ইসলাম ডেস্ক 22 April, 2022 09:07 PM
শবে কদরে আল কুরআন নাজিলের সূচনা হয়। আর এ জন্য এ রাতের সম্মান অধিক বেড়েছে। অন্যদিকে বান্দার বিগত এক বছরের কৃতকর্মের হিসাব করে মহান আল্লাহপাক পরবর্তী বছরের ভাগ্য পুননির্ধারণ চূড়ান্ত করেন বলেও এ রাতের মর্তবা অনেক। তাছাড়া এ রাতের ইবাদতকে মহান আল্লাহ তায়ালা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি তাকে নাজিল করেছি শবেকদরে। মহিমান্বিত রাত্রি সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? শবেকদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয়, তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এটা শান্তিই শান্তি, যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে”(সূরা কদর : ১-৫)। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, শবে কদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়” (বুখারি)।
লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ‘লাইলাতুন’ অর্থ রাত্রি। শব ফার্সি শব্দ, এর অর্থও রাত্রি। কদর শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, সমাদর, খাতির। আরেক অর্থ ভাগ্য, পরিমাণ ও তকদীর নির্ধারণ। রমজান মাসের শেষ দশদিনের যে কোনো বেজোড় রাত্রে, ‘শবেকদর’ ঘটে। এ রাতে মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুননির্ধারণ করা হয়। লাইলাতুল কদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী আল্লাহ তায়ালার প্রশাসনের দায়িত্বে নিয়োজিত (আল্লাহর) সৈনিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক সব কিছু নির্দিষ্ট ফেরেশতাদেরকে লিখে দেয়া হয়। এমনকি কে হজ করবে, তাও লিখে দেওয়া হয়।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা মতে, শবে কদরে আল্লাহ এক বছরের জন্য বান্দার রুজি-রিজিক, হায়াত মউত ও অন্যান্য তকদীরি ব্যাপারে সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ও রুজি-রিজিক প্রভৃতি সরবরাহের দায়িত্ব আল্লাহ ফেরেশতাদের দিয়ে দেন” (কুরতুবী)। আরও বর্ণিত হয়েছে-হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও যাহহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ সালাফে সালেহীনের এক জামাত এ মত পোষণ করেছেন যে, শবেকদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফয়সালা জানানো হয় যা পরবর্তী শবেকদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হয়। যেমন- এ বছর কারা কারা জন্ম নেবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কী পরিমাণ রিজিক দেয়া হবে ইত্যাদি” (তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৪/১৪৫)। আল্লাহ ঘোষণা করেন, “হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) এক বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারি। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়” (সূরা দুখান : ১-৪)।
কাজেই মুক্তি অন্বেষণকারী প্রত্যেককে এ রাতের বিশেষ এই মুহূর্তটির খবর রাখা দরকার। যারা এলমে তাসাওফের বিদ্যায় বিদ্যান নন, তারা নিজেদের পরবর্তী এক বছরের তকদীর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নন। যে সকল তরিকতপন্থি সাধকের মাঝে এলহাম, কাশফ ও ফায়েজের হালত রয়েছে তারা কদরের রাতের সেই মুহূর্তটি বুঝতে কিংবা প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হন এবং নিজের জীবনে কদর ঘটাতে পারেন। শবে কদরের রজনী রমজানের শেষ দশদিনের যে কোন বেজোড় রাত তা নিয়ে মতপার্থক্য নেই। তাই যে ব্যক্তি তা খোঁজ করতে চায়, সে যেন শেষ পাঁচ রাতেই তা খোঁজ করে (বুখারী)।
ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু রেওয়ায়েত করেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের পাঁচ বিজোড় রাতে শবে কদরের অনুসন্ধান কর” (মুসলীম শরীফ)। অতএব ২৬ রমযান দিবাগত রাতই হচ্ছে পবিত্র শব-ই কদর। শবে কদরের ইবাদত মানবজীবনের পাপমুক্তি ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য অপরিসীম কল্যাণকর। এ রাতে নফল নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার করা, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা, দরূদ ও মিলাদ শরীফ পাঠ করা, দান-সদকা করা, পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ি, পীর-মোর্শেদের রওজা জেয়ারত করা, অধিক সময় মোরাকাবা করা শ্রেয়। আল্লাহ অধিক ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কদর পাওয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।