রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক 10 January, 2021 11:29 AM
দেশজুড়ে আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেফার দিহানের (১৮) মা। তিনি গণমাধ্যমে পাঠানো এক মেইল বার্তায় তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বিচারের আগে তার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
দিহানের মায়ের পাঠানো বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো-
‘গত ৭ জানুয়ারি আমার বাসায় আমার ছেলে দিহান ও ওর বান্ধবী (....) এর ঘটনায় আমি হতবাক। একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। এরপর গত দুইদিন আমি কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলিনি। কারণ, আমি পুরো ঘটনাটিকে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করেছি। দিহানের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, আমার ছেলের ধর্ষক এবং হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা মা হিসেবে জানার চেষ্টা করেছি। কারণ, একজন নারী হিসেবে কোনো কিশোরীর অসম্মান হোক বা ধর্ষিত হোক, সেটা কখনও চাই না।’
‘৭ জানুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমি আমার অসুস্থ পিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য দিহানকে বাসায় একা রেখে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমার অন্য ছেলে নিজের কর্মস্থলে ছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, মডার্ন হাসপাতালে দিহানের বান্ধবী মারা গেছে। সে কারণে দিহানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দ্রুত ঢাকায় এসে দেখি, পুলিশ আমার বাসায়। জানলাম মেয়েটি আমার বাসায় দিহানের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধর্ষিত হয়েছে এবং মারা গেছে।’
‘মা হিসেবে আরও আগে থেকেই একটু আন্দাজ করতে পেরেছি, আমার ছেলে কোনো একটি সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু কোন মেয়ের সাথে তা জানা ছিল না। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মেয়েটির (...) নামের ফেসবুক আইডিতে দিহানের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি, দিহানকে নিয়ে কবিতা লিখা ইত্যাদি দেখে মনে হলো এই মেয়েটির সঙ্গেই দিহান সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি ধারণা করছি, আমি বাসা থেকে বের হওয়ার পর দিহান মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করলে মেয়েটি আমার বাসায় আসে। দিহানের সাথে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক ছিল বিধায় মেয়েটি আমার বাসায় এসেছিল।’
‘আমি মনে করি, ধর্ষণ বা হত্যার উদ্দেশ্যে দিহান মেয়েটিকে বাসায় ডাকেনি। একজন আরেকজনকে ভালোবাসে, সেই হিসেবে একান্তভাবে সময় কাটানোর জন্যই হয়ত ডেকেছিল। উভয়ের বয়স কম, একজন নাবালিকা এবং আমার ছেলেরও বয়স ১৮ বছর ৭ মাস অর্থাৎ কিশোর। আবেগের বসে উভয়েই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হয়েছে তা নিতান্তই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। আমার ছেলে ধর্ষক বা হত্যাকারী হলে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো কিন্তু সে তা করেনি। সে নিজে গাড়ি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মেয়েটির মাকে ফোন করেছে, পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেছে।’
‘আমার ছেলে যদি মেয়েটির সাথে অন্যায় করে তাহলে একজন নারী হিসেবে আমিও আমার ছেলের যথাযথ বিচার হোক সেটা চাই। কিন্তু মেয়েটির ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কি না এবং একমাত্র শারীরিক সম্পর্কের কারণেই রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এবং বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। বিচারের আগে আমার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
-জেড