| |
               

মূল পাতা ইসলাম জুমার বয়ান ‘মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ঈমানী দায়িত্ব’


‘মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ঈমানী দায়িত্ব’


রহমত ডেস্ক     18 February, 2022     08:35 PM    


মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেছেন, তাওহীদ তথা মহান আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয়া গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন যেন তারা মানুষকে মহান রবের একত্ববাদের দিকে আহবান করেন। তিনি তাদেরকে স্বজাতির ভাষাভাষী করেছেন। যাতে বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষায় তারা মানুষের কাছে একত্ববাদের অমীয় বাণী পৌঁছাতে পারেন এবং মানুষেরাও তাদের সেই আহবান স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আমি সব রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে স্পষ্টভাবে (ধর্মীয় বিধান) বুঝাতে পারেন। (সূরা ইবরাহিম: ৪)। আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।

মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, কোরআনে কারীমের এ আয়াত থেকে ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে দ্বীনের পথে আহবানকারীদের জন্য মাতৃভাষায় পারদর্শিতা অর্জনের বিশেষ নির্দেশনাও পাওয়া যায়। মাতৃভাষা আল্লাহর দেয়া অনুপম নিদর্শন এবং শ্রেষ্ঠ দান। মায়ের ভাষায় কথা বলা মানুষের সৃষ্টিগত অভ্যাস। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি যেমন অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার প্রতিও অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সব চেয়ে বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জলভাষী।’ বিশ্বনবীর এ বাণী দ্বারা বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল মাতৃভাষায় কথা বলার যোগ্যতা অর্জনের গুরুত্ব বুঝা যায়। খোদাদ্রোহী শাসক ফেরাউনের কাছে একত্ববাদের দাওয়াত পৌঁছাতে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম স্বীয় ভ্রাতা হযরত হারুনআলাইহিস সালামকে সহযোগী হিসেবে পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। কারণ হযরত হারুন আলাইহিস সালাম স্বজাতির ভাষায় দক্ষ ছিলেন। খুব সুন্দর স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলতে ও বুঝাতে পারতেন। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, (হে আমার রব) আমার ভাই হারুন আমার চেয়ে সুন্দর ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে। সুতরাং তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন। (সূরা ক্বাসাস: ৩৪)।

খতিব বলেন, মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। কারণ, এ ভাষা আল্লাহ দেয়া ভাষা বৈচিত্রের অংশ এবং তাঁর কুদরতের অনন্য সৌন্দর্য। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, "তাঁর আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সূরা রুম: ২২)। এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, আমাদের মাতৃভাষা বাংলাও মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ ভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনসহ যত্নশীল হওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়ার নির্দেশনায় শামিল। আসুন ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত এই মাসে বিশুদ্ধ মাতৃভাষা চর্চার দীপ্ত শপথ নিই। পরিহার করি ভিনদেশী ভাষাকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শাহাদতবরণকারী বীর সন্তানদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।