রহমত ডেস্ক 05 March, 2022 07:20 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ এই যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, এর জন্য দায়ী প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। জনগণই তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। আমরা সেজন্যই বলছি যে গণতন্ত্র যখন থাকে না তখন সব কিছুই অসাড় হয়ে যায়, তখন এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। তাই আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে। এই আশা করি যে, এই অন্ধকার কেটে যাবে। মানুষ জেগে উঠছে, জেগে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করি; এই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের সরকার আমরা প্রতিষ্ঠা করি।
আজ (৫ মার্চ) শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল আয়োজিত ‘চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও বাকশাল পুলিশ-র্যাব কর্তৃক গুম, খুন ও নির্মম নির্যাতনের শিকার পরিবার’ শীর্ষক এক আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সদস্য তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে ও মামুন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে গুম-খুন-নির্যাতিতদের মধ্যে সাংসদ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, ছাত্রদলের নুরুল আলম নূরুর মেয়ে উম্মে হাবিবা মীম, পারভেজ রেজার মেয়ে হৃদি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কাউসার আহমেদের মেয়ে লামিয়া আখতার মীম, পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত শাহ রাজিব আহমেদ রিংগল তাদের বেদনার কথা তুলে ধরেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, কোর্টে যখন যাই, সেখানে গিয়ে অন্য কোনো লোককে খুঁজে পাই না, সব আমাদের লোক…। এমন অনেকে আছে তারা নেতাও নন, যারা হয়তবা সমর্থক তাদের বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা। চলছেই সেই ধারাবাহিকতা, এখনও বন্ধ হয়নি।এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং, তুলে নিয়ে গেছে, তুলে নিয়ে গিয়ে ওইখানে গুলি করে হত্যা করেছে বা পঙ্গু করে দিয়েছে। এটা একটা ভয়াবহ নরকে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে। যে দেশের মানুষ অল্পতে সন্তুষ্ট থাকে, সেই দেশটাকে আজকে তারা ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশকে ‘ভয়াবহ নরকে’ পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, আজকে এই পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। কেন এই শিশুরা যন্ত্রণা পাচ্ছে? তারা শুধু মানসিক না তারা আর্থিক দিক থেকেও অত্যন্ত কষ্টে আছে।এমনও পরিবার আছে যে, ওই বাচ্চাটার লেখাপড়ার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে গেছে, চিকিৎসার খরচ যোগানো কঠিন হয়ে গেছে। আমরা তো তাদের পাশে ঠিক সেই ভাবে দাঁড়াতে পারিনি। আমি আশা করি, এই বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তাদের জন্য যেন আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারি, যে তহবিলের মধ্য দিয়ে অন্তত বাচ্চাদের লেখাপড়ার বিষয়টা দেখা যেতে পারে। আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিচ্ছে না, কারণ তারা জানে তিনি বাইরে থাকলে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। বাংলাদেশকে ভয়াবহ নরকে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ। দেশের যে সব মানুষ অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির মাধ্যমে তাদেরকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধ হই ফ্যাসিস্ট কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরাজিত করে দেশে একটি জনগণের সরকার ও মুক্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকরাই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে তুলে নিয়ে গুম-খুন করেছে, এ বিষয়ে কোথাও কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাস্তবতা তো তাই ঘটেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যখন এসব কথা বলি তখন তাদের কানে যায় না। বিভিন্ন ভাবে আমাদের কথাগুলোকে বিদ্রূপ করেছে। অথচ বিশ্বের সামনে আজকে প্রমাণ হয়েছে, আমরা এতদিন ধরে যেসব কথাবার্তা বলে এসেছি তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে, যে কারণেই দেখলাম মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে, গুম করা ও বিচার বহির্ভূত হত্যা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে এবং তার কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যারা এ কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা আমেরিকার কোনো কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। এটা ছোট খাটো ব্যাপার নয়, বাংলাদেশের মতো একটা দেশ, সেই দেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে তখন এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা গোটা জাতির উপর কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ সরকার। তারা আজকে তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে জোর করে চরম জঘন্য অমানবিক কার্যক্রম করছে।