রহমত ডেস্ক 18 March, 2022 08:57 PM
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে ২০ মার্চ (রবিবার) থেকে এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের কাছে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি পণ্য বিক্রয় করা হবে। এ লক্ষ্যে সাবির্ক প্রস্তুতি শেষ করেছে টিসিবি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা প্রাথমিকভাবে এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ। আগামী রবিবার ঢাকা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বাদে প্রায় ৮৭ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে এ পণ্য দেব। রংপুর থেকে শুরু হবে এ কার্যক্রম, সারাদেশে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকা ও বরিশালে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আজ (১৮ মার্চ) শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারের সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে, দেখি আর কোন কোন মুরগির দাম বাড়ে। বিষয় হলো, প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ে, আবার কমে। এখন গুগলের সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের দাম কত। তাই ব্রাজিলে তেলের দাম বাড়ার কারণে যদি আমাকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে সমস্যা নেই। দাম বাড়ে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। তেলের দাম বিশ্ব বাজারে বেড়েছে। আগে আমদানির সময় তেলের একটা কন্টেইনারের ভাড়া যেখানে দুই থেকে আড়াই হাজার ডলার লাগতো, এখন তা বেড়ে ১০ হাজার ডলারে উঠেছে। বিশ্ব বাজারে যদি তেলের দাম বেড়ে যায় তাহলে আমাদের কন্ট্রোল করা সম্ভব না। আমাদের নিয়ন্ত্রণে যতটুক আছে আমরা চেষ্টা করছি বাজার ঠিক রাখতে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যখন যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কিনতে হবে। একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনলে বাজারে সরবরাহ-চাহিদার ক্ষেত্রে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এতে করে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তার এক সাপ্তাহে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কিনলে বাজারের এ বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় না।
তিনি আরো জানান, টিসিবির এ বিক্রয় কার্যক্রম ১ হাজার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে করা হবে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ২৫০ ফ্যামিলির পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রথমে তিনটি প্রশ্ন দেওয়া হবে এরপর ছোলা ও বিক্রি করা হবে। তবে ৮০ টাকা দরে খেজুর বিক্রি হবে শুধু ঢাকাতে। পাশাপাশি এখন পেঁয়াজ মজুত আছে, ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। টিসিবির পেঁয়াজ ৩০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। পরে বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হবে। একজন ব্যক্তি যেন একাধিকবার পণ্য নিতে না পারে এজন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। টোকেন অথবা আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে নির্ধারণ করা যায় কিনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনলে বাজারে সরবরাহ চাহিদার ক্ষেত্রে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। এতে করে বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তার এক সপ্তাহে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই কিনলে বাজারের এ বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় না। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার জন্য সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এক কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে তেল-চিনি-ডাল পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা শেষ করেছি। একসঙ্গে পণ্যের প্যাকেট পাবেন কার্ডধারীরা। প্রতি প্যাকেটে থাকবে দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫, মসুর ডাল ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ টাকা।
টিসিবি জানায়, দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এর মধ্যে ফ্যামিলি কার্ডের পেয়েছেন, করােনাকালীন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নগদ সহায়তা দেওয়ার যে ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হয় তার মধ্যে ৩০ লাখ পরিবার, সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ৫৭ লাখ ১০ হাজার উপকারভােগী পরিবার। এর বাইরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ১০ হাজার উপকারভােগী রয়েছে। এক কোটি উপকারভােগী পরিবারের মধ্যে টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা হবে। উপকারভােগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনা করা হয়েছে।
আগামী ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১ম পর্বে ১ কোটি উপকারভােগী পরিবার প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় চিনি এবং ৬৫ টাকায় মসুর ডাল বিক্রি হবে। প্রত্যেক পণ্য দুই কেজি পাবে এক পরিবার। দ্বিতীয় পর্যায় ৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩টি পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজিতে ২ কেজি ছােলা বিক্রি হবে। এছাড়া এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন সহযোগিতা থাকবে।
গত ৮ মার্চ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে পণ্য পাঠানো শুরু হয়েছে এবং প্রতিটি জেলায় টিসিবির পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পৌঁছে গেছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর, বিএডিসি ও নির্ধারিত গুদামে টিসিবির পণ্যসমূহ গ্রহণ, প্যাকিং চলছে। ২০ মার্চ থেকে পণ্য বিক্রয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একজন কার্ডধারী ক্রেতা রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে দুই দফা পণ্য পাবেন।