রহমত ডেস্ক 29 January, 2022 10:51 PM
বাংলাদেশ জাতীতাবাদী দল-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, আমি মির্জা আব্বাসের নির্বাচন করতে গিয়ে গুলি খেয়েছি, সেই মির্জা আব্বাসকেও সকাল ১১টায় বসে যেতে হয়েছে। আমি বসলাম পাঁচ ঘণ্টা আগে। মির্জা আব্বাস তাবিথ আউয়াল বসল এগারোটায়, সেটা একটা দিক। আমি এবং আমার মেয়ে এখানে আছে, আমাদের বলা হয়েছিল যে, মুকুল চেয়ারম্যানকেও গ্রেফতারের অর্ডার আছে। এফআইআরে নাম মনিরুজ্জামান, বাপের নাম নেই। সেই নামকে মনিরুল ইসলাম রবি বানিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি উচ্চ পদস্থ পুলিশদের সঙ্গে কথা বললাম। আপনারা যে বললেন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন তো সুষ্ঠুতা থাকে কোথায়। তখন শুনলাম মুকুল চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের অর্ডার হয়েছে। আমার মনে হলো, নারায়ণগঞ্জের এসপি জায়েদুল আলম আমার লোকজনকে গ্রেফতার করার জন্য অর্ডার নিয়েছেন। আমাদের দলের আজ দুর্দিন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারেক রহমানকে মেনেই আমি রাজনীতি করছিলাম, করি, করব। আগামীতেও আমি থাকব। এতদিন যেভাবে পাশে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকব।
আজ (২৯ জানুয়ারি) শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ নগরের মাসদাইরে মজলুম মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরবর্তী ‘ইভিএম মেশিনে ভোট, জাতির জন্য অশনি সংকেত’' শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তৈমুর বলেন, যা হবার হবে, আমি জোর গলায় বলছি; একটা এটিএম কামালকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি বানাতে পারবে না। সে বহিষ্কার হয়ে গেল, তার বাড়িতেও পুলিশ গিয়েছে। এভাবে তারা আমার ওপর জুলুম অত্যাচার করল। জুলুম না করলে জাহাঙ্গীর কবির নানককে বুঝিয়ে দিতাম ঘুঘুর ফাঁদ কোথায় আছে। একটা লোক গ্রেফতার হলে এলাকাটা কানা হয়ে যায়। হাতির ব্যাজ যার কাছে পেয়েছে তাকেই ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা ব্যাজ না লাগিয়ে মাঠে ছিল। সকল প্রকার ভয়ভীতি, বহিষ্কার গ্রেফতার লাঞ্ছিত সব উপেক্ষা করে আপনারা আমার সঙ্গে ছিলেন। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত আপনারা নির্বাচনটা করেছেন। আমার গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও এ ঋণ শোধ হবে না। আমাকে বলে নারায়ণগঞ্জে ‘উন্নয়ন’ হয়েছে। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন না থাকলে জনগণ লাভবান হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেন, দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে দেশে কোনো সুশাসন নেই। সুশাসন না থাকলে জনগণ উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না। একটা গ্রুপ সেটা ভোগ করে। আওয়ামী লীগের সবাইও এটা ভোগ করে না। আওয়ামী লীগেও একটা অংশ আছে যারা নির্যাতিত।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে। সকল সুবিধা সিন্ডিকেট ভোগ করছে, সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারে না। জাইকার উন্নয়নের শেয়ার কোথায় যায় সময় হলে আমি সব বলব। আমি বিনা হিসাবে নির্বাচন করতে আসিনি। আমি মনে করি এ নির্বাচন আমার লাভ হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত লাভ হয়েছে পাশাপাশি দলেরও লাভ হয়েছে। আমাকে যতই বহিষ্কার করুক আমি বিএনপির সমর্থক হিসেবে থাকব। আমি বিএনপিকে আমার দল মনে করি এবং মৃত্যু পর্যন্ত এটাই করে যাব। এর আগে প্লেনে উঠলেও এয়ার হোস্টেজ আমাকে জিজ্ঞেস করত আপনি বসে গেলেন কেন। চরমোনাই পীরও বলেছে আমি বেইমান, রাতের অন্ধকারে বসে গেছি। কিন্তু উনি তো জানে না, দলের নির্দেশে আমাকে বসতে হয়েছে। দল বসে গেছে, তাই আমি বসে গেছি। এবারও যদি দল বলত তাহলে আমি বিষয়টা দেখতাম। এবার প্রমাণ হয়েছে আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক না। এটা প্রমাণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আজকে যারা বড় নেতা না, আমরা এতদিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। তবে এবার আমরা ঘর থেকে বের হয়েছি। বিএনপি যে আছে এটা সরকার টের পেয়েছে এবং জনগণও বুঝেছে। এ কারণেই কূটকৌশল করতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার মাথায় ধরে না- দল করি আমরা কিন্তু বিএনপির সব সিদ্ধান্ত আগেই জানে আইভী। ২০১১ সালের নাসিক নির্বাচনের আগের কথা। মরহুম জাহাঙ্গীর কমিশনারের (সাবেক পৌর কমিশনার) সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি মেয়রের (আইভী) আত্মীয়। জাহাঙ্গীর কমিশনারের স্ত্রী আমাকে নির্বাচনের চার দিন আগে বলেছিল, ‘আপনাকে বসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন, মেয়রের বাড়ি থেকে শুনে এসেছি। আমার মাথায় ধরে না, আমার নেত্রী আমাকে বসিয়ে দিবে তারা কীভাবে জানে! আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীরা) তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কালু ভাই (জেলা বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন কালু) সদ্য সমাপ্ত নাসিক নির্বাচনের দশ দিন আগে আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনাকে বহিষ্কার করা হবে।’ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনিও বললেন আইভীর কাছ থেকে জেনেছি। এটা আমি বুঝি না। আমরা দল করি কিন্তু আমরা জানার আগে মেয়র কীভাবে জানে।