| |
               

মূল পাতা সফর মেইমান্দ গ্রাম : মরুবাসী মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন আবাস


মেইমান্দ গ্রাম : মরুবাসী মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন আবাস


রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক     27 February, 2021     03:01 PM    



ইরানের কেরমান প্রদেশের বিশেষ পর্যটন এলাকার অন্তর্ভুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন মেইমান্দ গ্রাম। তিন হাজার বছরের পুরোনো এই গ্রামটিকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা- ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে।

ইউনেস্কো বলেছে, মেইমান্দ হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে মরুবাসী মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন আবাসস্থল। এই গ্রামেই মরুবাসী মানুষেরা সর্বপ্রথম গড়ে তুলেছিল তাদের বসবাসের ঘর। গুরুত্বের বিবেচনায় এই গ্রামটিতে যে কৌতূহলী মানুষের, ভ্রমণ পিপাসু মানুষের এমনকি পুরাতাত্ত্বিক গবেষকসহ কবি সাহিত্যিকদের আগমন ঘটবে- তাতে আর সন্দেহ কী! সে বিষয়টি মাথায় রেখেই মেইমান্দ গ্রামটিকে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটক আকর্ষণীয় করে। না, কেন ইরানি পর্যটকই নয় বরং বিদেশি পর্যটকদেরও আনাগোনা এখন এখানকার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। থাকা-খাওয়া, বিনোদন, অবকাশ যাপন, খেলাধূলাসহ সব ধরনেরই আয়োজন রয়েছে এই মেইমান্দ গ্রামে।

এই প্রাচীন গ্রামটি রক আর্কিটেকচারের সামান্য যে কয়েকটি নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে একটি। গ্রামের অবকাঠামোয় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এই রক স্থাপত্যের বিশেষ স্টাইল। রক আর্কিটেকচারের উদাহরণ অন্যান্য দেশেও যে নেই তা নয়। তবে সংখ্যায় খুব কম এবং তাদের কোনোটিরই মেইমান্দের মতো সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং পর্যটন আকর্ষণ নেই।

উদাহরণস্বরূপ, তুরস্কের ক্যাপডোসিয়া গ্রামের কথা বলা যেতে পারে। মেইমান্দ গ্রামটিকে অনেকেই তার সঙ্গে তুলনা করে থাকেন ঠিকই তবে মেইমান্দ গ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বৈশিষ্ট্যটি তাকে অনন্য করে তুলেছে তা হলো এখানকার শিলা ইউনিট। এই ইউনিটের আবাসিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মেইমান্দের সঙ্গে তুলনাকারী অপরাপর সাইটগুলিতে খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়।

মেইমান্দ গ্রামটি দেখতে যেতে হলে কেরমান শহর থেকে অন্তত ২২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। এই গ্রামটি তো বেশ প্রাচীন। বলা হয়ে থাকে তিন হাজার বছরেরও বেশি আগের গ্রাম এটি। চমৎকার এই গ্রামটিতে বেশ কিছু লিপিকর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কৃত হয়েছে কিছু নকশাও। সেগুলোকে নিয়ে গবেষকরা তাদের মতামত দিয়েছেন। তারা বলেছেন এই নিদর্শনগুলো আশকানি শাসনামল, সাাসনি শাসনামল কিংবা ইসলামি যুগের প্রাথমিক পর্যায়ের হয়ে থাকতে পারে।

মেইমান্দ হচ্ছে ইরানিদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত সমৃদ্ধ একটি গ্রাম। পাথুরে ঘর ছাড়াও এখানে দেখতে পাওয়া যাবে প্রার্থনালয়, কেল্লা বা দূর্গ এবং ঐতিহাসিক অনেক টাওয়ার। মরু অঞ্চল হবার কারণে এখানকার গ্রামীণ কাঠামোতে দীর্ঘ সময় ধরে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি এমনকি ধ্বংস হয়ে যাবার মতো ঘটনাও তেমন একটা ঘটেনি। মেইমান্দ গ্রামটির আয়তন ৪২০ বর্গকিলোমিটারের মতো।

মেইমান্দ গ্রামের ঘরগুলোর কাঠামো একেবারেই স্বতন্ত্র ও ভিন্ন আঙ্গিকের। ঘর তৈরিতে এখানকার লোকেরা ইট-বালি সিমেন্ট ব্যবহার করেনি। তারা বরং পাথুরে পাহাড় কেটে কেটে গুহার মতো করে নিজেদের থাকার মতো উপযোগী ঘর তৈরি করেছে। এরকম ঘরের নিদর্শন অবশ্য ইরানের আরও বহু অঞ্চলেও দেখতে পাওয়া যায়। ঘরগুলোর ভেতর বেশ কয়েকটি রুম রয়েছে এবং রয়েছে ঘোড়ার আস্তাবল। সবকিছুই রয়েছে ঘরগুলোর অভ্যন্তরে। রয়েছে বারান্দা, উঠোন, শোবার খাট, রান্নাঘরের তৈজস রাখার জায়গা, সিন্দুক এবং চেরাগ বাতিও। এরকম ঘরগুলোকে ‘কিচে’ বলা হয়।

মেইমান্দ গ্রামের একটি আকর্ষণীয় দিক হলো এই পাথুরে গ্রামে কোনও গলি বা রাস্তা নেই। বরং এই গ্রামের গলিগুলো পাহাড়ের ভেতরে একেবারে গভীরে প্রবেশ করে অবশেষে আবাসিকেএলাকায় মানে ঘর-বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। এরকম ৪০৬টি কীচে এবং দুই হাজার ৫৬০টি কামরা এ পর্যন্ত মেইমান্দ গ্রামে তৈরি করা হয়েছে। ওই গলির সাহায্যে প্রতিটি ঘরই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। পর্বতবাসী মানুষের জীবনযাপন প্রণালী খুব নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করা যাবে এই মেইমান্দ গ্রামে। সূত্র : পার্সটুডে