রহমত ডেস্ক 26 January, 2022 12:37 PM
স্থানীয়ভাবে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশ ঘটানো ও কম সিলিন্ডার ক্যাপাসিটির (সিসি) গাড়ির দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে রাখতে ০-১৬০০ সিসির একক স্ল্যাব ভেঙ্গে তিনটি স্ল্যাব করে আমদানি নীতি আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি-না, সে বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অটোমোবাইল খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কর অব্যাহতি সুবিধাসহ বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করে গতবছর 'অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা' জারি করেছে সরকার। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৫০ একর জমির উপর জাপানিজ অটোমোবাইল কোম্পানি সুজুকি মটরস করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে অটোমোবাইল সংযোজন ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করছে উত্তরা মটরস লিমিটেড। এছাড়া, জাপানের মিৎসুবিশি ও কোরিয়ান অটোমোবাইল কোম্পানি হুন্ডাই এর সঙ্গে যৌথভাবে আরো কয়েকটি কোম্পানি অটোমোবাইল শিল্পে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে।
বর্তমানে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে করভার ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার নতুন গাড়িতে ৯১ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। আর রিকন্ডিশনড গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩০% পর্যন্ত শুল্ক-কর দিতে হয়। ০-১৬০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানির শুল্ক-কর ও ভ্যাট সমান। ফলে ৮০০ সিসির গাড়ি আমদানিতেও ১৬০০ সিসির গাড়ি আমদানির সমান শুল্ক-কর দিতে হয়। সমান শুল্ক-করের কারণে ৮০০ সিসির গাড়ির দাম ১৬০০ সিসির গাড়ির দামের প্রায় সমান হয়ে যায়। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ৮০০ সিসি গাড়ি কেনার সক্ষমতা হারান। ১৬০০ সিসি পর্যন্ত নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে করভার ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার নতুন গাড়িতে ৯১ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। আর রিকন্ডিশনড গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩০% পর্যন্ত শুল্ক-কর দিতে হয়।বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত টয়োটা এক্সিও, এলিয়েন, ফিল্ডার গাড়ির সিসি ১৫০০ এর মধ্যে। এছাড়া কম সিসির গাড়ির মধ্যে রয়েছে-ওয়াগন আর ১২০০ সিসি এবং সুজুকি মারোতি ৮০০-১২০০ সিসি।
সম্প্রতি গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ০-১৬০০ সিসির স্ল্যাব পুনঃগঠন করে ০-৮০০ সিসি, ৮০১-১২০০ সিসি এবং ১২০১-১৬০০ সিসি- এই তিনটি স্ল্যাব করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেছেন উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান। তার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে চিঠি লিখে 'বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা ও যাচাই করে আমদানি নীতি আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি-না, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত গ্রহণ করে' একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
০-১৬০০ সিসি পর্যন্ত বিদ্যমান একক স্ল্যাব ভেঙ্গে তিনটি স্ল্যাব করে স্ল্যাবভিত্তিক শুল্ক হার নির্ধারণ করা হলে স্বল্প ইঞ্জিন ক্ষমতার গাড়ির দাম কমবে জানিয়ে উত্তরা মটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান প্রস্তাবে লিখেছেন, এতে কম সিসির গাড়ির দাম দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত সিসি স্ল্যাব আমদানি নীতি আদেশে সন্নিবেশিত হলে এবং তার প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব শুল্কায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে গাড়ির চাহিদা বাড়বে। ফলে অটোমোবাইল শিল্প খাতে এসেম্বলিং ও লোকাল প্রোডাকশন কারখানা স্থাপনের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্যাসেঞ্জার কারের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির শুল্কহার ৫% নির্ধারণ করা হলে তা প্যাসেঞ্জার কার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে উৎসাহ যোগাবে এবং প্যাসেঞ্জার কার উৎপাদন শিল্পে নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগ নিয়ে আসবে। সার্বিকভাবে উৎপাদন শিল্প গতিশীলতা লাভ করবে। সেই সঙ্গে প্যাসেঞ্জার কার উৎপাদনে দেশ স্বনির্ভরতা অর্জনে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে গাড়ির ব্যবহার দ্রুত হারে বাড়ছে। ওই সময় ১,৫৯,৯৮৮টি মোটর গাড়ি নিবন্ধন নিয়েছিল। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৪,৯৭,৪৩২টিতে উন্নীত হয়। করোনার কারণে পরের বছর মোটরগাড়ি নিবন্ধনের সংখ্যা কমে ৩,৭৭,৬৬০টি তে নেমে এলেও গতবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,৪৫,০৩০টি। বাংলাদেশে হাজারে ৩ জনের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে; এ সংখ্যা মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে ৮৯৭ জন। অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে প্রতি হাজারে ১২৯ জনের গাড়ি রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ-পিআরআইবি’র এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, ভিয়েতনামে জনপ্রতি গাড়ির মালিকানা বাংলাদেশের তুলনায় ৩ গুণ।