| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ‘সরকারী দফতরেও মাতৃভাষা বাংলার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নেই’


‘সরকারী দফতরেও মাতৃভাষা বাংলার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নেই’


রহমত ডেস্ক     21 February, 2022     04:25 PM    


আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, যে আত্মত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরে সেভাবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায়নি। সরকারী দফতর ও আদালতে মাতৃভাষা বাংলার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নেই। ইংরেজীকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সর্বস্তরে। যে কারণে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এমন একটা বার্তা যাচ্ছে যে, সন্তানদের ভবিষ্যত উন্নতির জন্য অবশ্যই বাংলার পরিবর্তে ইংরেজী শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিতে হবে বেশী। এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই হতাশার। বিশুদ্ধ মাতৃভাষা বাংলার চর্চা দেশের সর্বস্তরে চালু করার বিষয়ে সবার আগে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। সরকারী অফিস-আদালতসহ রাষ্ট্রের সর্বস্তরে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলেও আবশ্যিকভাবে বিশুদ্ধ বাংলার চর্চা বাধ্যতামূলক করা জরুরি বলে মনে করছি। আজ (২১ ফেব্রুয়ারী) সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছিলেন- আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, রফিক উদ্দীন আহমদ, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, আবদুল আউয়াল, মো. অহিউল্লাহ। তারা সকলেই ছিলেন মুসলমান এবং ধর্মভীরু পরিবারের সন্তান। তাদের কেউই অমুসলিম ছিলেন না। অথচ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা আত্মদান করলেন, এই মুসলমান শহীদদের স্মরণার্থে ইসলামী তরীক্বা বাদ দিয়ে খ্রিস্টানি তরিকায় মিনারে ফুল দেওয়া হচ্ছে, নীরবতা পালন করা হচ্ছে। এতে কবরে শহীদদের রুহের শান্তির জন্য কোন উপকার হচ্ছে না। বস্তুত জরুরী ছিল, যারা জাতির আত্মমর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, জাতীয় পর্যায়ে তাদের রূহের শান্তি ও মাগফিরাতের জন্য ঈসালে সাওয়াবের আয়োজন করা। সম্ভব হলে তাদের কবর যিয়ারতের ব্যবস্থা করে সেখানে দোয়া-দরূদ পড়ে তাদের রূহের শান্তির জন্য দোয়া করার। কিন্তু মুসলিম শহীদদের জন্য ইসলামী তরীক্বায় কোন আয়োজন না করে আজ পশ্চিমা কালচার চালু করা হয়েছে; যাতে শহীদদের কোনই উপকার হচ্ছে না। বরং এটা ইসলামের ইবাদত ও সংস্কৃতি থেকে মানুষকে দূরে সরানোর আয়োজন ছাড়া কিছু নয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মোড়কে পুঁজিবাদি বাণিজ্য আজ এতটা জেঁকে বসেছে যে, মৃতের প্রতি মাগফিরাত জানানোর তরিকাতেও এখন কোটি কোটি টাকার ফুল বেচাবিক্রির বাণিজ্য ঢুকে গেছে। মৃতদের প্রতি এ ধরণের সম্মান জানানো ইসলাম অনুমোদন করে না এবং এতে শহীদদের কোনই লাভ হয় না। মাতৃভাষার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদেরকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সব সময়। আমরা ভাষা শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি এবং পরকালে শহীদি মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। একদিকে সাংস্কৃতি চর্চার নামে আজ সারাদেশে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুসলিম চেতনাবিরোধী বিজাতীয় কৃষ্টিকালচারের সয়লাব চলছে, অন্যদিকে ভাষার ক্ষেত্রেও আজ আগ্রাসন চলছে। হিন্দি নাটক-সিনেমা ও টিভি’র অবাধ প্রবাহের কারণে বর্তমানের তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশের মধ্যে হিন্দিপ্রীতি দেখা যাচ্ছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এছাড়া বাংলার পরিবর্তে ইংরেজী ভাষাকেই মর্যদাকর ভাষা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে নানাভাবে। ইংরেজীকে প্রয়োজনের জন্য শেখার আমরা বিরোধী নই। তবে বাংলা ভাষার মর্যাদা সুনিশ্চিত করার পরই।

তিনি আরো বলেন, আলহামদুলিল্লাহ কওমি আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্ররা বিশুদ্ধ বাংলা ভাষাচর্চা খুবই গুরুত্বের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র কুরআন-হাদীসের সবই এখন বাংলায় অনুবাদ পাওয়া যায়। উলামায়ে কেরাম দ্বীনিবিষয়ে বাংলা ভাষায় প্রচুর বইপত্র লিখেছেন। বিশুদ্ধ বাংলার চর্চায় মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র ও আলেম-উলামারা অনেকটা এগিয়ে আছেন। লেখালেখি, সাহিত্যচর্চা, সাংবাদিকতা ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে আলেমরা এখন বিশুদ্ধ বাংলার ব্যবহার করেন। মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়, বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাংবাদিকতার উপর প্রশিক্ষণ কোর্সে তারা অধিক হারে অংশ নিচ্ছেন। এটা খুবই আশা জাগায়। হতাশাজনক হচ্ছে দেশে এখনো ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারী ও আইন শিক্ষার উচ্চস্তরের বইগুলো বাংলায় পাওয়া যায় না। যে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য এই জাতি ত্যাগ স্বীকারে বিশ্বব্যাপী উদাহরণ তৈরি করেছে, সেই মহান মাতৃভাষাটি আজ খোদ নিজ দেশেই যেন অবহিলত হয়ে পড়েছে। আজকে বাংলার বদলে ইংরেজী মিডিয়ামে শিক্ষাগ্রহণকে মর্যাদার চোখে দেখা হচ্ছে। আদালতের রায়ে মাতৃ ভাষার বড় রকমের অনুপস্থিতি দেখা যায়। সরকারী বেসরকারী দফতরে ইংরেজী ভাষার প্রাবল্যতা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বাংলার প্রতি চরম অবহেলা পরিলক্ষিত হয়।