রহমত নিউজ 28 December, 2024 09:31 PM
শিক্ষা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনে ইসলামি মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। তিনি বলেছেন, এই দুই কমিশনে ইসলামবিরোধী কোনো অপতৎপরতা মেনে নেওয়া হবে না।
আজ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের সাধারণ পরিষদের দ্বাদশ অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ এ কথা বলেন।
মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, সংস্কারে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতকে প্রাধান্য দিন। যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা আরও দৃশ্যমান করুন। ২০২৫-এর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
খেলাফত মজলিসের এই অধিবেশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবি পার্টির সাবেক আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সংগঠনের আমির সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘আগুন–সন্ত্রাসসহ সব নাশকতা রুখে দিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করুন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করুন। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার তদারকি জোরদারের উদ্যোগ নিন। পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনুন। টাকার অবমূল্যায়ন কমিয়ে আনুন।’
প্রতিবেশী দেশের আধিপত্যবাদী আচরণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন বলে মন্তব্য করে খেলাফত মজলিসের আমির বলেন, হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের শিকার। এই মুহূর্তে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দল-মতনির্বিশেষে সবার ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আজকের এই অধিবেশন থেকে দেশপ্রেমিক সব দলের প্রতি তিনি ঐক্যের আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হামলা-মামলা দিয়ে হাজারো আলেমকে নির্যাতন চালিয়েছে। তাঁদের মানুষই মনে করেনি। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করেছে। সবাইকে এই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিগত পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটা দুঃসময় আমরা পার করেছি। বিগত ১৬ বছর আমাদের কেউ বাড়িতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। হামলা-মামলার শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন।’ তিনি বলেন, ভারত পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। এক ঘরে আগুন লাগলে যেমন পাশের ঘর নিরাপদ থাকে না, বাংলাদেশের কিছু হলে ভারতও নিরাপদ থাকবে না।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির সমন্বয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। বৈষম্য দূর করে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’
‘আওয়ামী লীগ মূলত ভারতের সরকার ছিল’ বলে মন্তব্য করেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, সে কারণে ভারতের স্বার্থ ছাড়া তাঁর দ্বারা দেশের কোনো কল্যাণ হয়নি। তিনি দেশ রক্ষা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সকাল সাড়ে নয়টায় অধিবেশনের উদ্বোধন করেন খেলাফত মজলিসের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও আবদুল জলিলের পরিচালনায় অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাসউদ খান, মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন, আহমদ আলী কাসেমী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন।
এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ঈসা শাহেদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাগপার সভাপতি রাশেদ প্রধান, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবদুস সামাদ, মুফতি আলী হাসান উসামা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম ইউনুস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব মোর্শেদ, অধ্যাপক কে এম মাহবুব আলম, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, মাওলানা আবদুল কাদির সালেহ, অধ্যাপক সিরাজুল হক প্রমুখ।