| |
               

মূল পাতা জাতীয় আইন-আদালত আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে নিত্যপণ্যের দাম কখনও লাগামহীন হতো না


আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে নিত্যপণ্যের দাম কখনও লাগামহীন হতো না


রহমত ডেস্ক     14 March, 2022     09:56 PM    


সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের মেশিনারিজগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, তদারক সংস্থা) ৩৬৫ দিনই সচল রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সুন্দর আইন আছে, তদারকি সংস্থা আছে, জনবল আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম কখনও লাগামহীন হতো না। আজ (১৪ মার্চ) সোমবার সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রিটের শুনানিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, ১৪ বছর কারাদণ্ড ও সঙ্গে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। মজুতকারীদের বিরুদ্ধে এই আইন কি প্রয়োগ হচ্ছে? আমাদেরকে জানান।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে। আদালত বলেন, আপনারা দেখান প্রতিযোগিতাবিরোধী জোটকে কীভাবে নিরূপণ করছেন? ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন নেই। প্রতিযোগিতাবিরোধী চুক্তি, কর্তৃত্ব বন্ধ করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রতিযোগিতা আইনের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৫ ধারা উল্লেখ করে আদালত রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এ আইনে এখানে মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসা বন্ধের কথা বলা আছে। সরকার বিধি-নীতিমালা করছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইনের প্রয়োগ নেই। এরকমটা সবসময় হয়ে আসছে। আপনারা যদি কঠোর হতেন তবে বাজার এরকম লাগাম ছাড়া হতো না। আগে থেকে সচেষ্ট থাকলে জনসাধারণের ভোগান্তি হতো না। একচেটিয়া ব্যবসা একটা গ্রুপের কাছে চলে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধ করতে রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) গঠনের কথা আইনে বলা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে আমাদের কাছে (আদালতে) আসতে হতো না। আমরা চাচ্ছি, এগুলো হোক। আমাদের সামনে তো আইন বাস্তবায়নের কোনো উদাহরণ নেই। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা তখন বলেন, সরকার যেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সরকার সক্রিয় আছে। বাজার এরইমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

আদালত প্রশ্ন রাখেন, কবে থেকে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে? সরকারের মেশিনারিজগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তদারক সংস্থা) সক্রিয় থাকলে মজুতকারীরা সাহস পেত না। আইন, সংগঠন সবকিছু আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। মেশিনারিজগুলো সক্রিয় করলে এরা সাহস পাবে না। এর জন্য কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। সেটি নেই। আমরা চাই সরকারের মেশিনারিজগুলো ৩৬৫ দিনই সতর্ক-সোচ্চার থাকুক। এটা (বাজার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ) একদিনের কাজ না। যতটুকু হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের কাজ চলছে। সরকার কাজ করছে। একচেটিয়াভাবে কেউ যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার টাস্কফোর্স গঠনে হাত দিয়েছে। বাজার দর এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বাজারে বাজারে গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে এরকম পরিস্থিতিতে এই রিটে রুল দেওয়া ঠিক হবে না।

হাইকোর্ট বলেন, সরকার খাদ্যপণ্যের বাজার দর ঠিক করে দিচ্ছে। আর একটা গ্রুপ জোটবদ্ধ হয়ে সেসব পণ্য মজুদ করছে। পরে দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়ছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। যারা দুষ্কৃতিকারী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সারা বছর বাজার তদারকি করতে হবে। রোজা এলে তদারকি হবে, এমনটা হলে হবে না। এটা প্রতিদিনের কাজ, প্রতিদিন করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করা চলবে না। পরে রিটকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো খাদ্যপণ্যে দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আপনাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের বিষয় নিয়ে আসা উচিত। আপনার রিট আবেদনের আরজি যথাযথ হয়নি। এটি সংশোধন করে নিয়ে আসেন, কাল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখছি।

গত ৬ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ এ রিট দায়ের করেন। বাণিজ্য সচিব, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে ৩ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন এ তিন আইনজীবী। তারা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। ২ মার্চ বাজারে ক্রেতাদের কাছ থেকে এক লিটার খোলা সয়াবিনের দাম রাখা হয়েছে ১৭৫ টাকা। অথচ সরকার এক লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আদালত আইনজীবীদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় রিট করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী রিট করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।