মূল পাতা আন্তর্জাতিক ঈদের মাঠে মার্কিন রাজনীতিবিদদের মুখে মুসলমানদের প্রশংসা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 03 May, 2022 09:07 PM
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ঈদ জামাতে উপস্থিত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন রাজনীতিবিদরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আজ মুসলিমদের জন্য গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুসলিম আমেরিকানরা আমাদের দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন। তারা যে আমেরিকা তৈরিতে সহায়তা করছেন, মুসলমানরা নিজেরাও সেই আমেরিকার মতোই বিচিত্র ও প্রাণবন্ত। আমেরিকান মুসলিমরা আমাদের কোভিড-১৯ মোকাবেলা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন এবং সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ের মালিক হিসেবে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, প্রথম সাড়াদানকারী হিসেবে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষাদান করছেন, নিবেদিত সরকারি কর্মচারি হিসেবে দেশজুড়ে কাজ করছেন এবং জাতিগত সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের চলমান সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি পরিচালিত মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, পার্কের মাঠে ও গির্জার মিলনায়তনে ঈদের জামাতে অংশ নেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। যেসব এলাকায় মসজিদ নেই সেসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গির্জার মিনলায়তনেই জুমা ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আনন্দঘন পরিবেশে দেশীয় আমেজে উদযাপন করেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন পাঁচ শতাধিক মসজিদ বা তৎসংলগ্ন মাঠে ঈদ জামাতগুলো শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকদের পরিচালনাধীন মসজিদেও পালা করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা পর্যন্ত। ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শতাধিক ঈদগাহ মাঠে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন মার্কিন সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, কংগ্রেসওমেন, গভর্ণর, সিটি মেয়র ও কাউন্সিলম্যান।
নিউ ইয়র্কের পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য কানেকটিকাটের গভর্ণর নেড ল্যামন্ট সোমবার (২ মে) সকালে হার্টফোর্ডের এক্সএল সেন্টারের ঈদুল ফিতরের বিশাল জামাতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। তিনি উপস্থিত মুসলিমদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুধু কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যেই নয়, গোটা যুক্তরাষ্ট্র আজ মুসলিমদের জন্য গর্বিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বস্তরেই মুসলিমরা দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন। মুসলিমরা নিজেরাও সেই আমেরিকার মতোই বিচিত্র ও প্রাণবন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ সহস্রাধিক মুসল্লির অংশ গ্রহণে উক্ত জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তরুণ ইমাম খায়রুল আলম (নোয়েল)। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শতাধিক ঈদগাহ মাঠে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়ে মার্কিন রাজনীতিবিদরা বলেন, এখনো মুসলিম আমেরিকানরা গালাগালি, অন্যায় ও ঘৃণার মতো অপরাধের শিকার হচ্ছেন। (তাদের সম্পর্কে) এই ধরনের পূর্ব-ধারণা এবং তাদের উপর আক্রমণ করা ভুল (কাজ)। যা অগ্রহণযোগ্য। এবং এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। আমেরিকাতে কারো নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করার ভয় থাকা উচিত নয় এবং আমার প্রশাসন সকল মানুষের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করবে।
নিউ ইয়র্ক ঈদগাহর উদ্যোগে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হয়। সকাল সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পাঁচটি ঈদের জামাত জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য নামাজের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। ২০১১ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক ঈদগাহে প্রতিবছর ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গত দুই বছর করোনার কারণে ডাইভারসিটি প্লাজায় ঈদের নামাজ হয়নি। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল ও বাংলাদেশি অধুষ্যিত নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, পেনসিলভানিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, ইলিনয়স, কলারাডো, ডেলাওয়ার, জর্জিয়া, কানসাস, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, সাউথ ক্যারোলিনা, ওয়াশিংটন ডিসি ও কেন্টাকির প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হয়ে মার্কিন রাজনীতিবিদরা মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ও পরেই অবস্থান করছে ইয়াহুদীরা। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩.৪৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১.১ ভাগ।