| |
               

মূল পাতা ইসলাম ইসলামে স্বাধীনতার সীমারেখা


ইসলামে স্বাধীনতার সীমারেখা


মুহাম্মাদ আবু আখতার     26 March, 2022     12:54 PM    


স্বাধীনতা সকলের অতি প্রিয়৷ সকলেই স্বাধীনতাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে৷ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মানুষ যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে৷ পরাধীনতাকে কেউ পছন্দ করে না৷ সকলেই চায় মুক্ত স্বাধীন জীবন। তবে এ দুনিয়াতে কোন মানুষের অবাধ স্বাধীনতা নেই। কেউ যা খুশি তাই করতে পারে না। প্রত্যেকের স্বাধীনতার সীমারেখা আছে৷ সে সীমারেখা বজায় রেখেই তাকে চলতে হয়। কেউ তার স্বাধীনতার সীমারেখা লঙ্ঘন করে কোন কাজ করলে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার অধিকারী৷ তিনি যখন যা ইচ্ছা তাই করতে সক্ষম৷ আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, "বলুন হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।" (সুরা আলি ইমরানঃ ২৬)

আল্লাহ তায়ালা যাকে যতটুকু স্বাধীনতা দিয়েছেন সে ততটুকু স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে৷ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ভালো ও মন্দ উভয় কাজের সীমিত স্বাধীনতা দান করেছেন৷ আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, "যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।" (সুরা মুলকঃ ২)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ভালো মন্দ উভয় পথ প্রদর্শন করেছেন৷ কেউ তার সীমিত স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করে ভালোকাজ করে৷ আবার কেউ এ স্বাধীনতার অপব্যবহার করে মন্দ কাজ করে৷  আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।" (সুরা দাহরঃ ৩)

ইসলাম মানুষের এ সীমিত স্বাধীনতার বৈধ সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ সকল ধরণের ভালো কাজে ইসলাম মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছে। কেউ কোন নেক কাজ করলে সে কাজে বাঁধা দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বিরাট অন্যায়। পক্ষান্তরে সকল ধরণের অবৈধ কাজ হতে বিরত থাকার ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। কাউকে অন্যায়ে লিপ্ত থাকতে দেখলে অন্যদের জন্য সাধ্যানুযায়ী তাকে বাঁধা দেয়া কর্তব্য। প্রকৃত মু'মিন আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুমের বিপরীত কোন কাজ করার অধিকার ও স্বাধীনতা দাবি করতে পারে না৷ আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন-
"আল্লাহ ও তার রাসুল কোন বিষয়ে হুকুম করলে কোন মু'মিন পুরুষ ও নারীর সেই হুকুমের বিপরীত কাজ করার কোন স্বাধীনতা থাকে না৷ আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে৷ (সূরা আহযাব: আয়াত নং ৩৬)

বর্তমানে অনেক নামধারী মুসলমান স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আল্লাহ তায়ালার অনেক হুকুমের বিরোধিতা করছে৷ যেমন: ব্যক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের হুকুমের বিরোধিতা করে নফসের গোলামী করছে৷ নারী স্বাধীনতার নামে আল্লাহর ফরজ হুকুম পর্দার বিরুদ্ধাচারণ করছে৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতার নামে সুদ,ঘুষ,দূর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার অবাধ প্রসার করছে৷  এছাড়া মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার নামে প্রকাশ্যে ইসলামের অনেক বিধানের বিরোধিতা করছে৷ উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী এরা সত্যিকার মুমিন হতে পারে না৷ বরং এরা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে রয়েছে৷ আল্লাহ তায়ালা এদেরকে দুনিয়াতে অস্থায়ীভাবে সীমিত স্বাধীনতা দিয়েছেন৷ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যাবে৷ এরপরই তারা আল্লাহ তায়ালার কঠিন আজাবে পাঁকড়াও হবে৷

প্রকৃত মুমিনগণ নিজেদেরকে আল্লাহ তায়ালার গোলাম মনে করে৷ তাই তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধচারণ করার অধিকার ও স্বাধীনতা দাবি করতে পারে না৷ বরং আল্লাহ ও তার রাসুলের হুকুমের সীমারেখার মধ্যে থেকে এ দুনিয়াতে যতটুকু স্বাধীনতা পাওয়া যায় তাতেই তারা সন্তুষ্ট থাকে৷ এর বিনিময়ে তারা জান্নাতে অনন্তকাল পর্যন্ত অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করবে যে স্বাধীনতা দুনিয়াতে লাভ করা কখনো সম্ভব নয়৷ জান্নাতীগণ জান্নাতে লাভ করবে মুক্ত বাধাহীন স্বাধীন জীবন৷ আর জান্নাতের সে চিরস্থায়ী জীবনের স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা৷ সেখানে তারা  যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে৷  যা চাইবে তাই পাবে৷ সেখানে কোন বাঁধা-নিষেধ থাকবে না৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন, "স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে। সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে চিরস্থায়ী।" (সুরা যুখরুফঃ৭১) তিনি আরো বলেন, "সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা তারা চাইবে।" (সুরা ইয়াসীনঃ৫৭) আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাদের চাহিদার চেয়েও অতিরিক্ত দান করবেন৷ এ সম্পর্কে বলেন, "তারা সেখানে যা চাইবে, তাই পাবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরও অধিক।" (সুরা কাফঃ ৩৫)