মুফতী মনোয়ার হোসেন 02 January, 2022 11:17 AM
স্পষ্ট একটা সাংস্কৃতিক বিভাজন চলছে, অনেকটা সম্পন্ন হওয়ার পথে। একদেশে বিভাজিত দুটি ভাগ জাতিকে দুদিকে টানছে। এমন অবস্থায় একটি দেশ, একটি জাতি বিশাল সংকটের গর্তের কিনারে থাকে।
এদেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে ইসলামি নিদর্শনের স্পষ্ট ছাপ। মানুষের মননে, বিশ্বাসে অভ্যাসে ইসলামের বিশ্বাস গভীরভাবে প্রোথিত। দ্বীন সম্পর্কে মানুষ ভালভাবে বুঝুক আর না বুঝুক ইসলামের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর। মানুষের জীবনে তা ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু রাস্ট্র পরিচালনার নীতি এ দেশের মানুষদের বিশ্বাস কেন্দ্রিক না হওয়ায় ক্ষমতার সাথে মানুষের এক বিরাট বিরোধ তৈরী হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী শক্তির মদদে দায়হীন একটি গোষ্ঠি মানুষের ইচ্ছার, যাপিত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রাস্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিরোধের এ ক্ষেত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
এ জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করতে হয়েছে। বৈধতার বয়ান তৈরী করতে হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য যা দরকার তা করে ফেলেছে। এ জন্য তাদের মূল অপারেশনগুলো হলো-
১. চেতনার বয়ান তৈরী করাঃ
বিগত দেড় দশকে এটা খুব শক্ত ভিতের উপর দাঁড় কারানো হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনা, বঙ্গবন্ধুকে একটি আদর্শিক বয়ানে দাঁড় করানো প্রায় সম্পন্ন। শাসকদের সংজ্ঞায়নকৃত বিষয়াবলি বা তাদের ইচ্ছার বিপরীত কোন বিষয় যা তাদের স্বার্থে প্রতিকূলে এগুলোকে চেতনার বিপরীত দাঁড় করিয়ে আইনত তা অন্যায় বলে সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে। সহজ কথায় যা কিছু আমার পছন্দ নয় তা কিছু চেতনা পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ক.
সরকারী বেসরকারী সকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে এর আওতায় আনা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একটি আদর্শিক ভিত্তির উপর থাকতে হয়, কেমন জনগণ প্রত্যাশা করি তা সরবরাহ করার দায়ীত্ব থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর। বর্তমান যে নাগরিক আমরা দেখতে পাচ্ছি তা এ কোম্পানির প্রডাকশন।
খ.
সরকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে সে বয়ানের আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামাজি, মুসলিম সকল কর্মতমকর্তাগণই এ চেতনার আওতাধীন, ভিন্নমতপোষণকারী আইনত রাষ্ট্র বিরোধী। এ চেতনার আওতায় যা কিছু আছে তা ইবাদততুল্য, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নাগরিক হিসেবে এ বয়ানে বিশ্বাসী হতে হবে। ইসলামের নামে, ইমানের নামে এর কোন অংশের বিরোধিতা করা যাবে না, অঘোষিতভাবে হলেও তা প্রতিষ্ঠিত।
২.
এ ব্যবস্থাপনায় ইসলামকে একটি ধর্মের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। তবে সেটা নিয়ন্ত্রিত। যা কিছু এ চেতনা বা বয়ানের বিরোধী তা কিছু করা যাবে না। সাংস্কৃতিকভাবে এ বয়ান প্রতিষ্ঠার জন্য থার্টি ফার্স্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, ফ্যাশান শো, কনসার্টসহ যুব সমাজকে আবেগের জোয়ারে ভাসাতে যা দরকার তা সহজলভ্য করে উন্মুক্ত করে দেয়া। অপরদিকে মাহফিলগুলো সংকুচিত করে বা কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ধ করে ধর্মীয় স্বাধীনতা স্থগিত করে রাখা হয়েছে, অপরদিকে রাস্ট্রর পৃষ্ঠপোষকতায় মিডিয়ার সকল উইং ব্যবহার করে তা সমাজের তারুন্যসহ সকল নাগরিকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা পুশ করা হচ্ছে।
মাদরাসা, মাহফিল ধর্মীয় অন্য কোন উৎসব এখনো যতটুকু আছে তা অনেকটা চেতনাধারী বা তাদের মাষ্টারমাইন্ডদের দয়ায় চলছে। এর মোকাবেলায় দরকার শক্তিশালি একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। পুরনো ধাচের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা যে নাগরিক উৎপাদন হচ্ছে তা হুুজুর শ্রেণী হয়ে ঐ টুকু তারা করতে পাচ্ছে যা তারা করে থাকে। মোকাবেলা করতে হলে যামানার চাহিদা পূরণে ইসলামি তাহযিব তামুদ্দুনিক পরিবেশনা যরুরি যা পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রস্তুত হতে পারে।
লক্ষ লক্ষ মসজিদের জুমার বয়ানে থার্টি ফার্ষ্ট উৎযাপন করতে বারণ করা হয়েছিল, এভাবে ব্যর্থ হতেই থাকবে যদি আমরা মূল জায়গায় হাত দিতে না পারি।
লেখক : তরুণ আলেম, খতীব ও মুহতামীম।