ইসি নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরোনো জিনিস : জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস, এ আইন প্রণয়ন করার ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালনের ক্ষমতায়নে আগের তুলনায় কোনো উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। আগের মতোই ওই বিষয়গুলো পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। অর্থাৎ নতুন করা আইনটি পুরাতন পদ্ধতিকে একটি আইনগত কাঠামোতে এনে আইন সম্মত করা হচ্ছে। এক কথায় এই আইনটি করার পরেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে পূর্বের মতো সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ ধারার কারণে রাষ্ট্রপতি মাত্র দুইটি নিয়োগ বাদে সব কাজেই পরামর্শ করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আজ (২৯ জানুয়ারি) শনিবার দুপুরে বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, নাজমা আখতার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মো. হেলাল উদ্দিন, মো. হুমায়ুন খান, আনোয়ার হোসেন তোতা, মাখন সরকার, সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।

জি এম কাদের বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসারে একটি আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন এবং সে অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। আমরা যোগ্যতার মাপকাঠি বলতে দায়িত্ব পালনের দক্ষতাকে বুঝিয়েছি। মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনের কথা বুঝিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির পক্ষে থেকে রাষ্ট্রপতির সংলাপে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছিল, আইনে নির্বাচনকালে নির্বাচনী কাজে কোনো কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পালন না করলে নির্বাচন কমিশন নিজেই যেন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, সেরকম একটি আইন করা দরকার।

তিনি বলেন, বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দলের এর বাইরে কিছুই করার নেই। বর্তমান সংবিধান এক ব্যক্তিকে ক্ষমতা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে, যেটুকু বলবেন তার বাইরে সংসদে কিছুই পাশ হবে না। তাই আমরা সরকারের সমালোচনা ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে বিরাধী দলের দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া সংবিধানের কিছু ধারা একটির সঙ্গে অন্যটি সাংঘর্ষিক। বিরোধী দল হিসেবে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের দাবি তুলে ধরছি, মানা না মানা সরকারের ব্যাপার। সম্প্রতি প্রনীত আইনে একটি সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রুপরেখা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্চ কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়নি। সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় সংবলিত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকাশ করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এছাড়া মাত্র ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করার বিধানটিও বেশি তাড়াহুড়ো বলে মনে হয়; যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সার্চ কমিটির কাজের স্বচ্ছতা থাকছে না।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় চায় অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। কারণ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশ দ্বার। নির্বাচন সঠিক হলেই দেশে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। সুশাসনের পরিবেশের উন্নয়ন হবে। সাধারণ মানুষ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারলে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পাবার পথচলা শুরু হবে। জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছি এবং আমাদের বক্তব্যের লিখিত কপি প্রদান করেছি। তিনি বলেন, সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বলা আছে। এখানে অনুচ্ছেদ ১১৮(১) এ উল্লেখ আছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।