রহমত ডেস্ক 04 January, 2022 03:28 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের কলংকিত রেকর্ডকে ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। তাদেরকে সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি-কারচুপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিয়েছিল ২৯৩ আসন, মাত্র ৭টি আসন বিরোধী দলকে দেয়া হয়। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বাক্স ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে নতুন নয়। দেশের ইতিহাসে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র হরণ আওয়ামী লীগের ডিএনএতে মিশে আছে। আজ (৪ জানুয়ারি) মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আগামীকাল ৫ জানুয়ারী বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন। আট বছর আগে ২০১৪ সালের এই দিনে সারাদেশে ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীবিহীন একতরফা বিতর্কিত, প্রতারণামূলক, হাস্যকর ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রহসনমুলক একদলীয় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে প্রত্যাখ্যাত, জনধিকৃত একদলীয় নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবারো সারা দুনিয়ায় নিজেদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণহত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন চালিয়েও ভোটারদের কাছে থেকে ন্যূনতম ভোট আদায় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সারাদেশে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল একদম ফাঁকা। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ছিল ভোটারশূণ্য এবং কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের বদলে ভোট কেন্দ্রে চত্ষ্পুদ প্রাণীর বিচরণ দেখেছে বিশ্ববাসী। বর্তমানে ভোটাধিকার হরণে দুস্কর্মের টাটকা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই পাত্তা দেয় না। জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী-অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিলো। এরপর যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা ছিল কিম্বুতকিমাকার ও উদ্ভট। যা ছিল একতরফা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, পাইকারীহারে জালভোট প্রদান, ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, লাশের ভোট প্রদান, গায়েবী ভোট, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ একের পর এক অভিনব ভোট। আওয়ামী সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, উদার মনোভাব, সকলের একত্রীকরণ, সাংস্কৃতিক অনুরণন, বিনা বাধায় নিজের পছন্দমতো বিশ্বাস নিয়ে চলার অধিকার নেই।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সাল থেকে যে গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকার ক্ষমতায় বসে আছে সে ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে একই কায়দায় মানুষের অধিকার হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে আগের রাতে ভোট দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসিত। মানুষের বাকস্বাধীনতায় তালা মেরে দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেয়া হয়েছে। বিচারবিভাগ নির্বাহী বিভাগের আয়নায় সবকিছু দেখতে গিয়ে আইনের শাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে।। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রায়ের আগেই বিচারপতিদের স্কাইপি আলাপ দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে। বিচারকরা আদেশ দেয়ার আগে তাকিয়ে থাকেন নির্বাহী বিভাগের দিকে। বর্তমানে নব্য বাকশাল নিষ্ঠুর নাৎসীবাদকেও হার মানিয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশের উপর চলছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা কথায় কথায় জারি করা হচ্ছে বিরোধী দলের সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা। মানুষ সত্য উচ্চারণের সাথে সাথেই তার উপর নেমে আসে নানা কালাকানুন অথবা গুম-খুনের মতো ঘটনা। কথা বললেই নেমে আসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ। এখনপর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যতো মামলা করা হয়েছে সকল মামলা সরকারের সমালোচনা করার জন্য। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম-খুন ও বিচার বহির্র্ভূত হত্যার শিকার। ৫ লাখের বেশি মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং সাবেক ৪ বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রেখে হত্যার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আজো তিনি গুরুত্বর অসুস্থ। বর্তমান সময় সংকটময় ও সমস্যাদীর্ণ গণতন্ত্রের সময়। কিন্তু মানুষ আর বসে থাকছে না। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে মানুষ। বিএনপি যেখানেই সমাবেশ দিচ্ছে সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। দু:শাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে মানুষ। আওয়ালীগ কখনোই নিজেদের স্বার্থসর্বস্বতার উর্ধ্বে উঠতে পারেনা।