রহমত ডেস্ক 30 December, 2021 05:18 PM
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে- নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন। ১০টি নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করতে পারবে, সেই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এভাবে গঠিত কমিশনের অধিনে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি আইন হওয়া উচিত। সেটি তড়িঘড়ি করে করা সমিচিন হবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সংসদ বসলেও পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। সংসদকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আইন করা ঠিক হবে না।
আজ (৩০ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম কনফারেন্স হলে ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ওকাব আয়োজিত ‘মিট দ্যা ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ওকাব সংগঠক বিবিসি সংবাদদাতা সাংবাদিক কাদের কল্লোলের তত্ত্বাবধানে সংগঠনের সদস্য সচিব ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেন, ওকাব সদস্য ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমানসহ সংগঠনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলার পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে। খালেদা জিয়া যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত রেখে, তাকে মুক্তি দেন। এখন তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণে বিদ্যমান আইনে সুযোগ বিষয়ে আমার মতামত আমি দিয়েছি। খালেদা জিয়াকে মুক্তি বিষয়ে তার স্বজনরা আবদেন করেছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিল। তাদের আবেদনে আইনের উল্লেখ ছিল না। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। দ-াদেশ স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করেই দিয়েছেন। সরকার কোন কাজই আইনের বাহিরে করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবার আগে এখন ইনকোয়ারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেলে যাচ্ছে। যদি অভিযোগ মামলা করার মতো হয় তাহলে মামলা আদালতে যাবে। এখন কিন্তু কোনো সাংবাদিককে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আগে যাচাই করা হয়। এই আইন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এই আইনের অপব্যবহার যাতে বন্ধ হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশে আমার জানা মতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়নি। গনমাধ্যমে এরূপ ২৪১টা ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন আসে। আমরা খতিয়ে দেখে এরমধ্যে দেখা যায় ২৩৯টাই মিথ্যা। বাকী ২টার সত্যতা পাই। যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিষয়ে নয়, দুইজন ব্যাক্তি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বলে জেনেছি। তারা র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশংসা করেছেন। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়। তখন পর্যাপ্ত অবকাঠামো ছিল না।
তিনি আরো বলেন, লাখ লাখ মামলার জট ছিল। অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধিতে তা এখন কমে আসছে। দেশ ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেছে। ডিজিটাল প্লাটফরমে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ই-জুডিশিয়ারী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গোটা দুনিয়ায় আমার জানা মতে তিনটি দেশে বিচার বিভাগ সচল ছিল। আমাদেরও করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে লং ভেকেশনে যেতে হয়েছে। তখন মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু করে বিচার ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। এজন্য প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি এবং পরে এটিকে আইনে পরিণত করা হয়। বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনকে আরো যুগোপযোগী করে এর সংশোধনী আনা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে জেরায় অবমাননাকর বিদ্যমান উপধারাটি বাতিল (রিমোভ) করা হচ্ছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি সংসদে উঠবে।