রহমত ডেস্ক 07 April, 2022 08:13 PM
সংসদে উত্থাপিত ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি শর্তাবলী) আইন ২০২২’ প্রত্যাখ্যান করে, এ আইন সাংবাদিকদের মান-মর্যাদা, স্বার্থ ও অধিকার কেড়ে নেবে। আইনটির অধিকাংশ ধারা, উপধারা সাংবাদিকদের আর্থিক ও চাকরির নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রস্তাবিত আইন বাতিল করে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সকল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে সাংবাদিকবান্ধব আইন প্রণয়নের আহবান।
আজ (৭ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইইজে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এসব কথা বলা হয়। বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে এবং ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু ও বিএফইউজে কাউন্সিলর এইচ এম আল-আমীনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সিনিয়র সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য একেএম মোহসীন, সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি কায়কোবাদ মিলন, বিএফইউজের প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান. মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও বিএফইউজে নেতা জাকির হোসেন, ডিইউজে’র জনকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা প্রমুখ।
শওকত মাহমুদ বলেন, এটি কালো আইন। বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ এ ধরনের কালো আইন মানবে না। এই আইন শ্রম আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমি শ্রমিক হিসেবে শ্রম আইনের আওতায় সেসব সুবিধা পেতাম, এই আইনে সেগুলোর অনেক কিছু থাকবে না। ইউনিয়ন করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রত্যেক পত্রিকা অফিসে শ্রমিক মালিক সমিতি করা হবে। তাও মালিকদের সুবিধা মতো। যাতে কোনো সমস্যা হলে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। আজ এই আইনটি করা হচ্ছে- ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকার সংবাদিকদের মেনে নিতে না পারার কারণে। আওয়ামী লীগ মনে করে সংবাদপত্র মানেই তাদের জম। তাই তারা সাংবাদিকদের বাধার মুখেও এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। সরকার নির্বাচনের আগে নতুন নতুন আইন করে সাংবাদিকের থামিয়ে রাখতে এসব আইন করছে। আমরা এই আইন মানি না।এই আইনের অধীনে চলতে পারবো না। আমরা শ্রমআইন মেনে চলতে চাই। সাংবাদিক পরিচয় নষ্ট করতে চাই না।
সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, সাংবাদিক সমাজের মান-মর্যাদা এবং চাকুরি ও আর্থিক নিরাপত্তা বিপন্নকারী প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী আইন আমরা মানি না। আজকের বিক্ষোভ সমাবেশ এ আইন প্রত্যাখান করছে। এ আইনের প্রতিটি ধারা-উপধারায় সাংবাদিকদের আর্থিক সুবিধা কমিয়ে চাকুরিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনকে এক শ্রেণীর ‘নিপীড়ক মালিকের স্বার্থ সুরক্ষা আইন’ হিসেবে বর্ণনা করেন, এ আইন সংসদ থেকে প্রত্যাহার করে সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিত্বশলীল সব সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী আইন সংশোধনের যে আশ্বাস দিয়েছেন তা ভাওতাবাজি অতীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করা হয়নি।
নুরুল আমিন রোকন বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে নিজেদের পরিচয় স্পষ্ট করেছে। তারা আবারও সেই খেলায় নেমেছে। গণমাধ্যম কর্মী আইনের একটি বারও সাংবাদিক শব্দটি নেই । এটা সাংবাদিকদের কল্যাণের পরিবর্তে নানামুখী সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেবে। এই আইন পাশের চেষ্টা সাংবাদিক সমাজ সফল হতে দেবে না।
ইলিয়াস খান বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার বাংলাদেশ কোন স্বাধীন সাংবাদিকতা দেখতে চায় না। সাংবাদিকদের শত্রু সরকার হিসেবে তারা বার বার প্রমান করেছে। গণমাধ্যম কর্মী আইন সাংবাদিকদের স্বার্থপরিপন্থী আরেকটি কালাকানুন। এ আইন কার্যকর হলে সাংবাদিকরা এখন যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তার অনেকটাই কমে যাবে।