রহমত ডেস্ক 10 March, 2022 03:47 PM
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবী থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে হবে। সামাজিক, সংস্কৃতি, ধর্মীয় রীতি-নীতিতে একজন নারীকে অনেক বেশি ‘না’ শিখতে হয়। এমনকি জোরে হাসাও যেন একটি অপরাধ। এত বেশি না শুনতে শুনতে একজন নারীর চারপাশে একটি শক্ত দেয়াল তৈরি হয়। এটি ভেঙে বের হওয়াই তো একজন নারীর জন্য শক্ত যুদ্ধ। অধিকাংশ মেয়েরা দেয়ালটা ভেঙে বের হতে পারে না। দেয়ালটাকে ভাঙার জন্য নারীকে সাহস জোগাতে হবে। নারীকে তার অন্তর্নিহিত শক্তিটাকে উপলব্ধি করতে হবে। সেই শক্তি দিয়ে নারীকে সব জয় করতে হবে। যে রাজনীতি নারীর পক্ষে, মানুষের পক্ষে, অধিকারের পক্ষে, বৈষম্যহীনতায় বিশ্বাস করে, অসাম্প্রদায়িক; নারীকে সেই রাজনীতিই বেছে নিতে হবে। অসাম্প্রদায়িক, নারীবান্ধব গণমানুষের রাজনীতি আছে বলেই ২০২২ সালে নারীদের অবস্থা এমন। যদি তা না হতো, তাহলে ২০০১-০৬ যে বাংলাদেশ পেয়েছিলাম, দেশের অবস্থা তেমন বা তার চেয়ে বেশি খারাপ হতো।
আজ (১০ মার্চ) বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় নারী দিবস উপলক্ষে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নারীর অধিকার তো রাজনৈতিক বিষয়। সকালে কল ছাড়লে পানি আসে; এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার বাচ্চাটি স্কুলে পড়তে যায়; সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার খাবার আসে সেটিও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফল। অনেকের মধ্যে এ রকম ধারণা আছে— আমি রাজনীতিতে থাকি না বাবা। কিন্তু আমরা যা কিছু করছি, তার সব সিদ্ধান্তই নিচ্ছে রাজনীতি। আমি যদি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখি, যদি ভাবি আমি ওর কাছে যাবো না। তার মানে হচ্ছে, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি না। আমি সচেতন না। তবে সবাইকে রাজনৈতিক দল করতে হবে এমন না। তবে রাজনীতি সচেতন হতে হবে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। সেই নারীকে নিজের স্বার্থে, শতভাগ জনগণের স্বার্থে; সেই রাজনীতিকে বেছে নিতে হবে, যে রাজনীতি নারীর পক্ষে, মানুষের পক্ষে। যে রাজনীতিক দল অসাম্প্রদায়িক সেই রাজনীতিকেই বেছে নিতে হবে। আজ ২০২২ সালের যে বাংলাদেশ পেয়েছি, তা এগিয়ে নিতে হবে বহুদূর।
তিনি বলেন, যে রাজনীতি মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, নারীকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, নারীর অধিকারকে মানবাধিকারের স্বীকৃতি দেয়, আমার সেই রাজনীতিই দরকার। যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, যারা সেই অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, রাষ্ট্রের উচ্চতম পর্যায়ে পদায়ন করা হয়; তারা তো সরাসরি নারীবিদ্বেষী। নারীর অধিকার লঙ্ঘন করার সব কায়দা-কানুন তো তাদের মাধ্যমেই হবে। কাজেই নারীদের নিশ্চয়ই সেই রাজনীতিকে সমর্থন দেওয়া উচিত নয়। যারা সমাজে প্রগতির কথা ভাবেন, তাদেরও সেই রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কারণ নেই। এটি সমাজের তৈরি করা। বিশ্ব অচল হয়ে যেত, মানব সমাজ একবার তৈরি হওয়ার পর আর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগই থাকতো না, যদি নারী না থাকতো। প্রকৃতি বলি আর স্রষ্টা বলি, সবচেয়ে দায়িত্বশীল কাজটি নারীকে দিয়েছেন। সেটি হলো গর্ভধারণ এবং সন্তান লালন-পালন। কাজেই নারীরা সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল। রান্না করবে কে?- নারী। সেলাই করবে কে?- নারী। ঘর ধোয়ামোছা করবে কে?- নারী। এগুলো তো নারীর কাজ। কিন্তু এর সঙ্গে যখনই অর্থপ্রাপ্তি যোগ হয়, তখন দর্জি পুরুষ, বাবুর্চি পুরুষ ও ক্লিনারও পুরুষ। তখন এই কাজগুলোর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ এসে যায়। যে কাজ অর্থ সংশ্লিষ্ট ছাড়া করা যায়, সেটি নারীর কাজ। আর অর্থ যোগ হলেই তা পুরুষের।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাকরিতে অনেক জায়গায় দেখছি নারী। ৭২-এর সংবিধানে নারীর সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজ যারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেন, সেখানেও ক্ষমতায়নে নারীর অবস্থান তৈরি হয়নি। এটি সত্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী, সংসদ উপনেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা নারী। অথচ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীর অবস্থান এখনো কম। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত বিশাল মন্ত্রণালয়। আমি মন্ত্রী, একজন নারী। মাঠ পর্যায়ে অনেক শিক্ষক আছেন নারী। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারী খুব কম। ১৯৯৭ সালের নারী নীতিমালা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১৯৯৭ সালের নারী নীতির মৌলিক কতগুলো বিষয় ছিল। সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারসহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয় ছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে রাতের অন্ধকারে সেই নারী নীতিকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হলো। কারণ তখন যে সরকার, সেই সরকারের মূল অংশে ছিল একটি মৌলবাদী দল। মূল দলটিও নারী বিদ্বেষী, তার যথেষ্ট প্রমাণও আছে। নারী নীতিটাকে পাল্টে ফেলার পর যেটা হলো— আবার যখন ২০১১ সালে নারী নীতিটি করলাম, তখন মৌলিক যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, আমাদের রাজনীতির চেহারা এতখানি পাল্টে গেল যে, আমরা ১৯৯৭ সালের নীতিমালার মৌলিক জায়গায় ফিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমাদের ওই জায়গায় যেতে হবে।