রহমত ডেস্ক 16 March, 2022 05:08 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, সরকার ৯০ শতাংশ মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় আনার লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে নয়, বরং ইউনিয়ন পর্যায়ের ৯০ শতাংশ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাংলাদেশ ভূমিকম্প দুর্যোগ প্রবণ দেশ হবার কারণে এ সময় তিনি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে উদ্যোগী হবার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সময় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারের ব্যবস্থা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি চট্টগ্রাম, অতীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক অফিসের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে থাকলেও ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এগুলো ঢাকা কেন্দ্রিক করে ফেলায় চট্টগ্রাম অবহেলিতই থেকে যায়। তবে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমবার সরকার গঠনের পরই চট্টগ্রাম যেন প্রাণ ফিরে পায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুতে উন্নত হয়। চট্টগ্রামে প্রথম অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। আজকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থারও বিশেষ উন্নতি করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রায় সমাপ্তির পথে, ঢাকা-চ্টগ্রাম হাইওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে -এভাবেই চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নের দিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।
আজ (১৬ মার্চ) মঙ্গলবার চট্টগ্রাম হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজি চট্টগ্রাম ওয়াসা বাস্তবায়িত ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ এর উদ্বোধনকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি’র ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালণায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাণিজ্যিক নগরীই হচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন করা আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলেই মনে করি, কারন চট্টগ্রাম উন্নত হলে সমগ্র বাংলাদেশই উন্নত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানি সবকিছুতেই চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সুপেয় পানির যে সমস্যা তা সমাধানে তিনি সরকার গঠনের পর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেস-২) এর আওতায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় নির্মিত পানি শোধনাগার-২ এর উদ্বোধন হচ্ছে। এরকম আরো কয়েকটি প্রকল্পও তাঁর সরকার করে দিয়েছে। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই চট্টগ্রামের পানি সমস্যা সমাধানে পানি শোধন এবং পাইপলাইনে সরবরাহের বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয় তাঁর সরকার। ’৯৯ সালে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ‘জাইকা’ কর্ণফূলী নদী থেকে পানি শোধন করে চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে ও সমীক্ষা করে এবং ২০১১ সালে ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-১)’ এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। কারণ, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসতে না পারায় এই প্রকল্প ব্যহত হয়। এর পর ২০২০ সালে চট্টগ্রাম শহরের ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা পূরণে মদুনাঘাটে দৈনিক ৯ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উদ্বোধন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর পশ্চিমতীরে কাফকো, সিইউএফএল, কোরিয়ান ইপিজেড, আনোয়ারাস্থ চায়না ইকোনমিক জোন, গড়ে ওঠা শিল্প এলাকাসহ আবাসিক এলাকার পানির চাহিদা মিটাতে দৈনিক ৬ কোটি লিটার সরবরাহ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি সরবরাহ প্রকল্প চলমান রয়েছে। সরকার চট্টগ্রামে পয়ঃনিস্কাশনের জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণকে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দিতে ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ণের পর তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আরও ৫টি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে। বিশেষ করে কর্ণফূলী এবং হালদা ও সাঙ্গু প্রভৃতি নদীগুলো যাতে দূষণ মুক্ত থাকতে পারে সে বিষয়েও জোর দেন। এ সময় প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাঁর সরকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে এগুলো যেন ভালভাবে চলে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান। এখন ঢাকা ওয়াসার দৈনিক ২৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ২৪৫ কোটি লিটার, ঢাকা শহরে এখন আর পানির সমস্যা নেই। সায়েদাবাদ-১ প্রকল্প দিয়ে শুরু এবং ধীরে ধীরে আমরা অনেকগুলো শোধনাগার করেছি। এখন ঢাকা ওয়াসার দৈনিক ২৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ২৪৫ কোটি লিটার। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যাতে সুপেয় পানি পেতে পারে এবং তাঁদের জীবন মান উন্নত করার জন্য তাঁর সরকার পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১শ’ বছর মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার সারা দেশে সুপেয় পানি এবং আধুনিক পয়ঃনিস্কাশন ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি একে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
তচট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ইপিজেড এর পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, মিরেরসরাই, বাঁশখালি, আনোয়ারা, মহেশখালি এবং কক্সবাজার-বিভিন্ন জায়গায় শিল্প নগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির পরে সে এলাকার অর্থনীতিও যথেষ্ট গতিশীলতা পেয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করার ব্যাপারেও তাঁর সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। যাতে ঐ অঞ্চল সুরক্ষিত থাকবে আবার পর্যটনের দিক থেকেও সুবিধা হবে। এই সুন্দর এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে এর সার্বিক উন্নয়নই তাঁর লক্ষ্য। তিনি এ সময় কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজও প্রায় সমাপ্তির পথে জানিয়ে চট্টলার সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন এবং তাঁর সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। আজকের প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীর সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকার সুপেয় পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ যেসব নাগরিক সুবিধাগুলো সৃষ্টি করে দিচ্ছে সেসব জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে যেন সামঞ্জস্য রেখে চলমান থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।