মূল পাতা সোশ্যাল মিডিয়া দেওয়ানবাগীকে নিয়ে তার মুরিদের প্রতিবেশীর স্মৃতিচারণ
অপু নজরুল 28 December, 2020 01:49 PM
দেওয়ানবাগীর এক মুরিদের প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে দেওয়ানবাগীর কাজকর্ম সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল অপু নজরুলের। তিনি ছোটবেলায় ওই পরিবারের মাধ্যমে দেওয়ানবাগের পীরকে কিছুটা চিনেছেন, জেনেছেন এবং দেখেছেন। আজ সোমবার সকালে দেওয়ানবাগী মারা গেলে তিনি সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা সেই লেখাটি হুবহু রহমতটোয়েন্টিফোর-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
===========================================================================
ছোটবেলায় আমাদের এক প্রতিবেশী পরিবার দেওয়ানবাগী পীরের মুরিদ ছিলেন। তাদের সাথে আমাদের বেশ ভালো হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো তাই খুব কাছে থেকে তাদের কার্যকলাপ দেখেছি। অসুখ বিসুখ হলে তাদের পুরো পরিবারকে দেখতাম দেওয়ানবাগী পীরের মাসিক সাপ্লিমেন্ট আত্মার বাণী নামক নিউজপ্রিন্ট ম্যাগাজিন চুবানো পানি পান করতে।
খুব ছোটবেলায় সারাদিন ঠান্ডা খেতাম বলে বছরজুড়ে আমার খক খক কাশি লেগেই থাকতো। সেই আন্টি সেসময় অনেকবার আমার বুকে রসুন মেশানো গরম সরিষার তেল মালিশের পাশাপাশি সেই নিউজপ্রিন্টের ম্যাগাজিন চুবানো পানি পান করতে অনুরোধ করতেন। আমার আম্মা অনেক স্ট্রং টাইপ মহিলা ছিলেন বলে সেই পানি আমার পান করতে হয়নি।
৯৯ সালের এক শুক্রবার আমাকে সেই আঙ্কেল চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে নিয়ে যান৷ আব্বাও সাথে ছিলো৷ সেখানে সেদিন দেওয়ানবাগী পীরের অনুষ্ঠান ছিলো। অনুষ্ঠান শেষে একটা কক্ষে অনেক মানুষজন বসা ছিলেন সেখানে আংকেল আমাকে পীরের কাছে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, এই মাসুম শিশুর কলবে তিনি এখনই আল্লাহর জিকির চালু করে দিবেন। তিনি আমার বুকে চেপে ধরে কিছু দোয়াদরুদ পাঠ করে ফু দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন এই মাসুম শিশুর কলবে আল্লাহর জিকির চালু হয়ে গেলো৷ আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় আমি আমার কালবের জিকির শুনতে পাচ্ছি কিনা। আমি বলি না শুনতে পাই না। ভালো করে শুনতে বলেন তিনি, আমি তাও শুনতে পাই না বলে জানাই৷ তখন পাশ থেকে একজন আংকেল আমাকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলেন (সম্ভবত উনার নাম ছিলো ইউসুফ) ঠিক করে বলো! আমি ভয়ে বলে ফেলি শুনতে পাচ্ছি৷ তখন বাকিদের উল্লাস আর জয়ধ্বনিতে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি!
পরবর্তী কয়েক বছরে সেই পরিবারটি আমাদের পরিবারকে দেওয়ানবাগীর মুরিদ বানাতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে একসময় বিনা নোটিশে ও কারণে আমরাসহ আরো কিছু পরিবারের সাথে কথা বলা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এবং এর পর আরো অন্তত ১৫ বছর তারা আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে বাস করলে তারা আর আমাদের সাথে স্বাভাবিক হয়নি। এমনকি সেই পরিবারের আমার কাছাকাছি বয়সের বাচ্চারাও না!
তিনি জীবদ্দশায় নবীর কন্যা ফাতেমাকে নিজের স্ত্রী, নিজেকে আল্লাহর আরশের তদবিরকারী, ‘দেওয়ানবাগীর মিছিলে নেতৃত্ব দেয় স্বয়ং নবী’- এমন দাবী করেছেন ও সেনাবাহিনীর ছোট চাকুরে থেকে প্রচুর অর্থসম্পত্তির মালিকও হয়েছিলেন! দেওয়ানবাগীর সেই পেটমোটা পীর মারা গেছেন আজ।
-জেড