রহমত ডেস্ক 09 January, 2022 09:57 PM
একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের দশম দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে আইন প্রণয়নসহ ছয়টি প্রস্তাবনা দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। আজ (৯ জানুয়ারি) রবিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে চলমান সংলাপের ১২তম দিনে নির্বাচন কমিশন গঠনের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সাথে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব দেন। নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ রাখার উপায় বের করতে রাষ্ট্রপতির কাছে ছয় দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন কাদের সিদ্দিকী। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. নির্বাচন কমিশন আইন অবিলম্বে প্রণয়ণ করার প্রস্তাব করছি। এই মুহূর্তে আইন প্রণয়ণ সম্ভব না হলে সার্চ কমিটি নয়, দেশের অভিভাবক ও প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে আপনার চিন্তা-চেতনা, বিবেক-বিবেচনায় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষদের নিয়ে দেশের মানুষের আস্থাভাজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনে কমপক্ষে দুইজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন অন্যতম নিয়ামক। কিন্তু প্রহসনমূলক নির্বাচন হওয়ায় দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, সরকারও তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ক্ষুন্ন হয়েছে দেশের মর্যাদা। তাই নির্বাচন কমিশন এবং নির্ভেজাল নির্বাচন জাতির জন্যে খুবই জরুরি। অতএব, সংবিধানের নির্দেশমতো প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে সম্পূর্ণ স্বাধীন-মুক্ত করার প্রস্তাব করছি।
৩. মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, তেমনি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়া চলার কথা না। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের মতামতের তোয়াক্কা করেনি। প্রতিবছর অন্তত চারবার নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার বিধান থাকা উচিত। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত না নিয়ে নির্বাচন কমিশন নতুন কোনো নির্বাচনী বিধি-বিধান প্রণয়ণ করতে পারবে না।
৪. গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে রাজনৈতিক দল। প্রধানমন্ত্রী যেমন বিদেশ সফর শেষে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন, ঠিক তেমনি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে বছরে অন্তত দুইবার নির্বাচন কমিশন দেশের পরিস্থিতি, অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দলগুলোর মতামত নেবেন এবং তিনিও তার মতামত ব্যক্ত করবেন।
৫. রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান অভিভাবক। তাই আপনিও একইভাবে বছরে দুইবার, সম্ভব না হলে অন্তত একবার সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেবেন এবং আপনিও আপনার অভিমত ব্যক্ত করবেন।
৬. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে।
সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে বলেন, দীর্ঘ এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় নয় সদস্যের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতিকে আইন প্রণয়নসহ ছয় দফা প্রস্তাব করেন। তারা এই মুহূর্তে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হলে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির পরিবর্তে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষদের নিয়ে দেশের জনগণের আস্থাভাজন ও গ্রহণযোগ্য ৫ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। যেখানে অন্তত দু'জন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা নির্বাচন কমিশনকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো মতামত না নিয়ে কোনো নির্বাচনী বিধিবিধান প্রণয়ন না করার প্রস্তাব করেন। প্রতিনিধিদল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব করেন। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের দক্ষতার চেয়েও সরকারের নিরপেক্ষতা বেশি জরুরি।
বঙ্গভবনে তাদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য। তাদেরকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- দলটির মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম তারেক, যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, কেন্ত্রীয় সদস্য ফরিদ আহমেদ, ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাতুল ইসলাম দীপ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান।
এখন পর্যন্ত ১৭টি রাজনৈতিক দলের সাথে ১২ দিনের পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি। গত ২০ ডিসেম্বর চলমান সংলাপের প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এর মধ্যে চারটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশ নেননি। দলগুলো হলো : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আগামী ১০ জানুয়ারি রোজ সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি-জেপি’র সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সাথে সন্ধ্যা সাতটায়। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে ইসলামী ফন্ট বাংলাদেশের সাথে এবং ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সাথে। ১২ জানুয়ারি বিকেল চারটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল -বিএনপির সাথে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি এনপিপির সাথে একই দিনে সন্ধ্যা ছটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে জাকের পার্টির সাথে, সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সাথে এবং সন্ধ্যা আটটায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’র সাথে। ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে রাষ্ট্রপতি সংলাপে বসবেন আগামী ১৭ জানুয়ারি বিকাল চারটায়।
১০ জানুয়ারি রোজ সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি-জেপি’র সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সাথে সন্ধ্যা সাতটায়। মঙ্গলবার ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে ইসলামী ফন্ট বাংলাদেশের সাথে এবং ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সাথে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাথে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে ১২ জানুয়ারি বিকেল চারটায় এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনটিভির সাথে একই দিনে সন্ধ্যা ছটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠন করবেন। আর এর অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
উল্লেখ্য, কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই ইসির পরিচালনায় আগামী সাধারণ নির্বাচন হবে।