রহমত ডেস্ক 16 May, 2022 06:05 PM
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-এ মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে “গণ কমিশন” কর্তৃক প্রকাশিত “বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন” শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রসঙ্গে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (১৬ মে) সোমবার, বেলা ১২ টায় রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গাজী আতাউর রহমান, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী ও মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, রক্তে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১ তম বছরে এসে দেশের একটি চিহ্নিত মহল কর্তৃক সংঘটিত এবং দেশের সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রশ্রয়প্রাপ্ত একটি “গণনাগরিক অবমাননা“এর ব্যাপারে আলোকপাত করতে এবং নাগরিকদের সন্মান ও মর্যাদা রক্ষায় আমাদের অবস্থান তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আপনারা জানেন বিতর্কিত সংগঠন ঘাদানিক এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত “বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে “গণ কমিশন” নামে একটি কথিত কমিশন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। “বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন” শীর্ষক কথিত শ্বেতপত্রটি গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এর দুইমাস পরে গত ১২ মে দুপুর বারোটায় এই শ্বেতপত্রটি দুদক চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রকাশের সাথে জড়িতদের ভাষ্যমতে এখানে ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদ্রাসা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১৬ জন আলেমের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাদের ভাষ্যমতে ধর্মব্যবসায়ীদের অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এই শ্বেতপত্র জনসাধারণে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে এই বিষয়ে আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে তাদের মিডিয়ায় ব্রিফিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপরে। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হত এবং তাদের সৎসাহস থাকত তাহলে উপস্থাপিত শ্বেতপত্র জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দিতে পারতো। অন্তত যাদের ব্যাপারে তারা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তাদেরকে প্রতিবেদন পাঠাতে পারতো। কথিত শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের একধরণের রাখঢাক-লুকোচুরি ও মিডিয়াবাজী প্রমাণ করে যে, তারা সারবত্তাহীন অভিযোগ পত্র নিয়ে নাগরিকদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। তাদের কথিত শ্বেতপত্রে প্রধানত লক্ষ বানানো হয়েছে জনসম্পৃক্ত উলামাদেরকে। যারা দেশব্যাপী ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। ওয়াজ হলো, জনসাধারণের চরিত্র ও ধারণ ক্ষমতা অনুসারে ইসলামের নির্দেশনা এবং পরকালের শাস্তি ও প্রাপ্তি নিয়ে এক ধরনের আলোচনা। ওয়াজ কোন একাডেমিক আলোচনা নয়। ওয়াজ বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি। এদেশে ইসলাম এসেছে সুফি, দরবেশ ও পীর-মাশায়েখদের মাধ্যমে। তারা প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। সেই তখন থেকেই বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, পাড়া-মহল্লায় প্রতি বছর অন্তত একবার সম্মিলিতভাবে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। বাংলার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি এটা। এটা বাঙালি মুসলমানের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য গ্রামে-গঞ্জে ঐক্য সৃষ্টি করেছে, সমাজবদ্ধতা তৈরি করেছে। এলাকার তরুণদের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করছে। একই সাথে ওয়াজের মাধ্যমে সমাজে পরকীয়া, ধর্ষণ, নারীবিদ্বেষ, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি ইত্যাদি অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে। আজকে যারা এই ওয়াজের বিরুদ্ধে বানোয়াট শ্বেতপত্র নাটক করছে, তারা আদতে মুসলিম বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধ শক্তি। এরা বাঙালি মুসলমানের স্বতঃস্ফূর্ত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বাইরে থেকে আমদানিকৃত সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, ওয়াজ করা ও মানুষকে সৎপথের দিকে আহবান করা উলামাদের শরয়ী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে উলামাদের একনিষ্ঠতা, নিরবচ্ছিন্নতা, স্বার্থহীনতা, কল্যাণকামিতা এবং মানুষের চরিত্র, ভাষা ও মনস্তত্ব বুঝে আকর্ষণীয়পন্থায় ওয়াজ উপস্থাপনের দক্ষতার কারণে কোটি-কোটি মানুষ উলামাদের বক্তব্য শোনেন। তাদের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা রাখেন। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। শীতের মৌসুম জুড়ে প্রতিরাতে দেশের প্রান্তে প্রান্তে হাজার হাজার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। একটি মৌসুমে দেশের প্রায় ৬৮০০০ গ্রামের প্রায় প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি করে বা কোন কোন গ্রামে একাধিক মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই যে কোটি কোটি মানুষের উদ্যোগ-আয়োজন, উৎসাহ, আগ্রহ ও ভালোবাসা তাকে ধর্মব্যবসা বলে অবহিত করা দেশের কোটি কোটি নাগরিকের সাথে ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। কতিপয় শহুরে বিদ্বেষজীবিরা বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক প্রবণতাকে হেয় প্রতিপন্ন করার এই দুঃসাহসে আমরা অবাক হই। অবশ্য তাদের সমাজ বিচ্ছিন্নতা, বিদেশনির্ভরতা ও স্বার্থান্বেষী চরিত্র বিবেচনায় এটাই হয়তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার কারণে উলামাগণ সমাজ কেন্দ্রিক এবং সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তারা বস্তুবাদী প্রাপ্তিকে সাধারণভাবে এড়িয়ে চলেন। সাধারণত উলামাদের আর্থিক সম্পৃক্ততা কম। তাদের সহজ-সরল জীবনে দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি ইত্যাদির ধারণা অনুপস্থিত। ফলে উলামাদেরকে আর্থিক লেনদেনের বিষয়কে তদন্তের বিষয় বানানো ঘৃণ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপকর্ম ছাড়া কিছু নয়। প্রসঙ্গত: কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা অবশ্য রয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক ভিন্ন চরিত্র ধারণকারী উলামদেরকে একই বর্গে অভিহিত করা বিদ্বেষপ্রসূত অসততা।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা নিয়ে এক শ্রেণীর এলার্জি নতুন কিছু নয়। কিন্তু মাদ্রাসাসমূহের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ অতিতে কখনো প্রমাণ করতে পারেনি। আলোচিত শ্বেতপত্রে তারা নাকি ১০০০ মাদ্রাসার উপরে তদন্ত করেছে। আমরা চাই এই তদন্ত প্রতিবেদন জনসাধারণে উপস্থাপন করা হোক। তাহলে দেখা যাবে, মাদ্রাসাগুলো কত অল্প খরচে সততার সাথে হাজারো শিক্ষার্থীর দায়িত্বভার বহন করে চলছে। দেখা যাবে কতটা স্বচ্ছতার সাথে মাদ্রাসাগুলো সোশ্যাল সেফটিনেটের কাজ করে যাচ্ছে। দেখা যাবে কতটা অল্প বাজেটে কত বেশি মানুষকে কার্যকরভাবে সেবা দেওয়া যায় তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। কওমি মাদ্রাসা নিয়ে এলার্জিগ্রস্থ গোষ্ঠীকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তাদের অসততা, মিথ্যাচার, হিংস্রতা, বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা ও একচোখা দাজ্জালীয় দৃষ্টিভঙ্গি বারংবার প্রমাণিত। ঘাদানিক “গণ কমিশন“ গঠন করে সম্মানিত নাগরিক ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের উপরে তদন্ত করেছে বলে দাবি করছে। বিষয়টি লক্ষণীয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ২৭ মতে দেশের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকারী। ধারা ৩২ মতে কোন নাগরিককে জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ধারা ৪৩ মতে প্রত্যেক নাগরিক তল্লাশি থেকে ও যোগাযোগ মাধ্যমের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারী। এই ধারাসমূহ ও সংবিধানের ৩য়ভাগে ধারা ২৬ থেকে ধারা ৪৭ এ বর্ণিত মৌলিক অধিকার অংশের মূল বক্তব্য হলো, নাগরিকের স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে রাষ্ট্র বাধ্য। সংবিধানের দাবীমতে, দেশের কোনো নাগরিক অন্য কোনো নাগরিকের উপরে অনুসন্ধান, গোয়েন্দাগিরি ও তদন্ত করতে পারে না। তাদের কার্যক্রমের নাম তারা দিয়েছে “তদন্ত“। কিন্তু তদন্ত সংক্রান্ত কোড অফ দ্যা ক্রিমিনাল প্রসিডিউর- (১৮৯৮) এর ধারা ৪ এর ১ উপধারা অনুসারে তদন্ত করার জন্য কোন অথরাইজ ব্যক্তি প্রয়োজন। এই বিবেচনায় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও তুরিন আফরোজ গং যা করেছেন তা আমাদের সংবিধানের মৌলিক ধারণার স্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সাথে তারা কোনো অথরাইজড পারসন বা সংস্থা না হয়েও “তদন্ত প্রতিবেদন“ শিরোনামে কিছু প্রকাশ করার মাধ্যমে আইনগত অনধিকার চর্চা করেছেন; যা নৈতিক ও সামাজিক অপরাধ এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। আদতে তাদের এই শ্বেতপত্র প্রকাশ সংবিধানবিরোধী। নাগরিকের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মানবিক মর্যাদা নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা। এই কথিত কমিশনের তদন্ত ও শ্বেতপত্রের নৈতিক ও আইনত কোন ভিত্তি নাই। বরং এটা সংবিধান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ।
মাওলানা ফয়েজী বলেন, কথিত শ্বেতপত্রের প্রধান উপজীব্য করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে এবং সে জন্য দায়ী করা হয়েছে উলামায়ে কেরামকে। এখানে বিবেচ্য বিষয় দুটি। এক. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা আসলেই বিরাজমান কিনা এবং দুই. সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নামে যা দেখানো হয় তাতে আদৌ ধর্মের কোন সংযোগ আছে কিনা এবং ওলামায়কেরাম সেখানে কোন ধরনের ভূমিকা পালন করেন? সত্যনিষ্ঠ যে কেউ স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব নেই। এখানে হাজার বছর ধরে মন্দির-মসজিদ একসাথে অবস্থান করছে। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের ধর্ম-কর্ম পাশাপাশি পালিত হয়। এখানে এটা চিরসত্য। হ্যাঁ, কালে-ভাদ্রে সম্প্রদায়কেন্দ্রীক কিছু অশান্তি দেখা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সত্য হলো, এর প্রতিটিতে স্থানীয় রাজনীতি, ভূমি ও স্বার্থের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংঘাতকে ধর্মীয় চেহারা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী যে, প্রতিটি ঘটনায় উলামা কেরাম বরাবরই শান্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এসব সর্বজনস্বীকৃত। দেশের সরকার, সত্যনিষ্ঠ মিডিয়া এমনকি বিশ্বশক্তিসমূহও এ ব্যাপারে একমত। তারপরও চিহ্নিত কিছু গোষ্ঠী কৃত্রিমভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে দেশের প্রধান ইস্যু করে তোলে। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করতে চায়। বৈশ্বিক হানাদারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। আলোচ্য শ্বেতপত্রটি তারই একটি বর্ধিত অংশ বলে আমরা মনে করছি। আমরা ব্যক্তিকে নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। কিন্তু কথিত শ্বেতপত্রের সাথে জড়িত প্রধান দুইজনের একজন হলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বিচার বিভাগের সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন। জাতীয় সংসদে তাকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছে এই সরকারের এমপিরাই। তাকে একজন সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান স্যাডিস্ট বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখার মত বিচারিক অনৈতিকতার সাথে জড়িত। বিমানের বিজনেস ক্লাস না পাওয়া নিয়ে তুলকালাম করা, অবসরে যাওয়ার পরেও সরকারি বাড়ি দখল করে রাখার মত বেআইনি, অনৈতিক ও নিন্ম রুচির কাজ তিনি করেছেন। তিনি নৈতিকতার চূড়ান্ত বলি দিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অপরজন তুরিন আফরোজ এ সরকারের আমলেই অসদাচরণ এবং শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অপসারিত হয়েছেন। কতটা দুর্নীতিপরায়ণ ও অসৎ মানসিকতার লোক হলে নিজের সহকারীকে স্বামীর পরিচয় দিয়ে বোরখা পড়ে হোটেলের নির্জন কক্ষে আসামির সাথে গোপন বৈঠক করা যায়! তুরিন আফরোজ সেটা করেছেন। এমন দুজন অনৈতিক ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তির নেতৃত্বে দেশের কোটি মানুষের সন্মানীয় ব্যক্তিবর্গের মানহানিকর শ্বেতপত্র প্রকাশ করার ঘটনায় আমরা বিস্মিত এবং মানুষ কত নির্লজ্জ হতে পারে তা বিবেচনায় আমরাই লজ্জা বোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, ঘাদানিক এত আয়োজন করে বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ঘাদানিককে অর্থায়ন করে কারা? কোন স্বার্থে কোন শক্তি ঘাদানিক পোষে? ঘাদানিকের আয়-ব্যয়ের হিসাব কি কোথাও প্রকাশিত হয়েছে বা আদৌ কি তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জনতা জানে? এ প্রশ্নের জবাব ঘাদানিককে দিতে হবে। ঘাদানিক প্রজাতন্ত্রের মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশের এসপিদের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে বলে জোর গলায় বলে আসছে। আমরা জানি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বা কোন তদন্ত করতে হলে রাষ্ট্রীয় অনুমতি প্রয়োজন হয়। প্রশ্ন হল, ঘাদানিক কি আদৌ কোন অনুমতি নিয়েছে? যদি নেয় তাহলে তারা সেই অনুমতি পায় কি করে? আর যদি অনুমতি না নিয়ে থাকে তাহলে কোন সাহসে তারা রাষ্ট্রীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নজরদারি ও তদন্ত করে, তা আমরা জানতে চাই। ঘাদানিকের এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়, প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ইত্যাদি বিবেচনায় আমরা এটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছি। আমরা দেখে আসছি বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই একটি গোষ্ঠী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করে এবং বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করার অপচেষ্টা চালায়। আমরা ঘাদানিকের এই প্রচেষ্টাকে তারই একটি বর্ধিত অংশ আকারে বিবেচনা করছি। আমরা বিস্মিতবোধ করছি যে, এ রকম একটা অনৈতিক ও আইনি ভিত্তিহীন প্রতিবেদন যেখানে দেশের সন্মানীয় নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের মানহানি করা হয়েছে, তা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোড়ক উন্মোচন করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এমন একটা অসাংবিধানিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী একটা প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। কেউ এর আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি, ইখতেয়ার নিয়ে প্রশ্ন করছেন না। এটা আমাদেরকে হতবাক করেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সর্বধারার ওলামায়ে কেরাম ও নাগরিক সমাজের পক্ষে আমাদের দাবী সমূহ:
১. যারা কথিত শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে দেশের সম্মানিত আলেমদের সম্মানহানি করেছে, আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, দেশবাসীর সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে; তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।২. যারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের কার্যক্রমকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের গতিবিধিকে গোয়েন্দা নজরদারীর আওতায় আনতে হবে।
৩. যারা মাঠ প্রশাসনের এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে উদ্দেশ্যমূলক অবৈধ তৎপরতা চালিয়েছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৪. দেশের সম্মানিত আলেমদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. কারাবন্দী সকল মজলুম আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
৬. ওয়াজ মাহফিল নিছক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল সকল প্রশাসনিক বিধি নিষেধের আওতামুক্ত রাখতে হবে।
৭. সারা দেশের আলেম ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে সকল প্রকার হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
৮. আল্লাহ, রাসূল (স.), ধর্মীয়-রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা ঘাদানিকের প্রতিবেদনের পূর্ণরূপ হাতে পেয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক, আইনগত ও সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় : কর্মসূচি- ১. নাগরিক মতবিনিময়- ২৮ মে শনিবার ২. ওলামা সম্মেলন- ২ জুন বুধবার ওলামা সম্মেলন থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।