রহমত ডেস্ক 29 December, 2021 10:08 PM
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে অধিকার সচেতন করে শোষণের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে শিখিয়েছেন তা আর কেউ পারেননি। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল বাংলার জলাভূমির নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে অধিকার সচেতন করে তোলা, তাদেরকে শোষণ ও লুণ্ঠন করা হচ্ছে তা বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা। এই শোষণ ও লুণ্ঠনকে তিনি যেভাবে মোকাবেলা করতে শিখিয়েছেন তা আর কেউ শেখাতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। তিনি ছিলেন সকলের ঊর্ধ্বে, তিনি ছিলেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সকল প্রেরণা ও শক্তির উৎস।
আজ (২৯ ডিসেম্বর) বুধবার রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-আইডিইবি মিলনায়তনে টেলিভিশন রিপোটার্স ইউনিটি অব বাংলাদেশ-ট্রাব’র উদ্যোগে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব-২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘মুজিব মানেই বাংলাদেশ’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রাব সভাপতি সালাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উদ্ভোধনী বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান এমপি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হামিদা খানম, আকাশ-বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্সের সিএফএও লুৎফর রহমান এবং ব্যারিস্টার জাহানারা ইমাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার জাহানারা ইমাম। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ট্রাব বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব হামিদ মোহাম্মদ জসিম এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাবের সাধারণ সম্পাদক অনজন রহমান।
অনুষ্ঠানে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও রত্নগর্ভা মাতা, মানব কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের মাতা অধ্যাপক এডভোকেট কামরুন নাহার বেগম, সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ এবং আলোকিত নারী সাংবাদিক হিসেবে অসামান্য অবদান রাখার জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা, মানবসেবা, বিনোদন, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা, চলচ্চিত্র, অভিনয়, সংগীত ও নৃত্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্যও সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। পরে মন্ত্রী ‘মুজিব মানেই বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
ছাত্রজীবনের স্মৃতি তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি সামান্য আয়ের মানুষ ছিলাম। একাই ঢাকায় ছিলাম। আমার পরিবার এখানে ছিল না। আমি মেসে থাকতাম কমমূল্যে। আমার সিট ভাড়া ছিল মাসে ৬ টাকা, খাবার খরচ লাগতো মাত্র ৩০-৩৫ টাকা। আরামবাগে খালের ওপরে কাঠের তৈরি মেসে থাকতাম। পকেটে টাকা ছিল না কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক আনন্দ ছিল। দুপুরে কোনো রকম খেয়ে চলতাম পল্টন ময়দান। কেউ না কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে, ভাগ্য ভালো হলে বঙ্গবন্ধুকে পেয়ে যেতাম। এই এক অন্য রকম রোমাঞ্চকর। কখনও মালিবাগ, কখনও স্বামীবাগ, কখন ধানমন্ডি ঘুরেছি বক্তব্য শোনার জন্য। পকেটে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। কোনো রকম চলে যেত। এভাবে সারা কৈশর কেটেছে।
পাকিস্তানে ছাত্রজীবনের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, পঞ্চাশ দশকে ৫ বছর পাঞ্জাবে পড়ালেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার তখন কৈশর বয়স। আমার কচি মন, মা-কে সুনামগঞ্জে রেখে গেছি পাঞ্জাবে। অবাঙালি, উর্দু ভাষা, ভাত, মাছ, মাংস নেই। সবই ছিল আমার মতের বাইরে। প্রথমবারের মতো আমি ব্যবধানটা বুঝতে পারি। আমি শুধু বাংলা ভাষাকেই চিনতাম এই প্রথম বুঝলাম ব্যবধান আছে। আমরা সবাই শিশু ছিলাম কিশোর ছিলাম, তারপরও পাকিস্তানিদের নানা আচরণে কষ্ট পেতাম। কচি মনেই বুঝতাম তাদের আর আমাদের মধ্যে ব্যবধান আছে। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন ব্রিটিশ সাদা। ক্যাডেট কলেজে ২০০ জন ছাত্র ছিল। এর মধ্যে ৩০ জন বাঙালি বাকিরা অবাঙালি। এটা একটা দারুণ সাংস্কৃতিক চাপ ছিল। নিজের ভাষা বলার সুযোগ কম ছিল। খাবার-দাবার বলতে মায়ের হাতের রান্না মিস করতাম। সব থেকে কষ্ট পেতাম যখন ওই দেশের শিক্ষকের কাছ থেকে আমরা অবজ্ঞাসূচক আচরণ পেতাম। এটা কষ্ট দিত প্রচণ্ড। ছাত্ররা মাঠে বসে আয়ুব খানের কথা বলতো তখন আমরা চিন্তায় ছিলাম আমরা কার কথা বলবো। তখন আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু সবেমাত্র গর্জে উঠছেন, তার মাধ্যমে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছি। এর পরে ১৯৬২ সালে দেশে ফিরলাম। ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু পুরোপুরি দখল করে ফেলেছেন এই মঞ্চ। বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্যই ছিল দেশটা দেশের মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। পাকিস্তানের শোষণ থেকে জাতিকে রক্ষা করাই বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। সব কথার মূল কথা একটাই পৃথিবীর শক্তির আধার সূর্য আর আমাদের আধার হচ্ছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।