| |
               

মূল পাতা জাতীয় নারীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি


নারীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি


রহমত ডেস্ক     30 January, 2022     01:27 PM    


গত এক বছরে দেশে মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়া এইচআইভি/এইডস রোগী বেড়েছে প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ। একইসঙ্গে এইডস সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নারীদের মধ্যে বাড়ছে। ২০১৩ সাল থেকে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের জ্ঞান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে বিবিএস। সংস্থাটির ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী শতকরা ৮১ দশমিক ৫ জন নারী এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না। যা ২০১৯ সালে ছিল ৭৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসে ‘স্যামপল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২০’ প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, মা থেকে শিশুর দেহে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ হতে পারে এমন ধারণা সম্পর্কে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী অবগত নন। এইডসের একটি বাহক সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন ৭১ দশমিক ৫ শতাংশ। যা ২০১৯, ১৮, ১৭ ও ১৬ সালে যথাক্রমে ছিল ৭০ দশমিক ১, ৬৮ দশমিক ৯, ৬৮ দশমিক ৮ ও ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, সবগুলো বাহক সম্পর্কে অবগত ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০১৯, ১৮, ১৭ ও ১৬ সালে যথাক্রমে ছিল ৩৫ দশমিক ৫, ৩৪ দশমিক ৬, ৩৫ দশমিক ৫ ও ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। সুতরাং দিন দিন এইচআইভি/এইডস বাড়ছে।

গত ১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডস জানিয়েছে, বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিচারে এখনও বেশি না হলেও এইডস রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০ দশমিক ১ শতাংশ, যা সংখ্যার হিসেবে ১৪ হাজারের বেশি। এইডসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে ২০৫ জনের। বাংলাদেশে এইডস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের। আর বর্তমানে দেশে প্রায় আট হাজার রোগী চিকিৎসার আওতায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিএইডস।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ এইডস আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। তবে প্রাণঘাতী এই রোগ নিরাময়ে সরকারের আরও বেশি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা এবং আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, অভিবাসী, পুসব্যাক হওয়া জনগণ এবং বেশি আক্রান্ত পাওয়া এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। এছাড়া নতুন রোগীদের একটি বড় অংশ অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য। আগে ঝুঁকিপূর্ণ চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া গেলেও গত বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে। নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৭ জন, খুলনায় ৬৪ জন, সিলেটে ৪৫ জন, বরিশালে ২৮ জন, রাজশাহীতে ২৭ জন এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে, ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

‘শিশু, এইচআইভি ও এইডস : ২০৩০ সালের বিশ্ব’ প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, এইডস-সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে এইচআইভি প্রতিরোধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রকল্পে বাড়তি বিনিয়োগ করা না হলে প্রতিদিন ৭৬ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এইচআইভিতে আক্রান্ত শূন্য থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাবে। যা বর্তমানের অনুমানের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম। বাংলাদেশেও এইডসের বর্তমান পরিস্থিতি প্রায় একই রকম বলে জানায় ইউনিসেফ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে আরও ৭২৯ জনের দেহে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৮৬ জন। তাদের নিয়ে দেশে এইচআইভি আক্রান্ত সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। গত বছরে আক্রান্ত নতুন রোগীর মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ১৮৬ জন, বিদেশ ফেরত প্রবাসী ১৮৮ জন, বিদেশ ফেরতদের পরিবারের ১৪৪ জন, ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন, নারী যৌনকর্মী ১৭ জন, সমকামী ৬৭ জন, পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন এবং ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জন রয়েছে।