| |
               

মূল পাতা জাতীয় রাজনীতি ব্যক্তি ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে র‌্যাব প্রশ্নবিদ্ধ : গয়েশ্বর


ব্যক্তি ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে র‌্যাব প্রশ্নবিদ্ধ : গয়েশ্বর


রহমত ডেস্ক     31 December, 2021     08:29 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন পুরোপুরিভাবে পুলিশ করেছে। অথচ, পুলিশ একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা ক্ষমতায় গেলেও তাদেরকে লাগবে। প্রতিষ্ঠানটাকে তো বাজেয়াপ্ত করতে পারব না। র‌্যাব সন্ত্রাস দমন করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আজ র‌্যাবের বিষয়ে বিদেশে যে পর্যবেক্ষণ, মার্কিণ নিষেধাজ্ঞায় যাদের নাম এসেছে দোষটা তো তাদের নয়, আইন মেনে তারা যদি কর্ম করত এই দোষে দুষ্ট হতো না। তারা একটি ব্যক্তির ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিএনপি কখনও ক্ষমতায় যাওয়াটা মূল লক্ষ্য মনে করে না। ১৯৯১ সালেও ম্যাডাম কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি ক্ষমতায় যাবে-এমন বক্তব্য তিনি দেননি। দেশের মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটাও আপনারা জানেন। দশ হাজার ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স যায়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও যেতে পারেননি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা আরেক কায়দায় হল। আমাদের দুর্বলতা একটা জায়গায় এই শেখ হাসিনা কী করবে আমরা আগাম বুঝতে পারি না। ঘটনা ঘটানোর পর আমরা বুঝতে পারি। দিনের ভোট রাতে কাঁটছে-এটা কে বুঝবে? কেউ-ই তো ভাবে নাই। আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম একটি কারণে যে গণতন্ত্রটা সচল থাকুক। ক্ষমতায় যাওয়াটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।

আজ (৩১ ডিসম্বের) শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে একাদশ নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, নিতাই রায় চৌধুরী, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম প্রমুখ।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ এই তিনটি নির্বাচন তিনটি কৌশলে বৈতরণী পার করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের কৌশলটা আমরা আগে বুঝতে পারিনি। ওই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের তত্ত্ববাধায়নে ৪০ হাজার ভোট বাক্সে রিজার্ভ রাখা ছিল। আমার জানা মতে, কোনো একটি আসনে ৪০ হাজার ভোট ব্যালট বাক্সে রিজার্ভ রাখার পরও সেখানে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে ছিল। পরে অন্য জেলা থেকে এনে তা পূরণ করা হয়। এ নির্বাচনটা ছিল যারা এক-এগারোতে অন্যায় করেছে, তাদের বেঁচে থাকা এবং শাস্তির আওতায় না আসার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী মঈন ইউ আহমেদ বা তথাকথিত যে সরকার সেই সরকার নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। সেই সময় শেখ হাসিনা বিদেশ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, আমি বর্তমান (ওয়ান ইলেভেন) সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেব। ওই সরকারটা ছিল অবৈধ সরকার। এই সরকারের বৈধতা এনে দিতে হলে শেখ হাসিনাকে ২০১ এর অধিক আসন তাকে দিতে হবে। একই ধরনের প্রস্তাব আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকেও দেওয়া হয়েছিল। রাতভর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দুই নেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) সাথেই কথা বলতো। তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার দুটি নাম আছে- একজন হলেন মেজর জেনারেল আমিন, তিনি বিহারী আমিন নামে পরিচিত, ফজলুল কবির বারী তিনি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার। এক সময় এরা একজন আমাকে হুমকি দিয়ে ক্রসফায়ারের কথা বলছিল। আমি তখন তাকে বলছিলাম কাজটা খুব সহজ, সময় এবং স্থান বলে দিলে আমি আসতে পারি, আমাকে খুঁজতে হবে না। আমার অপরাধ ছিল বেগম খালেদা জিয়ার একটি বিবৃতি সর্বপ্রথম গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলাম। এটিই ছিল আমার অপরাধ।

তিনি আরো বলেন, 'খালেদা জিয়া মুক্তির তিন মাস আগে ব্রিগেডিয়ার বারী অনেক কাকুতি মিনতি করে আমার সাথে বসতে চাইলেন। আমি বসলাম, দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা। আমার সাথে আরো দুই-একজন ছিল। তাদের প্রস্তাবে যেন খালেদা জিয়া সম্মতি দেয়, সেই জন্য যেন আমি ভূমিকা রাখি। আমি বললাম কীভাবে সম্ভব, আমি তো তার কোনো আইনজীবী না, তার কোনো আত্মীয় স্বজনও নয়। আমাকে বলা হল, রাত এগারোটার দিকে আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাব। ম্যাডামকে বোঝান অর্থাৎ তাদের অপকর্মের দায় মুক্তি আরো ইত্যাদি। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবে এবং দেশটাও বাঁচবে। আমি বললাম, এতোদিন পরে উপলব্ধিট হল কেন? আমি তাদের কথা রাজি না হয়ে বললাম, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তারপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সাথে এ-ও বললাম, আপনারা ম্যাডামের সাথে আলোচনা করেন তিনি যদি একটা চিরকুট দেয় অথবা তার পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানের মাধ্যমে খবর পাঠান তাহলে আমি যেতে পারি। তা ছাড়া আমি আপনাদের দালাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারব না। তিনি খুব রাগ করলেন, আবার ক্রসফায়ারের ভয় দেখালেন। যাওয়ার আগে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে গেল। আপনারা বুঝেন ওয়ান ইলেভেনের চক্রান্তটা কেমন ছিল। ওয়ান ইলেভেন সরকারের প্রস্তাব খালেদা জিয়া প্রত্যাখ্যান করলেও শেখ হাসিনা রাজি হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আইন ও সংবিধানের বাইরে তিনি যাবেন না। কারণ,দেশটা জনগণের। ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো যে নাই, সেটা তো না।