভ হয় যে বায়তুল্লাহয় সিজদা করলে, সেখানটাতে আর সিজদার সুযোগ পাবো কী না, ভেবে অস্থির লাগছিলো বেশ। অস্থিরতার মাঝখানেই সকল মুসলামানের যেনো মক্কা মদীনার জিয়ারত নসীব হয় সে দোয়া করছিলাম কা'বার দিকে তাকিয়ে।
২০ তারিখ রাত্রিতে পৌছে মাত্র ৫ দিন থাকা হলো সোনার মদীনায়। ২৬ তারিখ সূর্য উঠার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে প্রাণের মদীনা থেকে। এর আগে রাত ১০ টায় নবীজীর কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়েও আবার গিয়েছি সালাম জানাতে। বিমানবন্দরে রওয়ানা দেওয়ার আগমূহুর্তে রেডি হয়েও মন মানছিলো না। আবার ছুটে গিয়েছি নবীজীর রওজাতে। এই ভেবে মনটা হাহাকার করে উঠছিলো যে, জীবনে রওজায় সামনে দাঁড়িয়ে আর কি পারবো সালাম জানাতে? ইসলামের উর্বর ভূমি মদীনার শীতল বাতাস আর কি গায়ে মাখাতে পারবো? মসজীদে নববীর ফজিলতপূর্ণ জামাত আর কি জীবনে নসীব হবে? ভাবতে যেয়ে মন আঁৎকে উঠছিলো। রিয়াজুল জান্নাতে প্রবেশের স্বাদ আর কি ভাগ্যে জুটবে? জান্নাতুল বাকীর দিকে চেয়ে চেয়ে কল্পনা করছিলাম ৭০ হাজার জান্নাতি লোকের কথা, যারা এই গোরস্থান থেকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সৌভাগ্যবান সেই মুমিনদের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া কালাম পড়তে পারবোনা ভেবে খারাপ লাগছিলো। বাসে করে যখন বিদায় নিচ্ছি, ঘাঢ় ফিরিয়ে বারবার তাকাচ্ছিলাম নবীজীর সবুজ গুম্বুজের দিকে। হৃদয় দিয়ে ভাবছিলাম সে সকল নবী প্রেমিদের কথা, যাদের অন্তর নবীপ্রেম ভরপুর। তারা এই বিচ্ছেদ যাতনা কীভাবে সামাল দেন?- সেটা নিয়ে ভাবছিলাম দীর্ঘক্ষণ। হিসাব মিলাচ্ছিলাম- মক্কা মদীনার ভালোবাসার তারতম্য হয়তোবা ইমানের সাথে সম্পৃক্ত আছে। ইমান যার যতে বেশি, হয়তোবা মক্কা মদীনার প্রতি হৃদয়ের টানও তার ততো বেশি। আল্লাহ ও তার রাসূলকে যে ভালোবাসে তার কাছে মক্কা মদীনার চেয়ে পৃথিবীর আর কোনো ভূমি এতোটা পছন্দের হতে পারেনা ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, যে পবিত্র মাটিতে শুয়ে আছেন, সে পবিত্র মাটির চেয়ে প্রশান্তিদায়ক মাটি আর কোথাও কি হতে পারে? পারেনা। আসলে মক্কা মদীনার কোনো তুলনাই হয়না। মান-মর্যাদা-শ্রেষ্ঠত্ব-মহত্বের বিবেচনায় মক্কা মদীনার তুলনা স্বয়ং মক্কা মদীনা-ই।
মক্কা মদীনার জিয়ারত শেষে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইমানকে শাণিত করতে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রেমে হৃদয়কে ভরপুর করে তুলতে সকলেরই উচিত জীবনে একবার হলেও নবীজীর পবিত্র ভূমিতে সফর করা। আমি বিশ্বাস করি,দ্বীন ইসলামের প্রতি হৃদয়ে দরদ তৈরী করতে, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য নবীজীর ত্যাগ ও কুরবানি বাস্তবে উপলব্ধি করতে মক্কা মদীনার সফরের বিকল্প হতে পারেনা। েআল্লাহ তায়ালা সকল মুমিন-মুসলমানকে হারামাইন শারীফাইনের জিয়ারতের জন্য কবুল করুন। যাদের নসীব হয়েছে তাদেরকে বারবার জিয়ারতের সুযোগ করে দিন। আমীন।