রহমত ডেস্ক 05 March, 2022 07:49 AM
উইল করা সম্পত্তি নিজের আয়ত্তে নিতে গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের মাকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করেছেন তাঁর মেয়ে। ঘটনার ২১ দিনের মাথায় পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মেয়ে ও ভাড়াটে খুনিকে।
শুক্রবার (০৪ মার্চ) ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছে শ্রীপুর থানা–পুলিশ।
নিহত মীনারা বেগম (৬০) গাজীপুরের শ্রীপুরের ভাংনাহাটি গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। গ্রেপ্তার দুজনের একজন হলেন নিহত নারীর মেয়ে মোছা. শেফালি (৩৫)। অন্যজন শেফালির একসময়ের সহকর্মী সোহেল রানা (২৬)। গার্মেন্টসে একসময় চাকরি করার সুবাদে তাঁদের পরিচয় হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের মান্নানের টেক এলাকায় জঙ্গলে মীনারার গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন কিশোর। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা ছুরির খাপ ও এক জোড়া সার্জিক্যাল হাত মোজা। মরদেহ উদ্ধারের ১৯ দিন পর ওই নারীর পরিচয় পায় পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশ জানায়, ২ মার্চ পরিচয় পাওয়ার পর সন্দেহভাজন হিসেবে শেফালিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে সোহেল রানাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে এই দুজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশের ভাষ্য, জবানবন্দিতে দুজনই স্বীকার করেছেন, তাঁরা মীনারাকে হত্যা করেছেন। মাকে হত্যা করার জন্য সোহেলের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকার চুক্তি করেছিলেন শেফালি। ঘটনার আগের দিন ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন তিনি।
আদালতকে দেওয়া শেফালির জবানবন্দির বরাতে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মায়ের একমাত্র সন্তান শেফালি। বাবা মারা যান অনেক আগেই। তাঁর মা তাঁকে আট গন্ডা জমি উইল করে দেন। তবে উইলে শর্ত থাকে, মায়ের জীবদ্দশায় এই জমি মা নিজেই ভোগ করবেন। এর মধ্যে শেফালি ও তাঁর স্বামীর মধ্যে প্রায়ই সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এরপর তিনি মায়ের উইল করা সম্পত্তি নিজের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন।
শেফালির জবানবন্দির বরাতে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাকে হত্যা করতে তাঁর একসময়কার সহকর্মী সোহেল রানার সঙ্গে চুক্তি করেন শেফালি। এরপর শেফালি চাচার বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাকে নিয়ে রওনা হন। সঙ্গী হন সোহেল রানা। পথে মীনারাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে নিয়ে যান নির্জন জঙ্গলে। শেফালি ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তাঁর মা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেফালি মায়ের বুকের ওপর বসে মাথা চেপে ধরেন। সোহেল রানা ছুরি চালান মীনারার গলায়।
ব্রিফিংয়ে কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আজমীর হোসেন বলেন, মীনারা বেগমের উইলের সূত্র ধরে তদন্তে রোমহর্ষক এ ঘটনার রহস্য দ্রুত সময়ে উদ্ধার হয়েছে।