রহমত ডেস্ক 03 May, 2022 11:57 AM
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতী আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় হিজরীতে প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। একই হিজরীর শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হয় এবং সদকায়ে ফিতর, ঈদুল আযহার নামাজ ও কুরবানি ওয়াজিব হয়। ঈদ আরবি শব্দ। যার অর্থ আনন্দ, উৎসব, পুনরাগমন, পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে ঈদের পুনরাগমন হয় বলে ইহাকে ঈদ বলা হয়। পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মে আনন্দ উদযাপনের নির্ধারিত দিন আছে। সেভাবে মদিনাবাসীও নওরোজ এবং মিহিরজান নামে বছরে দুটি নির্দিষ্ট দিনে আমোদ ফুর্তিতে মেতে ওঠতো। তবে এই দুটি দিনে মদিনাবাসী যে অনুষ্ঠান করতো তা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ছিল। আজ (৩ মে) মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাউনিয়াবাদ ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতী আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এই দিনে তোমাদের আনন্দ উৎসবের কারণ কি? মদিনার নবমুসলিম সাহাবাগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম উত্তর দিলেন, জাহেলি যুগে আমরা এই দিন দুটিতে এভাবে আনন্দ উৎসব করতাম। যা আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে প্রচলিত। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করেন "আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এই দুটি দিনের পরিবর্তে আনন্দ উৎসবের জন্য উত্তম অন্য দুটি দিন নির্ধারণ করেছেন। একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আযহা। (বুখারী)। এই হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, মুসলমানের ঈদ আনন্দ হতে হবে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায়। যাতে গোনাহের লেশমাত্র থাকবে না। ভিন্ন সংস্কৃতির আবহে নাচ-গান, হৈ হুল্লোড় করা মুসলমানের ঈদ আনন্দের উপকরণ হতে পারে না। এগুলো নিছক নফসানি ও শয়তানি কাজ যা কোন অবস্থাতেই একজন মুমিন করতে পারে না। ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এই শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখি। এ রোজার ফজীলত অনেক। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের সব রোজা রেখে অতঃপর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল।’ (মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, আজ ‘আল্লাহু আকবার’ এর প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদেরকে কল্যাণকর বিধান দিয়ে তা পালন করার তৌফিক যে দিয়েছেন, সেজন্য আল্লাহর শোকরগোযারী করে তাঁর মহত্ব ও বড়ত্ব বর্ণনা করাই হল ঈদুল ফিতরের অন্যতম তাৎপর্য। ঈদুল ফিতর উদযাপনের পুরো বিষয়টিই ‘আল্লাহু আকবার’ এর চেতনা ও মর্মবাণীকে প্রকাশিত করে। এজন্য মৌখিকভাবেও ‘আল্লাহু আকবার’ বলা এদিনের একটি বিশেষ আমল। সাহাবায়ে কেরাম রা. ও সালাফে সালেহীন ঈদের রাতে ও ঈদের সকালে তাকবীর পাঠ করতেন। আজকে ঈদগাহে আসা যাওয়ার সময়ও নিম্নস্বরে তাকবীর বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর এবং ঈদের খুতবার তাকবীরগুলো ঈদুল ফিতরের অনন্য স্বকীয়তা ফুটিয়ে তোলে। ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে পৃথিবীর সকল মিথ্যা বড়ত্বের দাবিদারকে পরিত্যাগ করে লা-শরীক আল্লাহর বড়ত্বকে স্বীকার করে নেয়াই মুমিনের ঈমানের দাবি। তাই আসুন, এই দিনে আমরা আল্লাহু আকবারের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে সকল মিথ্যা ‘ইলাহ’র দাসত্ব পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্যে সমর্পিত হই। আল্লাহর মুহাববত ও আল্লাহ-নির্ভরতাই হোক আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্বল ও পরিচয়। এছাড়া আজকের এই দিনে আনন্দ উপভোগের সময় আমরা যেন আমাদের পার্শ্ববর্তী গরীব অসহায় এতই মানুষের কথা ভুলে না যাই। তাদের মুখেও যেন একটুখানি আনন্দের হাসি ফুটে উঠতে পারে, খুরমা-ফিরনীর একটুখানি আয়োজন যেন তার ঘরেও হয়, এ ব্যাপারে যত্নবান হই ও ফিকির করি। সদকায়ে ফিতর বিধিবদ্ধ হওয়ার অন্যতম কারণও এটা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।