| |
               

মূল পাতা ইসলাম জীবনে যেসব ক্ষতি করে অতিরিক্ত রাগ


জীবনে যেসব ক্ষতি করে অতিরিক্ত রাগ


উসমান বিন আব্দুল আলিম     20 October, 2021     05:35 PM    


অতিরিক্ত রাগ মানুষের জীবনের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ। নিয়ন্ত্রণহীন ক্রোধ মানুষকে পদে পদে বিপদে ফেলে, পরবর্তী সময়ে এর মাশুল গুনতে হয়। রাগের কারণে একজন ব্যক্তি সামাজিক জীবনে মানুষের কাছে বিরক্তিকর মানুষের পরিণত হন। ফলে সবাই এমন মানুষের সংস্রব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। রাগের কারণে মানুষ আত্মীয়তার সম্পর্কে ছেদ ঘটায়। সুখের দাম্পত্য জীবন রাগের জেরে ভেঙে যায়।

জীবনে ক্রোধের প্রভাবে ব্যক্তির হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মুখের কথায় লাগাম থাকে না। ফলে অফিসের সহকর্মী থেকে শুরু করে বড়-ছোট, বন্ধু-বান্ধব ও বাবা-মার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। অনেকে তো রাগের কারণে নিজের প্রিয় জমানো জিনিসগুলোও ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলতে দ্বিধা করে না। রাগ কমলে তখন আর আফসোস করা এবং লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

জনৈক জ্ঞানী বলেছেন, ‘ক্রোধ হন্তারক, যে ক্রোধের রোগে আক্রান্ত, তা তাকে মেরে ফেলে, কারণ প্রতিটি ক্রোধ তাকে তার আগের চেয়ে নিচে ফেলে দেয়।

তাই নিজেদের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে অতিরিক্ত ক্রোধ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় ক্রোধ সমাজে মূল্যহীন করে তুলবে, নিজেদের জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলবে।

রাগ নিয়ন্ত্রণে মানবতার ধর্ম ইসলাম দিয়েছে সুন্দর ও সহজ সমাধান। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন সে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাতে যদি রাগ দমে না যায়, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে। ’ সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৮২

হাদিস মানুষকে শিক্ষা দেয় রাগ এলে নিজের ওই মুহূর্তের অবস্থান পরিবর্তন করে নিতে। দাঁড়ানো থাকলে বসে যেতে, বসা থাকলে শুয়ে পড়তে।

অন্য এক হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাগ তৈরি হয় শয়তানের প্ররোচনায়। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুন নেভাতে লাগে পানি। তাই যখন তোমরা রেগে যাবে, তখন অজু করে নেবে। ’ সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৮৪

উপর্যুক্ত দুই হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগের সময় করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে অন্য এক হাদিসে আরেকটি আমলের কথা বলেছেন। যার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা মানুষকে ক্রোধ থেকে হেফাজত করবেন। হাদিসটি হলো, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালিমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) আউজু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বানির রাজিম অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। ’ সহিহ্ মুসলিম : ৬৩১৭

অতিরিক্ত রাগী ব্যক্তি কখনো সফলতার মুখ দেখে না। বরং নিজেকে সামাল দিয়ে, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে মানুষ বিজয়ী হয়। এ জন্যই আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে রাগের সময় নিজেকে সামলে নিতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর। ’ সহিহ্ মুসলিম : ২৬০৯

সাধারণ হিসাব অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষের রাগ কিংবা ক্রোধ আছে। বরং ক্ষেত্রবিশেষে থাকাও ভালো। কিন্তু তা পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। রাগ যখন আল্লাহর জন্য হবে এবং ইসলামি শরিয়তের নীতি অনুযায়ী হবে, তখন সেটা প্রশংসিত। এক হাদিসে এমন রাগকে পরিপূর্ণ ঈমানের নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসবে আল্লাহর জন্য, কারও সঙ্গে রাগ করবে আল্লাহর জন্য, কাউকে কিছু দেবে আল্লাহর জন্য আর কাউকে দেবে না আল্লাহর জন্য, এমন ব্যক্তি নিজের ঈমান পরিপূর্ণ করল। ’ সুনানে আবু দাউদ : ৪৬৮১

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ক্রোধ মানুষের জন্য অনেক বড় ক্ষতিকর। বড়-বড় চিকিৎসকেরা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্রোধ মানুষের মন-মস্তিষ্কের জন্যও ক্ষতিকর।

মোট কথা, অতিরিক্ত ক্রোধ কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। এটা জীবনের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের জন্য উচিত ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলেই আমরা সুখী হতে পারব।

লেখক : মোহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, বলিয়ারপুর, সাভার, ঢাকা।